ধর্মের কারণেই সে দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল শাড়ি। আর সেই পাকিস্তানেই কিনা এবার শাড়ি পরে নিকায় বসলেন এক কনে। আর লাল শাড়িতে সুন্দরী তরুণীকে দেখেই প্রশংসার ঝড় নেটদুনিয়ায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পরনে কালচে লাল রঙের জমকালো শাড়ি। চওড়া ভারী কাজের পাড়, সারা জমিতে ছোট্ট ছোট্ট সোনালি বুটি। ছেড়ে রাখা আঁচল। তার সঙ্গে একই রঙের পাড় বসানো মানানসই ব্লাউজ। সঙ্গে সোনার উপরে পাথর বসানো জড়োয়ার ভারী গয়না। কানে ঝোলা দুল, গলা জোড়া চোকার আর লম্বা কয়েক নরী রানিহার, হাতেও চওড়া চূড়। মাথায় মাঙ্গটিকা। সবকিছুর উপরে মাথায় লাল নেটের স্বচ্ছ ওড়না। এই সবের মধ্যে থেকেই ফুটে রয়েছে তরুণীর সুন্দর মুখটি। আর এই সমগ্র সাজটি দেখেই তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। হ্যাঁ, আপাত দৃষ্টিতে বাড়তি প্রশংসার কোনও কারণ নেই হয়তো। কারণ বিয়ে মানেই তো এমন সাজগোজ। এভাবে শাড়ি গয়না পরে সেজেই বিয়ের আসরে বসেন অধিকাংশ কনে, এ দেশে আমরা তেমনটাই তো দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু আসলে কথা হল, এই তরুণী তো এ দেশের নন। তিনি যে দেশের মানুষ, সেখানে শাড়ি পরার চল কমই। এমনকি ধর্মের দোহাই দিয়েই একসময় সে দেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল শাড়ি পরা।
আরও শুনুন: অপহরণ করেছিল মুসলিম ব্যক্তিরা, সেই অপহরণকারীদেরই বিয়ে করতে বাধ্য হল ৩ হিন্দু বোন
বলছি পড়শি দেশ পাকিস্তানের কথাই। ইসলামপ্রধান দেশ। জীবনের পদে পদে ধর্মকে সামনে রেখে চলাই সেখানকার চলতি অভ্যাস। আর তার অন্যথা ঘটলেই বয়ে যায় নিন্দার ঝড়। কিছুদিন আগেই লেহেঙ্গা পরে বিয়ে করতে গিয়ে এক পাক অভিনেত্রীকে শুনতে হয়েছিল সেই পোশাকটি নাকি হিন্দুদের, মুসলিম হয়ে সেই পোশাক পরে তিনি ধর্মের অবমাননা করেছেন। আর শুধু সেই প্রথম নয়। ধর্মের দোহাই দিয়েই ইসলামিক দেশটিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল শাড়িও। আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময় শাড়ি পরেই মার্চ করত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রমীলা বাহিনী। একে তো মহিলা, তার ওপর বিরোধী পক্ষ। তাঁদের এই দাপট কিছুতেই সহ্য করতে পারেননি তৎকালীন পাকিস্তানের কর্তাব্যক্তিরা। এমনিতেই ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়েদের পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর এবার হিন্দু ধর্ম, বা বলা ভাল ভারতের সবরকম ছাপ দেশ থেকে মুছে ফেলতে উঠেপড়ে লাগে পাক সরকার। জেনারেল জিয়া উল হক সর্বপ্রথম এই পোশাক নিষিদ্ধ করার জন্য গর্জে ওঠেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এই পোশাকে মহিলাদের মুসলিম নয়, ভারতীয় বলে মনে হয়। দেশের প্রায় সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রে শাড়িতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেই সময়ের পাক সরকার।
আরও শুনুন: একদিনও স্কুল কামাই নেই, তবুও ১০ বছর বয়সেই ৫০টি দেশে সফর ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরীর
সেই প্রবণতা ভেতরে ভেতরে জারি ছিলই। যদিও এখন ক্রমশ অবস্থা পালটাচ্ছে, তবে হিন্দু ধর্ম এবং ভারতের প্রতি একরকম বিরোধিতার সুর রয়েই গিয়েছে অনেকের মধ্যেই। ফজর নামের এই তরুণী নিজেও ধর্মে মুসলিম। কিন্তু পোশাকের উপরে ধর্মকে স্থান দিতে চাননি তিনি। তাই বিয়ের আসরে লাল শাড়িতে সেজেই হাজির হয়েছেন তিনি। আর সেই ছবি দেখেই প্রশংসা উজাড় করে দিয়েছেন নেটিজেনরা।