মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে অভিনব উদ্যোগ মাইসুরুর স্কুলের। পড়ুয়াদের চরকা কাটার জন্য একটি ঘর রাখা হল স্কুলেই। কিন্তু হঠাৎ কেন এই উদ্যোগ? কী জানাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? শুনে নেওয়া যাক।
গান্ধীজির সত্যাগ্রহের একটা বড় হাতিয়ার ছিল চরকা। চরকা কাটার মধ্যে দিয়ে প্রতিটি মানুষকে আত্মনির্ভরতার পাঠ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সে কথা মনে করেই অভিনব উদ্যোগ নিল মাইসুরুর শক্তিধাম স্কুল। কেবল চরকা কাটার জন্যই একটি ঘর রাখা হয়েছে এই স্কুলে। যেখানে নিজেরাই চরকা কেটে সুতো তৈরি করতে পারবে পড়ুয়ারা। আর এই কাজের মধ্যে দিয়ে একইসঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর সেই পরম্পরাকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যাবে তারা, একইসঙ্গে এ কাজ তাদের আত্মনির্ভর হতেও শেখাবে, এমনটাই আশা স্কুল কর্তৃপক্ষের।
আরও শুনুন: অন্য কেরালা স্টোরি! স্নেহের চুম্বনই হয়ে উঠেছে সম্প্রীতির হাতিয়ার
এই স্কুল আসলে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ধর্ষিতা, গৃহহিংসার শিকার মহিলারা, দেহব্যবসা থেকে রেহাই পাওয়া কিংবা পাচার হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার হওয়া মেয়েরা, সকলকেই এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। পাশাপাশি গরিব ঘরের শিশু, অনাথ কিংবা একলা মায়ের সন্তানদের এই স্কুলে শিক্ষার সুযোগ মেলে। সেখানে কেন এইভাবে একটি চরকার ঘর রাখা হয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন: দেশের নামবদল বিতর্কের ছাপ রাষ্ট্রসংঘেও! ‘ইন্ডিয়া’ নয়, ‘ভারতের’ নাম নিলেন জয়শঙ্কর
আসলে মহাত্মা গান্ধীর কাছে চরকা কেবলমাত্র একটি বস্তু ছিল না। তাঁর কাছে এটি হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা এবং আত্মনির্ভরতার প্রতীক। মনে রাখতে হবে, তখন ব্রিটিশ আমল। সে সময়ে সহজলভ্য জামাকাপড় আসে বিলেত থেকে রপ্তানি হয়েই। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে এই বিলিতি পোশাক নিষিদ্ধ করার কথা বলেই বয়কট আন্দোলন শুরু হয়েছিল। একইসঙ্গে দেশি জিনিস ব্যবহারের ধুয়ো তুলেছিল স্বদেশী আন্দোলন। আর দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই প্রেক্ষিতেই প্রতিটি মানুষ চরকা কেটে নিজের ব্যবহার্য কাপড় তৈরি করছে, এই ভাবনা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন গান্ধী। তিনি একবার বলেছিলেন, চরকার মধ্যে দিয়ে অনেক বড় একটি বার্তা জেগে ওঠে। সেই বার্তা সারল্যের। তা মানুষের কল্যাণের কথা বলে, অন্য কাউকে আঘাত না করে জীবনধারণের কথা বলে। একইসঙ্গে ধনী গরিব, শ্রমিক মালিক সকলের মধ্যে সমন্বয়ের কথাও বলে এই চরকা- এমনটাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর মত। সেই ভাবনাটিকে একালের বুকেও একইভাবে জাগিয়ে রাখতে চায় এই স্কুল। সত্যি বলতে, গান্ধীর এই সত্য ও সহজের ভাবনা তো সে যুগের মতো এ যুগেও একইভাবে প্রযোজ্য। তাই ছোট থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে যাতে সেই আদর্শ চারিয়ে দেওয়া যায়, সেদিকেই লক্ষ্য এই স্কুলের কর্তৃপক্ষের। তাঁদের কথায়, গান্ধী কোনও নাম নয়, একটি কাজ। তাই তিনি আমাদের সকলের মধ্যেই আছেন। অন্তরে থাকা সেই মানুষটিকে খুঁজে বের করে আনাই আমাদের কাজ। স্কুলে ওই শিশুদের ক্ষেত্রে সে কাজটাই করতে চাইছেন তাঁরা, এমনটাই জানিয়েছেন শক্তিধামের কর্তৃপক্ষ।