কে বলেছে মোবাইলে নেশা কেবল আজকালকার ছেলেপিলেরই হয়? বিশ্বাস না হলে দেখে আসুন এই গরিলাটিকে। তার মোবাইল আসক্তি দেখে ঘুম উড়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। আপাতত কী করে স্ক্রিনটাইম কমিয়ে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়, সেটাই এখন একমাত্র মাথাব্যথা চিড়িয়াখানার কর্মীদের। আসুন, শোনা যাক সেই মোবাইলপ্রিয় গরিলার কথা।
রাতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ পেতে রাতদিন ওয়েব সিরিজে মজে থাকা। এসব তো আজকালকার যুগের ধর্ম। ইদানীং বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই বশ এই মুঠোফোনের। এই মোবাইল আসক্তি বহু সময়েই ডেকে আনছে নানাবিধ সমস্যা। বেশিমাত্রায় স্ক্রিনটাইম চোখের ক্ষতি তো হচ্ছেই, ডেকে আনছে স্পন্ডিলাইটিস থেকে শুরু করে আরও নানা রোগব্যাধি। প্রযুক্তির আবিষ্কার যেমন জীবনকে ক্রমশ আরও সহজ করে তুলেছে, তার সঙ্গে কুফল হিসেবে ডেকে এনেছে মোবাইল আসক্তির মতো সমস্যাকেও। তা এসব সমস্যা নেহাতই মানুষের অর্জিত। বন্য পশুপাখিরা এসবের থেকে শতহস্ত দূরে। তবে ব্যতিক্রম নেই বললে অবশ্য ভুল বলা হবে।
বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তির কথা শুনেছেন। তাই বলে গরিলার মোবাইলে নেশার কথা শুনেছেন কখনও? বিশ্বাস না হলে ঘুরেই আসুন না আমেরিকার শিকাগো শহরের লিঙ্কন পার্ক চিড়িয়াখানাটি থেকে। সেখানেই রয়েছে ‘আমারে’ নামে সেই বিখ্যাত গরিলাটি। যার মোবাইল আসক্তির কথা আজ সর্বজনবিদিত।
ভাবছেন তো, গরিলা আবার মোবাইল পেল কোত্থেকে? ঠিক ধরেছেন। চিড়িয়াখানার কর্মীদের বদান্যতাতেই এমন অভ্যেস ধরেছে গরিলাটির। দর্শকদের সেলফি তোলার হিরিকও এর জন্য কিছুটা দায়ী। আর সেটাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সব চেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ।
আরও শুনুন: জাঙ্কফুডের নেশা সর্বনাশা! নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হল সামুদ্রিক সিলকে
মোবাইলের নেশায় নাকি এতটাই বুঁদ বছর ষোলোর আমারে, যে আশপাশের আর কোনও দিকে মন দেওয়ার সময় নেই তার। অন্য কোনও গরিলা পিছন থেকে হামলা করলে পর্যন্ত হুঁশ ফিরছে না। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাতই তার মন পড়ে রয়েছে মুঠোফোনে।
আসল ব্যাপারটা হয়েছে কী, চিড়িখানার কর্মীরা প্রায়সই তাকে কাচের বাইরে থেকে নানা ধরনের জীবজন্তুর ছবি ও ভিডিও দেখাত। আর সে সব দেখতে দেখতেই দারুণ নেশা ধরে গিয়েছে তার মোবাইলে। ফলে এখন ওই কাচের দরজার পাশ থেকে সরতেই চায় না সে। এমনকি পর্যটকেরা ছবি তোলার জন্য মোবাইল তাক করেছে দেখলেও ছটফট করে ওঠে আমারে। বাধ্য হয়েই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তার খাঁচার সামনে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
আপাতত তার স্ক্রিন টাইম কমাতে উঠেপড়ে লেগেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। খাঁচার সেই সেই কাচের দরজা আর আমারের মাঝখানে দড়ি দিয়ে এমন ভাবে বাধা তৈরি করেছেন তাঁরা, যাতে কিছুতেই ভাল করে মোবাইল দেখতে না পায় গরিলাটি।
আরও শুনুন: সিংহের পাশে বসেই সারা যাবে ইফতার, চিড়িয়াখানার প্রস্তাবে হতবাক নেটিজেনরা
আগে তিনটি পুরুষ গরিলা সঙ্গীর সঙ্গে থাকত আমারে। তবে তার এই বদ অভ্যাসের পর থেকে তাদেরকে আলাদা খাঁচায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কারণ অনেকসময় নিজেদের সঙ্গীদের হাতেই নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছিল আমারেকে। আশ্চর্যের কথা, সেসবের প্রতিবাদে ঘুরে হামলা করার কষ্টটুকুও করছিল না মোবাইল আসক্ত গরিলাটি। আর সেটাই আরও বেশি করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় চিড়িয়াখানার কর্তব্যরতদের। এর ফলে গরিলাটি প্রকৃতি ও তাদের স্বাভাবিক স্বভাব থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
গরিলারা সাধারণত খুবই ছটফটে প্রাণী। সারাদিন নানা রকমের কর্যকলাপের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করে তারা। ফলে গরিলার এ হেন মোবাইল আসক্তি নিয়ে ঘুম উড়েছিল চিড়িয়াখানার কর্মীদের। তবে আশার কথা, মোবাইল সরিয়ে নেওয়ার পরেও ডিপ্রেশন বা ঘুম না হওয়ার মতো সমস্যা হয়নি তার। বরং আস্তে আস্তে ওই কাচঘেষা কোণ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনছে সে। যা কিছুটা চিন্তামুক্ত করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে।