‘ক্ষীরের পুতুল’ গল্পে দুয়োরানির সেই বানরপুত্রের কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। দুয়োরানির সৌভাগ্য ফিরিয়ে এনেছিল যে বানরছানাটি। যাকে মাতৃস্নেহে লালনপালন করেছিলেন দুঃখিনী দুয়োরানি। কে বলেছে, এসব কেবল রূপকথাতেই হয়। এসব হয় বাস্তবেও। মায়ের কাছে সন্তানের যে কোনও প্রজাতি হয় না, ধর্ম হয় না, তাই ফের প্রমাণ করে দিয়েছে এই কুকুর-মায়ের গল্প। তিন-তিনটি বাঘের ছানার দায়িত্ব সে তুলে নিয়েছে নিজের কাঁধে। কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা? শুনে নিন।
কাকের বাসায় ডিম পেড়ে পালায় কোকিল। আর পরম মমতায় সেই ডিমে তা দেয় মা-কাক। ডিম ফুটলে সেই ছানাকে যত্ন করে, খাওয়ায় দাওয়ায়। তারপর বড় হয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে পালায় কোকিলছানাটি। এ দৃশ্য প্রকৃতিতে বিরল নয়। তবে তিনটি ছোট ব্যাঘ্রশাবককে পরমযত্নে বড় করে তুলছে একটি কুকুর, এমন দৃশ্য বোধহয় রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই।
না, কোনও সিনেমা কিংবা অ্যানিমেশন ছবি থেকে তুলে আনা নয় এ দৃশ্য। এমন ঘটনা ঘটেছে বাস্তবেই। আর সেই ঘটনার ভিডিওই সম্প্রতি ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা গিয়েছে, একটি লাব্রাডেরের গা ঘেঁষে ঘুরে বেড়াচ্ছে তিন তিনটি বাঘের ছানা। গায়ে, পিঠে উঠে পড়ছে তারা, মুখ ঘষছে সারমেয়-মায়ের শরীরে।
আরও শুনুন: মানুষের প্রবেশ নিষেধ… শুধু বাঁদরদের জন্যই পৃথিবীতে আছে এক আশ্চর্য দ্বীপ
চিনের একটি চিড়িয়াখানার এই দৃশ্য দেখে অবাক দর্শক থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এমনও হয়! অবাক নেটিজেনরাও। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, শাবক তিনটি জন্মানোর পরেই তাদের পরিত্যক্ত করে দেয় বাঘিনী। এমনকি দুধ পর্যন্ত খাওয়াতে অস্বীকার করে। সে সময় ওই ল্যাব্রাডর কুকুরটির কাছেই আশ্রয় হয় ওই তিনটি শাবকের। অল্পদিনের মধ্যেই তাদের মা হয়ে উঠতে পেরেছে সারমেয়টি। এখন আপাতত ওই তিনটি ছানাকে ঘিরেই দিন কাটছে তার। রাতদিন তার গায়ে মাথায় উঠে পড়ছে তিন দস্যি। বিরক্ত হওয়া তো দূর, বরং পরম মমতায় তাদের আগলে রাখছে কুকুরটি।
আরও শুনুন: কয়েকশো পোষ্যের ভার তাঁরই কাঁধে! তাদের মুখ চেয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ বৃদ্ধা
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে ভিডিওটি। কুড়িয়েছে বিপুল প্রশংসা। প্রকৃতি আর মাতৃত্বের এই অদ্ভুত ম্যাজিক দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি নেটিজেনরা।
এমন ঘটনা যে খুব বিরল, তা কিন্তু নয়। কিছুদিন আগে এক শিম্পাঞ্জি মায়ের গল্প ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা যায়, একটি সিংহশাবককে পরম যত্নে দুধ খাওয়াচ্ছে একটি শিম্পাঞ্জি। কপালে এঁকে দিচ্ছে আদর। ওরাংওটাংয়ের সঙ্গে তিনটি বাঘের ছানার এমন সম্পর্কের কথাও আগে দেখেছি আমরা।
আসলে ডিএনএ বা রক্তের টান নয়, সম্পর্ক গড়তে লাগে কেবল ভালবাসা। আর সেই শিক্ষাই আমাদের বারবার দেয় প্রকৃতি। যা অবোলা প্রাণীরা সহজে বুঝে নিলেও আমাদেরই বুঝি সেই শিক্ষায় ফাঁকি থেকে যায়।