শিল্পীর কাছেই তাঁর সৃষ্টি সন্তানের মতোই। আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তাঁকে যত্ন করে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন স্রষ্টা। তবে সেই শিল্পের সঙ্গেই নিজের উত্তর প্রজন্মের প্রত্যাশাকে রেখে যাওয়ার ইচ্ছা, এমনটা কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। এবার সেই কাজই করে দেখালেন জনৈক শিল্পী। নিজের চিত্রকর্মের সঙ্গে নিলামে তুললেন ডিম্বাণুকে।
শিল্পী তাঁর প্রদর্শনীতে নিজের শিল্পকর্ম তুলে ধরবেন, তার বিক্রির ব্যবস্থা করবেন – এ আর নতুন কথা কী! আবহমান কাল ধরেই গোটা বিশ্বে তা হয়ে চলেছে। তবে এবার এই নিলাম ও প্রদর্শনীতেই এবার অন্য মাত্রা যোগ করলেন এক মহিলা শিল্পী। নিজের চিত্রকর্মের সঙ্গে তিনি নিলামে তুললেন তাঁর ডিম্বাণুকে। এই উদ্যোগ যে বেশ অভিনব, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আর তাঁর এহেন প্রদর্শনীর খবর বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তেই, কৌতূহল উঠেছে তুঙ্গে।
শিল্পীর নাম নারাইন আরাকেলিয়ান। আদতে আর্মেনিয়ার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে এখন ক্যালিফর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে থাকেন তিনি। সম্প্রতি ফ্লরিডায় একটি শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন নারাইন। সেখানেই এমন অভিনব কাণ্ড করে বসলেন শিল্পী।
আরও শুনুন: বিয়ে না করেও মা হওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত, নজর কেড়ে নজির গড়েছেন যাঁরা
কিন্তু হঠাৎ এরকম একটা সিদ্ধান্ত কেন নিলেন নারাইন? শুধুই কি চমক? না, আসলে শিল্পী বলেই বোধহয় তিনি পুরো বিষয়টিকে এরকম অন্য মাত্রায় ভাবতে পেরেছেন। নিজের সৃষ্টি তো সবসময়েই শিল্পীর কাছে সন্তানসম। কিন্তু নারাইন চান শিল্পের মধ্যেও উত্তর প্রজন্মের সম্ভাবনাও জাগিয়ে রাখতে। সৃষ্টি আর সন্তানকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিতে চান তিনি। তাই ছবির সঙ্গেই নিজের একটি ডিম্বাণু নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিইয়েছেন নারাইন।
নারাইন জানিয়েছেন, যে বা যাঁরা তাঁর চিত্রকর্মটি কিনবেন, তাঁরা ওই ডিম্বাণুটি কিনতেও চুক্তিবদ্ধ হবেন। তাঁর আশা, যিনি সেই ছবিটা কিনবেন, তিনি ডিম্বাণুটি সংগ্রহ করে সন্তান-সম্ভাবনার বিষয়টিকেও বাস্তবায়িত করবেন। অর্থাৎ, ওই ডিম্বাণুকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি সন্তানের জন্ম দেবেন। শুধু নিজের উত্তরপ্রজন্মকে যে এভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে চান শিল্পী তাই-ই নয়। তাঁর আর একটি উদ্দেশ্যও আছে। এই পৃথিবীতে অনেক দম্পতিই আছেন, যাঁরা সন্তান চান, কিন্তু নানা কারণে তাঁরা সন্তানধারণে অক্ষম। এহেন দম্পতির পাশে দাঁড়ানোও তাঁর এই অভিনব কর্মকাণ্ডের একটি লক্ষ্য।
আরও শুনুন: ৪২ লিটার স্তনদুগ্ধ দান হাসপাতালে, ছকভাঙা কাজে কুর্নিশ আদায় করলেন ভারতীয় মহিলা
নারাইন নিজে অবশ্য এক সন্তানের জননী। ২১ বছরের একটি ছেলে রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্মের প্রতিও তিনি যথেষ্ট সচেতন। নিজের কাজে নারীবাদ বা ফেমিনিজমের চর্চা করেন নারাইন। তাঁর সামগ্রিক শিল্পভাবনাকেই এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সামনে এনেছেন তিনি। নিজের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হল, সমাদৃত হল। একই সঙ্গে মানুষ হয়ে মানুষের পাশেও দাঁড়ালেন তিনি। তাঁর এই উদ্যোগে, কোনও এক নিঃসন্তান দম্পতিকে অন্তত কিছুটা আনন্দ তো উপহার দেওয়া যাবে। যিনি এই শিল্পকর্মটি কিনবেন, তাঁর কাছেও ছবিটি সবসময়েই বিশেষ হয়ে থাকবে। কারণ এই ছবিটিই তাঁকে একটা ফুটফুটে শিশু উপহার দেবে ভবিষ্যতে। এই বিশেষ কাজের জন্য যে ছবিটিকে নারাইন বেছেছেন, তাতেও রয়েছে সেই বার্তাই। এই ছবিটিরই নাম ‘লাভ, হোপ অ্যান্ড লিভ’। অর্থাৎ কিনা ভালোবাসা, আশা ও বাঁচা।
বাকি অংশ শুনে নিন।