শেখার কোনও বয়স হয় না। স্কুলে ভরতি হওয়ার ও নয়। তাই ৭৮ বছর বয়সে স্কুলে ভরতি হওয়ার আগে দু-বার ভাবেননি এই পড়ুয়া। এই বয়সেও রোজ পাহাড়ি পথ পেরিয়ে তিনি স্কুলে যান। রোজই হাঁটতে হয় ৩ কিলোমিটারের বেশি পথ। তবু কামাই নেই একদিনও। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
বয়স, সুযোগ সুবিধার অভাব, কোনও কিছুই থামাতে পারেনি। স্রেফ মনের জোর আর শেখার ইচ্ছা হার মানিয়েছে সমস্ত প্রতিকূলতা। ৭৮ বছর বসয়ে স্কুলে ভরতি হয়েছেন তিনি। সেখানে যাওয়ার জন্য রোজ পাহাড়ি রাস্তায় ৩ কিমি হাঁটতে হয় তাঁকে।
আরও শুনুন: বচ্চনের বিগ ফ্যান! ফলাও করে সবাইকে জানাতে গিয়েই ধরা পড়ে গেল চোর
কথা বলছি মিজোরামের লালরিংথারা সম্পর্কে। ৭৮ বছরের এই বৃদ্ধ রোজ সকালে নির্দিষ্ট পোশাক পরে স্কুলে গিয়ে হাজির হন। ক্লাস করেন নাতি-নাতনির বয়সী পড়ুয়াদের সঙ্গে। কিন্তু কামাই করেন না একদিনও। তাঁর এই মনের জোর দেখে অবাক হন গ্রামের সকলেই। একইসঙ্গে অনেকের কাছেই তিনি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তাঁর শেখার ইচ্ছা আর মনের জোর দেখে অবাক হন সকলেই।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি একইরকম আগ্রহ ছিল এই বৃদ্ধর। ভরতিও হয়েছিলেন স্কুলে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবাকে হারান তিনি। বাধ্য হন পড়াশোনা থামাতে। গ্রামের সকলেরই জীবিকা ছিল চাষ আবাদ। পাহাড়ি এলাকায় মূল ঝুম চাষের রেওয়াজ ছিল। লালরিংথারাও সেই কাজেই যোগ দেন। বাবার অবর্তমানে পরিবারের দায়িত্ব একপ্রকার তিনিই কাঁধে তুলে নেন। কিন্তু সংসারের এই চাপের জেরে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি আর। স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়। বাড়িতেও পড়াশোনা করার মতো সময় পেতেন না। সেইসঙ্গে সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে আর নতুন করে কিছু করতে পারতেন না। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই প্রমাণ করেছেন তিনি। সময়ের সঙ্গে বয়স বেড়েছে। আরও বড় হয়েছে পরিবার। এখন আর রোজগারের দায়িত্ব তাঁর নয়। তাই আবারও ছোটবেলায় ফিরে যেতে চেয়েছেন তিনি। নতুন করে শুরু করেছেন পড়াশোনা। ভরতি হয়েছেন স্কুলেও। কিন্তু তার জন্য এই বয়সেও যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাঁকে। গ্রাম থেকে প্রায় ৩ কিমি রাস্তা হেঁটে যেতে হয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। তবু তাই সই! শেখার সুযোগ তো মিলবে, সেই আশাতেই সবকিছু করতে রাজি এই বৃদ্ধ। মূলত ইংরাজি শেখার জন্যই স্কুলে ভরতি হয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও জানার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। ওই অঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে মূলত মিজো ভাষায় পারদর্শী তিনি। তাই ইংরাজি জানার জন্য বিশেষ আগ্রহী এই বৃদ্ধ। গ্রামের অন্যান্যরাও এ বিষয়ে তাঁকে যথেষ্ট উৎসাহ জোগান। তাই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এইভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান এই বৃদ্ধ। আর এই ব্যক্তি আগামীদিনেও উদাহরণ হয়ে থাকবেন, সেকথা মনে করেছেন গ্রামের সকলে।