ঘরের বাইরে পা ফেলার সুযোগ কেড়ে নিয়েছিল কোভিড মহামারী। তা কাটতেই অবশ্য মানুষের পায়ের তলায় সর্ষে। অর্থাৎ চলতি বছরে মানুষ ভ্রমণকে যথেষ্টই গুরুত্ব দিতে পেরেছেন, বেরিয়ে পড়েছেন ঘরের বাইরে। আর সেই নিরিখে এগিয়ে কিন্তু ধর্মস্থানগুলিই। তা কোন ধর্মস্থানে এ বছর সবথেকে বেশি মানুষ গিয়েছিলেন? আসুন শুনে নিই।
২০২১ যদি ঘরবন্দি হয়ে থাকার বছর হয়, ২০২২ তবে অবশ্যই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার বছর। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত দীর্ঘদিন মানুষকে চার দেওয়ালে আটকে রেখেছিল। চলতি বছরে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই কেটেছে, স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। অতএব ইচ্ছে পূরণের নেশায় মানুষও বেরিয়ে পড়েছেন ঘরের বাইরে। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, এই বেরিয়ে পড়ার নিরিখে মানুষের প্রথম পছন্দের জায়গাগুলি ছিল ধর্মস্থানই। অর্থাৎ ধর্মীয় স্থানে ভ্রমণের প্রবণতাকেই এই বছরের ট্রেন্ড বলা যায়।
আরও শুনুন: নারীদের জন্য নিরাপদ এই দেশ, প্রমাণে সাইকেলে ভারত-যাত্রা তরুণীর
এক সময় কোভিডের ছোবলে নাভিশ্বাস উঠেছিল পর্যটনের। ২০২২-এর খোলা হাওয়ায় অবশ্য তা অনেকটাই সামলে নেওয়া গিয়েছে। আর এক্ষেত্রে ধর্মস্থানগুলিই পর্যটন শিল্পকে অক্সিজেন জুগিয়েছে বলা যায়। বছর শেষে বিভিন্ন হিসাবখাতা খুলে, অর্থাৎ ট্রেন-প্লেন বুকিং বা হোটেল বুকিং সংস্থাগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, বহু সংখ্যক মানুষ নেহাত ছুটি কাটানোর জন্য এখানে ওখানে না গিয়ে, ধর্মস্থানে যাওয়াকেই পছন্দ করেছেন। আর এই নিরিখে সবার উপরে আছে বারাণসী। প্রাচীন এই জনপদে আধ্যাত্মিকতার খোঁজে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। চলতি বছরে বেনারস যাওয়ার জন্য ট্রেনের খোঁজ বেড়েছিল অন্তত ৫০ শতাংশ। জনপ্রিয় হোটেল বুকিং সংস্থার তথ্যও জানাচ্ছে, এগিয়ে আছে বারাণসীই। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই মূলত গিয়েছেন এই ধর্মস্থানে। এই বছরে রিলিজিয়াস ট্যুরিজমের যা প্রাপ্তি, তাতে সিংহভাগ অবদান রেখেছে বারাণসীই।
আরও শুনুন: ঠান্ডায় পুণ্যস্নানে ভয়! ভক্তের হয়ে ডুব দেবেন পেশাদার ব্যক্তি, দক্ষিণা মাত্র ১০ টাকা
যাঁরা বারাণসী যাননি বা যেতে পারেননি, তাঁরা চোখ রেখেছিলেন অন্য ধর্মস্থানের দিকে। তালিকায় বারাণসীর ঠিক পরেই আছে তিরুপতি মন্দির, পুরীর জগন্নাথ ধাম, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির এবং হরিদ্বার। হোটেল বুকিং-এর নিরিখে, হৃষিকেশ, মথুরাতেও যে যথেষ্ট ভক্ত সমাগম হয়েছিল, এমনটাই জানা যাচ্ছে। তিরুপতি, শিরিডি এবং বৈষ্ণো দেবীতে যাওয়ার জন্য বাসের চাহিদাও এ বছর উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছিল।
সামগ্রিক ভাবেই পর্যটনের নিরিখে ২০০২ বেশ ভালই কেটেছে। গোয়া, উদয়পুর এবং আন্দামানেও গিয়েছেন বহু পর্যটক। তবে বাজিমাত করেছে ধর্মস্থানই। সম্ভবত মহামারী মানুষকে যেভাবে ভীত ও ক্লান্ত করে তুলেছিল, তা থেকে মুক্তি পেতেই ধর্মস্থানে ছুটেছেন মানুষ। ২০২২-এর শেষে এসে আবার কোভিডের চোখ্রাঙানি দেখা যাচ্ছে। তবে পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩-এও মানুষ বেরিয়ে পড়তে চাইবেন। আর ধর্মস্থানে ভ্রমণের এই প্রবণতা আগামী বছরেও বেশ ভালভাবেই বজায় থাকবে, এমনটাই আশা তাঁদের।