বয়স ১৮ পেরিয়েছে। বিশেষ অসুস্থতার কারণে লিখতে বা পড়তে পারেন না এখনও। অথচ সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এই যুবক, পাস করেছেন স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা। পেয়েছেন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগও। আসুন শুনে নেওয়া যাক এই যুবকের জীবনযুদ্ধের কাহিনি।
বিশেষ এক রোগ দানা বেঁধেছে শরীরে। তার ফলে লিখতে বা পড়তে পারেন না এই যুবক। তবু এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ ভাবে আন্দাজের উপর ভিত্তি করে উত্তর দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় তাক লাগানো রেজাল্ট করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: কোহিনূর হিরের আসল মালিক প্রভু জগন্নাথ! পুরীর মন্দিরে রত্ন ফেরতের দাবিতে সরব সংগঠন
‘তারে জমিন পর’ সিনেমার ঈশানের কথা মনে আছে? ডিসলেক্সিয়া-য় আক্রান্ত ছিল সে। স্কুলের বাকি সকলের থেকে ছিল একেবারেই আলাদা। সামান্য রিডিং পড়াতেও তাকে বেশ বেগ পেতে হতো। চোখের সামনে নাকি নাচানাচি করত অক্ষর আর সংখ্যারা। তবু সিনেমার শেষে দেখা যায়, সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সেই ছোট্ট ঈশান। ছবি আঁকার বিশেষ গুণে সে জিতে নিয়েছিল সেরার সেরা পুরস্কার। দেখে মনে হতে পারে, বাস্তবে আবার এমনটা হয় নাকি! কিন্তু হয় যে, তাই প্রমাণ করলেন অলিভার চ্যাডউইক। অলিভারের শরীরেও ডিসলেক্সিয়া বাসা বেঁধেছে, মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই। আর তখন থেকেই অলিভার যুদ্ধ করে চলেছেন এই রোগের বিরুদ্ধে। ডিসলেক্সিয়ার কারণে সামান্য কিছু পড়তে বা লিখতে গেলেই বেগ পেতে হতো তাঁকে। কিন্তু সেই শারীরিক বাধা আটকাতে পারেনি তাঁর প্রতিভাকে। হাইস্কুলের পরীক্ষায় সবাইকে তাক লাগিয়ে তিনি পেয়েছেন সেরার শিরোপা। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দরজাও খুলে গেছে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাথেমেটিক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষিত হতে চান তিনি।
আরও শুনুন: টিপু সুলতানের মৃতদেহ থেকেই খুলে নেওয়া হয় বহুমূল্য আংটি! কোহিনূর ছাড়াও কী কী লুঠ করেছিল ব্রিটিশরা?
এতদুরের যাত্রাপথ একেবারেই সহজ ছিলনা তাঁর কাছে। তবে সেটা সম্ভব হয়েছে সবসময় পরিবারের লোকেরা সঙ্গে থাকায়। তবে ছোট থেকেই অলিভারকে, এই রোগের জন্য অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। নিজেই সেই অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারনা করেছেন অনলিভার। ছোট থেকে অনেকেই নাকি মনে করতেন তিনি লিখতে বা পড়তে পারেন না, তাই তিনি কিছুই করতে পারবেন না। ছেলের এই খারাপলাগাগুলো ভাগ করে নিতেন তাঁর মা। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে তাঁর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার ঘটনা। প্রাথমিকভাবে ছেলের অসুস্থতার কথা তিনি জানতে পারেন ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করার পর। স্কুলে থেকে ফেরার পর অলিভার নাকি রোজই বলতো সে একই ধরনের খাবার খেয়েছে। এতেই সন্দেহ হয় তাঁর মায়ের। পরে বোঝা যায় অলিভার নাকি মেনুকার্ড-ই পড়তে পারেনা। তাই রোজ তাঁর যে খাবারের নাম মনে থাকে সেটাই খেতে হয় তাঁকে। এখনও নাকি সঠিকভাবে কোনও খাবারের দোকানের মেনুকার্ড পড়তে পারেনা অলিভার। তবে ছোটবেলায় রোগ ধরা পড়ার পরেই, চিকিৎসার জন্য তাঁকে ডিসলেক্সিয়া আশ্যোসিয়েশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন অভিভাবকরা। কিন্তু সেখানে যাওয়ায় আপত্তি ছিল অলিভার-এর। সাধারণ স্কুলের শিক্ষকদের থেকেই শিখে নিতে থাকেন বিভিন্ন জিনিস। ধীরে ধীরে বিভিন্ন ভঙ্গীমার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে সিদ্ধহস্ত হয়ে যান অলিভার। তার সাথে অনেকটা মনের জোরে ভর করে আজ অলিভার স্কুলের পড়া শেষ করে সাধারণের জন্য তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে চলেছেন।