শুনুন ঘর গেরস্থালির অন্দরমহলের স্মৃতিমেদুর এক যাত্রা, বাণী বসু-র কলমে।
পাঠ হওয়া গল্পটির নির্বাচিত অংশ রইল নিচে।
গঙ্গা এসেছিল আমাদের দুঃখের দিনে।
তখন বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাঁদের দুজনেরই অনেক ঝামেলা। বৃদ্ধ দাদু উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁর বেশ কয়েকটি স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। এখন সম্পূর্ণ নুন ছাড়া রান্না খান। ভোর সকালে একটি বেলের অভ্যন্তর আর গোটা দুই কাঁটালিকলা—এগুলো তাঁর চাই-ই চাই, তারপরে চা-বিস্কুট, বাড়িতে দুধে কাটা ছানা বা তার সন্দেশ। সকাল সকাল, লাঞ্চ, মানে ঠিক বারোটা, তার একচুল এদিক-ওদিক হবে না। তখন অল্প ভাত, আলুনি সেদ্ধ, আলুনি তরকারি, আলুনি ডাল ও মাছ, এবং বাড়িতে পাতা দই। বৃদ্ধাটি এই দাদুরই বোন, আমাদের দিদা। দিদার আবার মধুমেহ। অন্যজন যদি নুনছাড়া, ইনি তবে চিনিছাড়া।
… এমন দুর্দিনে এল গঙ্গা।
লম্বা একহারা সুশ্রী চেহারা, রং ময়লা, আধময়লা একটা লালপাড় মিলের শাড়ি পরনে, চলাফেরা মাথার ঘোমটাসমেত ক্ষিপ্র এবং নিঃশব্দ। দেখে মনে হল আগে একে কোথায় যেন দেখেছি।
কেন জানি না, গঙ্গাকে দেখলে আমার সর্বজয়ার কথা অহরহ মনে পড়ত। ওরও একটা অপু ছেলে আছে, সে প্রিন্টিং প্রেসে না শিখে মুহুরিবাবুর কাছে কাজ শিখছে। মা ছেলে দু’জনেরই আত্মসম্মানবোধ আছে, পরস্পরের প্রতি মমতা আছে।
…—আরে নিশ্চিন্দিপুরের ভিটেয় অপু-দুর্গার যা কিছু আবদার তো ছিল তাঁদের মায়ের কাছেই, একমাত্র ভরসাস্থল মা। হরিহর যাকে বলে অ্যাবসেন্টি ফাদার। অপু কী যেন একটা পত্রিকার আবদার করত বাবার কাছে। সেটা অবশ্য সে পেত। দুগ্গার কি বাবার কাছে কোনও আবদার ছিল? মনে পড়ছে না। গঙ্গারও তো একটা ছেলে আছে। সে অপুর চেয়ে বয়সে একটু বড়, মাকে খাটতে দেখতে পারে না।
…কোথায় সেই দাদু-দিদা, কোথায় সেই বাবা মা। গঙ্গার ওপর দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে।
বাড়িতে আমার ছেলেমেয়ে, স্বামী এবং শাশুড়ি। আমি অফিসে বেরই, রান্নার লোক ছাড়া আমার চলে না। শাশুড়ি বৃদ্ধা, শরীর ভাল না। নাতি-নাতনিকে নিয়েই তাঁর দিন কাটে। মাধুরী-আরতি-ডলির পর এবার এল যমুনা।
দশাসই আমাজন টাইপের মহিলা, মাথায় একটি ঝুঁটি, লাইলনের শাড়ি পেঁচিয়ে পরা। আমার কেমন বুক দুরদুর করতে লাগল।
তারপর? শুনুন…
লেখা: বাণী বসু
পাঠ: মৌমিতা সেন, শ্যামশ্রী সাহা, সুশোভন প্রামাণিক ও সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
আবহ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়