এই অকথ্যতার জন্য কতবার ওকে আমরা বলেছি, দীপেন টাকাগুলো ঘোড়ার পশ্চাতে এভাবে অপব্যয় না করে আর কোথাও ওড়াও। আমাদের কথা বলছিনে— তবে মেয়েদের পেছনে ওড়ালেও তো পারো! দীপেনের জবাব, চেনা মেয়েরা নাকি ওড়াবার বা উড়বার মতো নয়। তাদের জন্য খরচান্ত হওয়া পোষায় না। আমি বলি, না হয় অচেনা, অর্থচেতনার জন্যেই করলে, ঘোড়ারাও তোমার কিছু পরিচিত নয় তো? মনের মতো মেয়ে নাই বা পেলে, দেখতে পরীর মতো হলেই তো হয়। তখনই দেখবে— পূর্ব জন্মের পরিচয়! প্রথম দর্শনেই টের পাবে। পুনঃ পুনঃ ঘনিষ্ঠতায় আরো বেশি করে মালুম হবে। তা ছাড়া, ঘোড়াদের জন্যে তুমি বহুৎ করেছো কিন্তু তার কোনো প্রতিদান পেয়েছ কী?— ওর এক চতুর্থাংশ যদি মেয়েদের যজ্ঞে দিতে, যোগ্য ফল পেতেই। ঘোড়াদের কাছ থেকে তুমি সদব্যবহার লাভ করোনি— এত টাকা ঢেলেও এতদিনে ওদের একটাকে উইন প্লেস কোথাও পাওনি, কিন্তু মেয়েদের বেলা তার অন্যথা দেখতে। নেহাত তাকে উইন করতে না পারো (তোমার বরাত!) তবে প্লেসে তাকে পেতে নিশ্চয়। সিনেমা কি রেস্তোরাঁয় সে না এসে যেত না। তারপর তোমার হাতযশ! হৃদয় যদি নাও পাও, এমন নির্দয়তা পেতে না।
এর জবাবে দীপেন মুখখানা যেন কি রকম করেছে, বিষাক্ত পৃথিবীতে বিষণ্ণ প্রতিভারা যেমন করে থাকে। সামান্য মানুষরা না বুঝলে বা একান্তই ভুল বুঝে দোষ করলে মহাপুরুষদের যেমন করা দস্তুর! কিংবা হয়তো— শেলীকে আমি কখনো চোখে দেখিনি— শেলীর মতোই মুখখানা করেছে হয়তো। সেই দৃশ্য শেলের মতো আমার বক্ষস্থলে বেজেছে।
তার ভাবখানা ভাষান্তরে এই দাঁড়ায়: বৎসগণ, তোমরা পাঁড় বেকুব! দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? অশ্বতৃষ্ণা কি অন্য সুধায় মেটবার?… আমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। অশ্বাহত দীপেনের দিকে তাকাতে পারিনি। ঘোড়ার চাট ঘোড়াতেই সইতে পারে। আর— আর পারে দীপেন। ও আমাদের কম্মো না।
লেখা: শিবরাম চক্রবর্তী
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস