ছোটবেলার ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে অনেকদিন। রিটার্ন টিকিট নেই। স্মৃতির গায়ে তবু ফেরার ডাক। সেইসব জমানো চিঠিতেই শোনো-র ডাকঘর। পড়ে-শুনে নিন।
তোমার কাছে ফেরার আজ আর উপায় নেই।
যখন ছোট ছিলাম, বাবা বলত, বড় হয়ে কী হবি?
নির্দ্বিধায় বলতাম, গরু।
গরু হবার যে সুবিধাগুলো লক্ষ্য করেছিলাম;
এক নম্বর, তাকে স্কুলে যেতে হয় না। মাঠে মাঠে ঘাস চিবিয়ে বেড়ায়। আহা কী স্বাধীন! বসে বসে জাবর কাটে। ভাবতাম আমারও যদি জাবর কাটার ক্ষমতা থাকত, আহা কী মজাটাই না হত! যে খাবারটার স্বাদ ভালো লাগে পেট থেকে মুখে তুলে এনে সারা দিন চিবোতাম। গরুর আর একটা মহৎ গুণ আমাকে আকর্ষণ করত। গরু নিরীহ প্রাণী। ভীষণ বোকা। আর এই চালাক পৃথিবীতে আমারও বোকামির শেষ ছিল না।
প্রশ্ন এল, সীতা কে?
বললাম, রামের মাসি।
বাবা বলত গরু…. গরু!
আমার মাথায় ঢুকে বসেছিল মায়ের কথা। মা কথায় কথায় বলত ‘সাত কাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসি’।
কাঠের সাইকেল; এরোপ্লেনের নির্মাণ থেকে পিঁপড়েদের কুচকাওয়াজ, নেংটি ইঁদুরের আস্তাবল, আরশোলার চাটনি, ঘোড়ার ডিম, ফড়িং-এর যুদ্ধবিমান ভাবুক অপুর ভাবনার খেলাঘরে খেলা করে যেত।
বাবা বলেছিল, গরু হলে আমাকে আর ঘরে রাখা যাবে না। ছোট ছেলেটি কষ্ট পেয়েছিল মনে। আধো আধো গলায় বলেছিল, জানালায় দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখো আমায়। যখন ইচ্ছে হবে উঁকি মেরে দেখব। তবুও গরু হবার বাসনায় সে ছিল অটল।
একটু বড় হতেই পান থেকে চুন খসলেই বাবা বলতেন- দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো!
বড় হয়ে বুঝেছি গরু হবার সুবিধা বিস্তর। গোবরের মতো একটা উপকারী জিনিস উৎপাদন করা মুখের কথা নয়। সারাৎসার! অনেকে মাথায় করে রাখবে। দারুণ ব্যাপার। তবে লাঙলের সঙ্গে জুড়ে সারাদিন রোদে খেটে মরা; আর রোজ দুধ দোয়ানোর সময় গোয়ালার অশ্লীল আচরণটা সওয়া মুশকিল!
জানো ছোটবেলা, তখন অশ্লীলতা কাকে বলে তাই জানতাম না। যত অশ্লীলতা শিখলাম বড় হয়ে। যে বড়বেলা এত অশ্লীল সেখানে কখনও এসো না, ভাই।
তুমি চিরকাল ছোটই থেকো। বড় হয় না।
ভালো থেকো ভাই।