সৌন্দর্যের প্রচলিত সংজ্ঞা বলে, গায়ে রোম থাকা চলবে না। বিশেষত নারীদের সাজের ক্ষেত্রে তো ওয়াক্সিং বাধ্যতামূলক। কিন্তু কবে থেকে শুরু হল এই অভ্যেস? কেনই বা গায়ের রোম দূর করার উদ্যোগ নিল মানুষ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যে কোনও বিজ্ঞাপনে চোখ রাখলেই সাধারণত একজন না একজন সুন্দরী তরুণীকে দেখা যাবে। আর চোখে পড়বে তার মসৃণ নির্লোম ত্বক। হ্যাঁ, সুন্দর হতে গেলে যে শরীরে রোম রাখা চলবে না, এই ভাবনাটিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বিনোদনের দুনিয়া। অনেকেই মনে করেন, মসৃণ ত্বকেই বাড়ে যৌন আবেদনও। অথচ প্রাকৃতিক ভাবে মানুষের গায়ে রোম থাকে। বিজ্ঞান বলে, দেহের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ত্বককে বাইরের উত্তাপ থেকে বাঁচাতে রোমের কার্যকরী ভূমিকাও রয়েছে। কিন্তু সৌন্দর্যের সংজ্ঞা তার উলটো পথে চলে। তার মতে, সুন্দর হওয়ার জন্য শরীরে, বিশেষ করে মেয়েদের শরীরে রোম থাকা চলবে না। আর তাই মেয়েদের প্রসাধনী দ্রব্যেও রোম তুলে ফেলার জন্য একাধিক জিনিসের আমদানি ঘটেছে। পুরুষের ক্ষেত্রে অবশ্য রোমকে অনেকসময় পুরুষালির তকমা দেওয়া হয়। তবে বিনোদন জগতের পুরুষদের দেখলে বোঝা যায়, সেখানেও রোমের আধিক্য মোটেই জায়গা পায় না। এই যে কতখানি রোম থাকলে বা না থাকলে মানুষকে সুন্দর দেখাবে, এই ধারণার সূত্রপাত হল কেমন করে? আসা যাক সে কথাতেই।
আরও শুনুন: হস্তমৈথুন কমাতে পারে ক্যানসারের ঝুঁকি, জানাচ্ছে গবেষণা
কেউ কেউ মনে করেন, চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ থেকেই এই ধারণা শুরু। আদিম মানুষের গায়ে যেহেতু বানরের মতো প্রচুর রোম ছিল, সেই শারীরিক গড়নকে পুরোপুরি নাকচ করতে চেয়েই অনেকে শরীরের রোম পরিষ্কার করতে শুরু করেন। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাতেও দেহের রোম তুলে ফেলার চল ছিল বলে মনে করেন ঐতিহাসিকরা। সমাজের উচ্চ বর্গের মানুষ বিষয়টিকে শালীনতার অংশ হিসাবে দেখতেন। তাই নারী ও পুরুষ উভয়েই দেহের রোম পরিষ্কার করতেন। শোনা যায়, রানি ক্লিওপেট্রা মধু ও পদ্মপাতা বাটা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ ব্যবহার করতেন এই কাজে। কিন্তু ক্রমশ এই অভ্যাসের অভিমুখ বদলে যায় কেবল নারীদের দিকেই।
আসলে নারীর শরীর কেমন হবে, তা নিয়ে কিছু বদ্ধমূল ধারণা সচেতন ভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের আশপাশে রোমানদের মধ্যেও এই অভ্যাস দেখা যায়। কিন্তু এখানে বিষয়টিকে উচ্চ বর্গের নারীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে দেখা হত। গ্রিক বা রোমানদের দেবী বা রানিদের যেসব ছবি ও মূর্তি দেখা যায়, তাতে কোনওরকম দৈহিক লোমের অস্তিত্ব নেই। ১৫০০ সাল নাগাদ যখন রানি এলিজাবেথ ক্ষমতায় আসেন, তখন ইউরোপীয় নারীদের মুখের লোম কেমন হবে তা নিয়ে একটি পরিষ্কার চল আসে। মুখের কোনওরকম চুল রাখা তখন নারীর সাজের ধারণার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।
আরও শুনুন: বিয়েতে বাবার ‘অনুমতি’ বাধ্যতামূলক কেন? কন্যা সম্প্রদান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন নারীরা
যদিও মেয়েদের সৌন্দর্যের সঙ্গে রোম না থাকাকে জুড়ে দেওয়া একরকম পুরুষতান্ত্রিক চাল বলেই মনে করেছেন অনেক তাত্ত্বিক। নারীবাদী আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে অনেক মেয়েরা সচেতন ভাবেই এই অভ্যাসের বিরোধিতা করেন। তবে সুন্দর দেখাতে গেলে যে রোম তুলে ফেলতে হবে, এই ভাবনা এখনও বজায় রয়ে গিয়েছে অনেকের মনেই।