অতিমারি ও তার পরবর্তী সময়ে জীবন বদলেছে অনেকটাই। বাড়িতে উঠে এসেছে অফিস। যার ফলে পারিবারিক সময় ও অফিসের সময় এ দুটো গুলিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। পাল্টেছে অভ্যেস। পাল্লা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে শরীরও। ঘাড়-কোমর-পিঠে ব্যথা, চোখের সমস্যার মতো নানা উপসর্গ এসে উঁকি মারছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিনের চাপে পাত্তা দিচ্ছেন না সেসবকে। ভুল করছেন না তো? এর দীর্ঘমেয়াদি ছবিটা ভেবে দেখেছেন। স্পন্ডিলাইটিস, ভার্টিগো এমন হাজারটা রোগকে ডেকে আনছেন না তো? এড়াবার উপায় কিন্তু রয়েছে। শুনে নিন সেই মুশকিল আসান।
বাড়িতে বসেই কাজ। প্রাথমিক ভাবে শুনতে মজা লাগলেও এর সবটাই যে ভাল, তা কিন্তু নয়। বাড়ি থেকে কাজ মানে পরিবারের সঙ্গে আরেকটু বেশি সময়, নিজের ঘরে নিজের পছন্দের বিছানায় বা সোফায় গড়িয়ে গড়িয়ে কাজ করার মজা- এসব যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে অসুবিধাও।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম কালচারে হারিয়েছে ধরাবাঁধা কাজের সময়। যখন তখন কাজ এসে কড়া নাড়ছে দরজায়। যা অনেকসময়েই পরিবারের সময় ছিনিয়ে নিচ্ছে অযাচিত ভাবে। সব চেয়ে বড় বিষয়, অফিসে যে পরিবেশে,যে ধরনের চেয়ার-টেবিল বা আলোয় আমরা কাজ করি, তা আমাদের শরীরের জন্য অনেকটাই বৈজ্ঞানিক। সেই সুবিধা মেলে না আমাদের বাড়িতে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ব্যথা বাড়ছে ঘাড়, কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ডের।
আরও শুনুন: রাতদিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে চোখের বারোটা বাজছে! যত্ন নেবেন কী করে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কাজ করতে বসার ক্ষেত্রে পশ্চার বা দেহভঙ্গির ভূমিকা কিন্তু অনেকটাই। বসা বা দাঁড়ানোর সময় আপনার মাথা ও মেরুদণ্ডের অবস্থানে ভারসাম্য রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। শুয়ে-গড়িয়ে কাজের সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা বিঘ্নিত হয়। ফলে বাড়তে পারে ব্যথা। আর গুড পশ্চার মানে শুধু মাথা ও মেরুদণ্ডই নয়। শরীরের পেশি, জয়েন্ট ও লিগামেন্টও থাকতে হবে সোজা। যা শরীরের স্ট্রেস কমিয়ে পেশিগুলিকে ফ্লেক্সিবেল রাখে, ক্লান্তি দূর করে।
প্রতিদিনের জীবনে আমাদের ঘাড় গুঁজে মোবাইল দেখার জেরেও বাড়ছে ক্রমশ জটিলতা। মোবাইলের পর্দায় দিনরাতই আঙুল চলছে আমাদের। স্মার্টফোনে অতিরিক্ত টেক্সট করার জন্য যে সব সমস্যা দেখা হয়, ডাক্তারির ভাষায় তাকে টেক্সট নেক বলা হয়। ঘাড়-মাথা গুঁজে দিনরাত মোবাইল ঘাটার জেরে ব্যথা হতে পারে মেরুদণ্ডে। যার জেরে ভার্টিগোয় ভুগতে পারেন আপনি। চাপ পড়ে আপনার বুকের পেশিতেও। অবশ হয়ে যেতে পারে হাত। এ ছাড়াও হতে পারে কনস্টিপেশন। ব্যাড পশ্চারের জেরে পেলভিক পেশির উপরে চাপ পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আপনার রোজের রুটিনে। হতে পারে বদহজমের সমস্যাও।
আরও শুনুন: চলছে Work From Home, প্রেমের দফারফা! সম্পর্কে চিড় তাহলে সামলাবেন কীভাবে?
চট করে শুনে নিন কীভাবে ঠিক করবেন পশ্চার।
সোজা হয়ে বসুন। লো-ব্যাক সাপোর্ট রয়েছে এমন চেয়ারে বসুন। সম্ভব হলে ছোট কোনও টুলে পা তুলে বসুন।
কাজ করতে করতে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর বসার ভঙ্গি বদলান। পারলে কাজের ফাঁকে হাঁটাচলা করে নিন একটু।
ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় বালিশ বা তোয়ালের রোল দিয়ে ব্যাক সাপোর্ট দিন।
শুয়ে শুয়ে কাজ করা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাঁধ, হাত, কোমরের ব্যায়াম করুন দিনে তিন-চার বার।
এই কয়েকটা ব্যাপার খেয়ালে রাখলেই ব্যাস। ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক বা অফিসে বসে কাজ। সবটাই চলুক আনন্দে।