প্রযুক্তি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ – এ তর্ক চলছে এবং চলবেও। তবে আজ আর অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, প্রযুক্তিকে ঠেলে সরিয়ে রেখে আমাদের বর্তমান জীবন কোনোভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি থেকে রোমাঞ্চকর অভিযান, সব ক্ষেত্রেই মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি নির্ভর। এমনকী প্রযুক্তি এসে বদলে দিচ্ছে মানুষের আদিম প্রবৃত্তির নকশাও। এককথায় বলা যায়, প্রযুক্তির কোপে বদলাচ্ছে মানুষের যৌনতার ভাষাও। কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
বর্তমান পৃথিবীতে দূরত্ব আর তেমন কোনও বিষয় নয়। সৌজন্যে সেই প্রযুক্তি। পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বকে সে কমিয়ে এনেছে তো বটেই, এমনকী পৃথিবী ছাড়িয়েও মহাকাশের বহুদূর গ্রহ নক্ষত্রের খবরাখবরও আজ মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অনায়াসে। ফলত এখনকার পৃথিবীতে একজন মানুষের সঙ্গীর পাশাপাশি না-থাকা বা দূরে থাকা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা তো নয়ই, বরং বদলানো পৃথিবীতে একেই বলা যায় নিউ নর্মাল। এখন কথা হল, এই নিউ নর্মাল পরিস্থিতি কি দুই মানুষের ভিতরকার যে উষ্ণতা, তা-ও পৌঁছে দিতে পারে পরস্পরের কাছে! প্রত্যাশিত ভাবেই এর উত্তর- না। অন্তত এখনও পর্যন্ত। কিন্তু তাই বলে প্রযুক্তি যে হাত গুটিয়ে বসে আছে এমনটাও নয়। সে বরং ঢুকে পড়েছে মানুষের আদিম প্রবৃত্তি যৌনতার ভিতরও। এমনকী অনেকটা বদলে দিতেও পেরেছে যৌনতার ভাষা।
আরও শুনুন: শীতকালে কেন বাড়ে পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
কীরকম এই বদল? ধরা যাক, এক পুরুষ যেখানে আছেন, তাঁর সঙ্গিনী বসে আছেন তাঁর থেকে দূরে। অর্থাৎ দুজনের মধ্যে শারীরিক যোগাযোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতে কি পুরুষের যৌনতৃপ্তিতে তাঁর সঙ্গিনীর কোনও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে? এই সেদিন পর্যন্ত এর উত্তরে যে কেউ চোখ বুজিয়ে না বলে দিতে পারতেন। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা এই পরিসরও তৈরি করে ফেলেছে প্রযুক্তি। সম্প্রতি এক ধরনের যৌন-যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে গাইব্রেটর। এই যন্ত্র পুরুষকে যৌনসুখ দিতে সহায়তা করবে। কিন্তু স্বমেহনের থেকে এর পদ্ধতি অনেকটাই আলাদা।
আরও শুনুন: সঙ্গমেও সাম্যের ডাক… এবার ইউনিসেক্স কন্ডোম বানালেন চিকিৎসক
এই যন্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা যান্ত্রিকতা সরিয়ে এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে মোবাইল অ্যাপ পরিষেবা। অর্থাৎ যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। অর্থাৎ দূরে বসেও একজন পুরুষের যৌনসুখের চাবিকাঠি হাতে থাকবে তাঁর সঙ্গিনীর। সংস্থা ঠিক করেছে, এই ধরনের যৌন-যন্ত্র বা যৌন-খেলনা সরবরাহ করা হবে শুধু পুরুষ বা নারীর কাছে নয়। বরং দুজনের কাছেই। এ ছাড়া একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যেখানে কেরামতি দেখাবে ভারচুয়াল রিয়ালিটি এবং সেই সংক্রান্ত ভিডিও। অর্থাৎ, কাপলের মধ্যে বাস্তবিক যা দূরত্ব থাকার তা তো থাকলই। ভারচুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে একধরনের অনুভবের জায়গা তৈরি করে দেওয়া হল। যা শূন্যতাকে ভরাট করবে। আর সরাসরি যৌনসুখের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হল সঙ্গিনীর হাতে। ফলে দূরত্ব থাকলেও, তা যেন ততটা দূরত্ব হয়ে থাকল না। বরং একধরনের নৈকট্যের আবহ তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা প্রযুক্তির কল্যাণে।
এখনও পৃথিবীর বহু জায়গায় এই ধরনের পরিষেবা গালগল্প বলেই মনে হবে। তবে এ-ও সত্যি যে পৃথিবী হু-হু করে এগিয়ে যাচ্ছে এই কৃত্রিম বাস্তবতার দিকে। সেখানে বাদ নেই যৌনতাও। আগামী পৃথিবিতে যৌনতার ধরনধারণ প্রযুক্তির হাতে পড়ে অনেকটাই যে বদলে যাবে না, সে কথা আজ অন্তত আর জোর দিয়ে বলা যায় না।