কাজ হয়তো একই। তবুও পুরুষদের তুলনায় বেশি চাপের মুখে মহিলারাই, সে ঘরে হোক কি বাইরে। দেশের নিরিখে এমনটাই বলছে সমীক্ষা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অফিসে পাশাপাশি বসেই কাজ করছেন পুরুষ ও মহিলা। এমনিতেই কাজের ধরনধারণও প্রায় একইরকম। অফিসে প্রচুর চাপ বেড়েছে, এমন কথাও হয়তো দুজনেই বলছেন। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে বেশি চাপের মুখে পুরুষেরা নন, রয়েছেন মহিলারাই। সম্প্রতি দেশের অন্তত হাজার পাঁচেক কর্মরত পুরুষ ও মহিলাকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল একটি সংস্থা। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকা বিচার করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন সমীক্ষকেরা।
আরও শুনুন:
খালি মনে হচ্ছে মোটা হয়ে যাচ্ছেন! মনের ভুল, নাকি নেপথ্যে কোনও ট্রমা?
কী ভাবছেন, মেয়েদের কাজ নিয়ে অনেক কথাই তো হয়? তাহলে এ কথা নতুন করে বলার কী আছে! বলার আছে এই কারণেই যে, মূল সমীক্ষাটি কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে বাইরের কাজের উপরে। তাও একেবারে অসংগঠিত ক্ষেত্রে খেটে খাওয়া মানুষের কথাও হচ্ছে না। তথাকথিত হোয়াইট কলার কাজ, অর্থাৎ পেশাদারি ক্ষেত্রের কথাই বলা হচ্ছে। সেখানে তো আপাত চোখে নারী পুরুষের বৈষম্য ততটা চোখে পড়ে না। এই ধরুন, ঘরের কাজের ক্ষেত্রে তথ্য বলছে, প্রতিদিন কোনও পুরুষ ঘরের কাজে সময় দেন মোটামুটি ৫০ মিনিট। আর সাধারণত কোনও মহিলার জন্য যতটা ঘরের কাজ বরাদ্দ, তা সারতে সময় লাগে অন্তত ৬ ঘণ্টা। ফলে ঘরের কাজে সিংহভাগ নারীকেই যে অতিরিক্ত চাপের মোকাবিলা করতে হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পেশাদার অফিসে তো আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনও ব্যাপার নেই যে, পুরুষ আর নারীর জন্য তেমন কম বেশি কাজ বরাদ্দ থাকবে। অথচ সেখানেও ৭২ শতাংশের বেশি মহিলা কাজের চাপের কথা বলছেন। সেখানে পুরুষদের মধ্যে ৫৩.৬৪ শতাংশ পুরুষ বলছেন কাজের চাপের কথা। মেয়েদের ক্ষেত্রেই এই হিসেব বদলাচ্ছে কেন?
আরও শুনুন:
ঘুম নেই ভারতীয়দের চোখে! কিন্তু কেন?
এর একটা বড় কারণ লুকিয়ে আছে আসলে ওই ঘরের কাজের বাড়তি চাপেই। গবেষকেরা বলছেন, এর দরুন মেয়েদের জীবনে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের যে অভাব থেকে যাচ্ছে, তা-ই চাপ বাড়াচ্ছে আরও। উপরন্তু এখনও অনেক জায়গায় মেয়েদের কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে একরকম বৈষম্যমূলক মনোভাব লক্ষ করা যায়। ফলে সেখানে নিজেদের প্রমাণ করার জন্যই মহিলা কর্মীকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। ঘরে বাইরের এই পরিস্থিতি অনেকের জীবনেই আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, একইসঙ্গে বাড়তে থাকে অন্যের চোখে কাজ পছন্দ না হওয়ার ভয়। তাই এই সূত্রেই সমীক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ওই পেশাদার নারী-পুরুষদের মধ্যে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ সময়েই হতাশায় ভুগছেন ৯.২৭ শতাংশ পুরুষ, যে সংখ্যাটা মেয়েদের ক্ষেত্রে একলাফে পৌঁছে যাচ্ছে ২০ শতাংশে। বলাই বাহুল্য, এই সব মিলিয়েই বাড়ছে কাজের চাপ নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার প্রবণতা, বলছেন গবেষকেরা।