নিজেই নিজের ডাক্তারি করছেন। এই অভ্যেস অনেকেরই রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঠিক জ্ঞান নেই, তাতে কী! বাজার চলতি ওষুধেই সব রোগের নিরাময় করতে পছন্দ করেন এঁরা। কিন্তু এই অভ্যাসে ভবিষ্যতের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে না তো? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাথাব্যথা। হালকা জ্বর। কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে। চিন্তা নেই। সঙ্গে আছে ওষুধ। একটা খেলেই কাজ হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এভাবেই, মাথাব্যথা, সর্দিজ্বর, এমনকি পেটে ব্যথার মতো সমস্যাও নিমেষে সমাধান করেন অনেকে। কিন্তু এর থেকেই হতে পারে মারাত্মক বিপদ।
আরও শুনুন:
দ্রুত কাজে ফিরুন! বাচ্চার অসুখ হলেও মাকে ছুটি দিতে নারাজ সংস্থা
ওষুধ কিনতে গেলে ডাক্তারের প্রেসকিপশন লাগবে। এই নিয়ম অনেক দেশেই রয়েছে। আমাদের দেশেও নেই বললে ভুল হয়, তবে সব ওষুধের জন্য প্রেসকিপশন জরুরি নয়। জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দিকাশি, এসবের নিরাময় বাজার চলতি ওষুধেই হতে পারে। এখানেই যত সমস্যা। সাময়িক নিয়াময় হলেও, না বুঝে ওষুধ খাওয়ার ক্ষতিকারক দিকও যথেষ্ট। কিছুদিন আগেই, কেন্দ্রের তরফে বেশ কিছু বাজার চলতি ওষুধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। গুণমান পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৬টি ‘ককটেল ওষুধ’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মোদি সরকার। তবে এখনও এমন অনেক ওষুধ বাজারে উপলব্ধ, যা সঠিক মাত্রায় শরীরে না গেলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ।
আরও শুনুন:
ব্যাগ ছাড়াই স্কুলে, হবে না পড়াশোনা! পড়ুয়াদের চাপ কমাতে নয়া প্রস্তাব কেন্দ্রের?
তালিকার শুরুতেই রয়েছে প্যারাসিটামল। বাজারচলতি এই ওষুধ জ্বরের নিরাময়ে কাজে আসে। অনেকেই প্রেশকিপশনের তোয়াক্কা না করে এই ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, বিনা প্রয়োজনে দিনে ৪ বার এই ওষুধ খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাজারে মূলত ৫০০, ৬৫০ এবং ১০০০ পাওয়ারের প্যারাসিটামল উপলব্ধ। কোনওটাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরীরে ঢুকলে হতে পারে বিপদ। কেউ যদি দিনের পর দিন এমনটা করে থাকেন, তাহলে পাকাপাকি ভাবে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে বাধ্য। পরের ওষুধটি অ্যাসপ্রিন। মাথাব্যাথা সারাতে এই ওষুধ অব্যর্থ, এমনটাই মনে করেন অনেকে। বাস্তবে তা হয় না বললেও ভুল হবে। কিন্তু এখানেও ডোজের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যাসপ্রিন শরীরে প্রবেশ করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাৎক্ষনিক ব্যথা নিরাময়ের জন্য পেইন কিলার খেয়ে থাকেন অনেকেই। এক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া জরুরি। অত্যধিক পেইন কিলার কিডনির উপর চাপ ফেলে। তাতে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। একইভাবে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেটও বাজারে বেশ জনপ্রিয়। একটু হাঁচি হলেই এই ওষুধ খেতে শুরু করেন কেউ কেউ। অতিরিক্ত পরিমাণে এই ওষুধ খেলে হতে পারে নার্ভের সমস্যা। এছাড়া সবথেকে বেশি যে ওষুধ খাওয়ার চল, তা হল গ্যাস-অম্বলের ওষুধ। অমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল গোত্রের ওষুধ এক্ষেত্রে বেশি প্রচলিত। সাময়িক নিরাময় হয় না বললে ভুল। কিন্তু সামান্য পেট ব্যথা হলেই যদি এই ওষুধ খাওয়া হয়, তাহলে একসময় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভবিষ্যতে বড় কোনও রোগও বাসা বাঁধতে পারে এর থেকে। উপায় একটাই, ছোটখাটো সমস্যা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। না বুঝে অতিরিক্ত ওষুধ খেলে ভবিষ্যতের জন্য তা মোটেও সুখকর হবে না।