মানুষের জীবনে ভাল আর খারাপ হাত ধরাধরি করে চলে। অথচ অনেক সময়ই দেখা যায়, ভালর চেয়ে খারাপ ঘটনাকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। যার দরুন ভাল অনুভূতিরা ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে। জানেন কি, এই ধরনের মনোভাব আসলে কীসের লক্ষণ?
সাধারণত ভাল ঘটনার চেয়ে আগে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে কোনও খারাপ ঘটনা। কিংবা কোনও নেতিবাচক মন্তব্য মানুষকে ইতিবাচক কথার চেয়ে বেশি প্রভাবিত করে ফেলে অনেক সময়েই। সমস্যা আরও বাড়ে, যখন সেই প্রভাব সহজে কাটিয়ে ওঠা যায় না। তা ঘূর্ণির মতো মানুষকে তার ভেতরে টেনে নিতে থাকে। আর এই প্রবণতাকেই চিহ্নিত করা হয় ‘নেগেটিভিটি বায়াস’ নামে।
আরও শুনুন: অ্যালঝাইমার্স নিয়ে অবহেলা নয়, সকলকে সচেতন করলেন মীর… এই নিয়ে কী মত চিকিৎসকদের?
‘নেগেটিভিটি বায়াস’ ঠিক কী?’ নাম থেকেই স্পষ্ট, নেতিবাচকতার দিকে ঝুঁকে থাকা মনোভাব। এর ফলে মানুষ একদিকে যেমন খারাপ ঘটনার প্রভাবে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে, তেমনি আবার ভাল ঘটনাকেও সহজে গ্রহণ করে উঠতে পারে না। এর ফলে তার মধ্যে হতাশা বেড়ে উঠতে থাকে। হারিয়ে যায় সরলতা। আনন্দ পাওয়ার, খুশি হওয়ার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে। আর তার ফলে অন্যকে আনন্দ দেওয়াও সেই মানুষের পক্ষে দিন দিন কঠিন হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আর সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব এলে মানুষ ক্রমশ একা হয়ে যেতে থাকে।
আরও শুনুন: আচমকাই Mood off! সামলে নিয়ে কাজে মন দেবেন কীভাবে?
‘নেগেটিভিটি বায়াস’ তৈরি হওয়ার কারণ কী? মনে করা হয়, আদিম যুগ থেকেই এই প্রবণতা চলে আসছে। যে সময়ে মানুষের মধ্যে কেবল আদিম প্রবৃত্তিই জেগে ছিল, তখন আত্মরক্ষার তাগিদ তাকে তাড়িত করত সবসময়। সুতরাং কোনদিক থেকে বিপদ আসতে পারে, সম্ভাব্য বিপদের গতিপ্রকৃতিই বা কীরকম, সবকিছুই ভেবে রাখা অত্যন্ত জরুরি ছিল। বলাই বাহুল্য, যারা সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে সচেতন ছিল না, টিকে থাকার লড়াইয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু যারা সতর্ক ছিল, আধুনিক মানুষ তাদেরই উত্তরসূরি। সুতরাং সেই প্রবণতার উত্তরাধিকার তাদের মধ্যেও কিছু বর্তেছে বলে মনে করা যায়।
এইদিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যাবে, ‘নেগেটিভিটি বায়াস’-এর মধ্যেও রয়েছে একটি ইতিবাচক দিক। যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সম্ভাব্য বিপদ বা ক্ষতির কথা ভালভাবে খতিয়ে দেখে নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তা যেন বাতিকের পর্যায়ে না পৌঁছয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকাও দরকার। তাই নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথা বলা কমিয়ে ফেলা উচিত। আত্মসমালোচনা করা ভাল, কিন্তু তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। আপনার সঙ্গী বা পরিবারের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখুন, ক্রমাগত সমালোচনার ফলে কারও আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে না তো? শরীরের মতোই মনের যত্ন নেওয়াও কিন্তু সমানভাবে জরুরি। ‘নেগেটিভিটি বায়াস’-এর লক্ষণ দেখলে মনকে অন্যদিকে ঘোরাবার চেষ্টা করুন। কাজের ব্যস্ততায় ডুবে গিয়েই হোক, কিংবা কোনও সৃষ্টিশীল কাজে যোগ দিয়ে, বই পড়ে, গান শুনে, সিনেমা দেখে কি আড্ডা দিয়েই হোক, নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। আর নিজে নিজে পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে পরামর্শ নেওয়া যেতেই পারে বিশেষজ্ঞ মনোবিদের।