বাইরের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নেই। জনসাধারণ চাইতেই পারে যে সংঘাত-সংঘর্ষ থেমে যাক, চারিদিকের উত্তাল পরিস্থিতি আবার শান্ত হোক। কিন্তু তবুও তা ইচ্ছেমতন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যা করা যেতে পারে, তা হল নিজেদের ঘরের ভিতর শান্তি বজায় রাখা। অর্থাৎ, নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্থিতি যতখানি স্বাভাবিক রাখা যায়, সে চেষ্টা করা।
ভারত-পাক অশান্তি যে দ্রুত এক জটিল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে, তা বাড়ি বসেই বুঝতে পারছেন সকলে। বহুদূরের সংঘাত যেন হানা দিয়েছে মানুষের দৈনিক জীবনেও। পথ চলতে হামেশাই কানে আসছে এ বিষয়ে চাপা আলোচনা। আর সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করার তো উপায়ই নেই! প্রতি মুহূর্তেই এই সংঘর্ষ প্রসঙ্গে নতুন কোনও তথ্য উঠে আসছে স্ক্রিনে। আর তাতেই আরও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। রোজের জীবনে ঠিক কী প্রভাব পড়বে এর? খাবারদাবার কি বিপুল পরিমাণে মজুত করে নিতে হবে এখনই? প্রশ্ন হাজার, উত্তর নেই। ফলে অজানাকে ঘিরে বেড়ে চলেছে ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ। কিন্তু এইভাবে তো চলতে পারে না। রাষ্ট্র তার কূটনৈতিক নীতি মেনে সমস্যা সমাধান করবে। সেই পথ যে সবসময় শান্তি বা আলোচনার হবে এমনটা নয়। বরং অশান্তির আবহে এমন অনেক ঘটনাই ঘটবে যা মনকে অশান্ত করবে। সেক্ষেত্রে মন শান্ত রাখার উপায় কী?
এক নয়, বহু উপায় রয়েছে। মানসিক অস্বস্তি কাটাতে, মনোবিদের পরামর্শ নেওয়াই সর্বোত্তম। তবে রোজকার জীবনে তো তেমনটা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তাই আচমকা হওয়া উদ্বেগ কাটাতে তাৎক্ষনিক কিছু উপায়ের সন্ধান করতেই হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে যা মনে রাখা অবশ্য কর্তব্য, তা হল, বাইরের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নেই। জনসাধারণ চাইতেই পারে যে সংঘাত-সংঘর্ষ থেমে যাক, চারিদিকের উত্তাল পরিস্থিতি আবার শান্ত হোক। কিন্তু তবুও তা ইচ্ছেমতন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যা করা যেতে পারে, তা হল নিজেদের ঘরের ভিতর শান্তি বজায় রাখা। অর্থাৎ, নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্থিতি যতখানি স্বাভাবিক রাখা যায়, সে চেষ্টা করা।
মনোবিদরা বলছেন, বাইরের সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়া যাতে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্য সবার আগে দরকার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। আসলে বর্তমান সামাজিক অবস্থায়, সোশ্যাল মিডিয়া যেন বহু মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। মানুষ নিজের অজান্তেই ভীষণরকম নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তার উপর। ফলে সেটি যে কোন ফাঁকে জীবনের স্বাভাবিক ধারাকে ব্যহত করছে, তা আর কিছুতেই বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছে না। হয়তো অনেকেই এমন রয়েছেন, যাঁদের পক্ষে একটা গোটা দিনও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করে থাকা সম্ভব নয়। আর এইখান থেকে সমস্যার সূচনা হয়। একটু বিবেচনা করে দেখলেই বোঝা যায় যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হওয়া সমস্ত খবর সত্যি নয়। বিশেষত যেকোনও রকমের রাজনৈতিক বা সামাজিক টালমাটাল অবস্থায় ভুয়ো খবর যেন দাবানলের মতন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর ঘরে বসে স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে তার মধ্যে কোনটিকে বেছে নিয়ে সেটির উপর বিশ্বাস করা যায়। ফলে অকারণেই উদ্বেগের শিকার হন বহু মানুষ, বিশেষত বয়স্করা। তাই সবার প্রথমেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে খানিক দূরত্বে না গেলে, রেহাই মিলবে না কিছুতেই। জোর করে হলেও বারবার ‘অনলাইন’ হওয়া থেকে আটকাতে হবে নিজেকে।
এ সময়ে বরং মন ভালো করা সিনেমা দেখা যেতে পারে, গল্পের বই পড়া যেতে পারে। শুনলে মন শান্ত হয়, এমন নানা ধরণের গান বা সুর পাওয়া যায় ইউটিউবেই। নিজের মনকে অন্য সব কিছু থেকে সরিয়ে, তেমন কিছুও শোনা যেতে পারে চাইলে। একেবারে সহজ কিছু যোগব্যায়ামও করা যেতে পারে। জোর করে তো আর নিজেকে ‘কিচ্ছু হবে না’ বোঝানো সম্ভব নয় মানুষের পক্ষে। বরং মনকে বলা যেতে পারে যে, ভয় লাগা, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে যেহেতু এতদূর থেকে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয় সাধারণ মানুষের পক্ষে, তাই কেবল চেষ্টা করা যেতে পারে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটিতে যথাসম্ভব আস্থা রাখার। সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবার জন্য যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তাঁদের এটুকু ভরসা বোধহয় করাই যায়।
তবে মনোবিদেরা বলছেন, এ সবের মধ্যেই বাড়ির ছোট সদস্যদের কথায় গল্পে বোঝাতে হবে, দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের কারণ কী। যতটুকুতে তাকে আঘাত না দেওয়া যায়, তেমনভাবেই রাজনৈতিক সংঘর্ষের মতো বিষয়গুলির সামান্য হলেও আভাস দিতে হবে। দরকারে আপতকালীন পরিস্থিতিতে চটজলদি কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে কিছু পরিকল্পনা করা যেতে পারে। সত্যিই যদি আগামীদিনে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে সে অবস্থায় রাজ্য তথা দেশবাসী হিসেবে সাধারণ মানুষের একত্রিত থাকাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। এছাড়া, ঘটে চলা সংঘর্ষ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা, এবং অন্যকে সেই তথ্য দেওয়ার আগে বারবার যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।