করোনা ভাইরাসকে রুখতে হলে মাস্ক ছাড়া গতি নেই। কিন্তু নয়া স্ট্রেন ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তে কাঁটা পড়েছে যে কোনোরকম মাস্ক ব্যবহারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এন-৯৫-এর মতো বিশেষভাবে প্রস্তুত মাস্কই কেবল প্রার্থিত নিরাপত্তা দিতে পারে। কিন্তু কীভাবে চিনবেন, ঠিক মাস্ক ব্যবহার করছেন কি না?
গোড়া থেকেই বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, করোনা ভাইরাস মানুষের নাক ও মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে যে ড্রপলেট ছড়ায়, তাতেই বাতাসে ছড়িয়ে যায় ভাইরাসও। সেখানে থাকা কোনও সুস্থ মানুষের শরীরেও মারণ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে। আর এই সম্ভাবনাকেই প্রতিহত করতে পারে ঠিকঠাক মাস্কের ব্যবহার।
কিন্তু সেই ঠিক মাস্ক কোনটি, তা চিনবেন কীভাবে?
আরও শুনুন: নতুন বছরেও সঙ্গী করোনার ভয়, তাহলে ডিপ্রেশনকে দূরে রাখবেন কীভাবে?
প্রথমত, মাস্ক হওয়া দরকার থ্রি-লেয়ারড বা ত্রি-স্তরীয়। দ্বিতীয়ত, কাপড়ের বাহারি মাস্ক বা বাজারচলতি ডিজাইনার মাস্ক পরে স্টাইল হতে পারে বটে, কিন্তু তাদের ভাইরাস আটকানোর ক্ষমতা শূন্য। ধুলো থেকে বাঁচতে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মারণ ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার জন্য তা একেবারেই কার্যকরী নয়। কারণ কাপড়ের ছিদ্রের চেয়ে ভাইরাসের আয়তন অনেক কম। ফলে এই মাস্ক ভেদ করে ঢুকতে তার কোনও সমস্যাই হয় না।
এদিক দিয়ে বিচার করেই বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনা ভাইরাস থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল N-95, N-99, N-100 বা অন্তত সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা। সংখ্যাগুলি বোঝায় মাস্কটি কত শতাংশ ভাইরাস আটকানোর ক্ষমতা রাখে। আর ‘N’ চিহ্নটি বোঝায় নন-অয়েল অর্থাৎ তৈলাক্ত অণু না থাকলে যা ব্যবহার করা যায়, R থাকলে বোঝা যায় ৮ ঘণ্টার জন্য অয়েল-রেজিস্ট্যান্ট, এবং P বোঝায় অয়েল-প্রুফ। N, R এবং P দ্বারা চিহ্নিত একাধিক মাস্কের মধ্যে এই ক্ষেত্রে ব্যবহার্য মাস্ক হল প্রথমটি, অর্থাৎ N চিহ্নিত মাস্কগুলি। N-95 মাস্ক এবং N-99 মাস্কের ভাইরাস আটকানোর ক্ষমতা যথাক্রমে ৯৫ শতাংশ এবং ৯৯ শতাংশ। তবে N-99 মাস্ক সাধারণত চিকিৎসকেরাই বেশি ব্যবহার করে থাকেন। অত্যধিক চাপা হওয়ার কারণে এই মাস্ক যেমন বেশি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম, তেমনই সাধারণ মানুষের পক্ষে এই মাস্ক পরে থেকে দীর্ঘক্ষণ কাজকর্ম করা বেশ অসুবিধাজনকও। N-95 মাস্ক কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে নেওয়া প্রয়োজন সেটি NIOSH তথা National Institute for Occupational Safety and Health দ্বারা অনুমোদিত কি না। মাস্কের গায়ে NIOSH-এর বানান এবং লোগো ঠিকমতো আছে কি না, মাস্ক কেনার আগেই দেখে নেওয়া উচিত। ওষুধের দোকান থেকেই সিল করা ডিজপোজেবল বা সার্জিক্যাল মাস্ক সংগ্রহ করতে পারলে ভাল হয়। কোনও চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে পারেন বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ডের নাম। দেখে নিন সার্জিক্যাল মাস্কটিতে নোজ ক্লিপ লাগানো রয়েছে কি না। এটি নাকের সঙ্গে মাস্ককে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত রাখে। ভাইরাসের আয়তন এমনিই আণুবীক্ষণিক, ফলে খুব সামান্য ছিদ্র পেলেও তার ঢুকে পড়তে সমস্যা হয় না। সেখানে যদি মাস্ক নাকের নিচে ঝোলে, কিংবা ঢিলে হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু মাস্ক পরেও আদতে কোনও লাভ হবে না।
আরও শুনুন: বাহারি কাপড়ের মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোন! ওমিক্রনের বিপদ কিন্তু এতে কাটবে না
করোনার সঙ্গে যে আগামী আরও কিছুদিন মোকাবিলা করে চলতে হবে, সে কথা এতদিনে সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুতরাং সুরক্ষার স্বার্থে ঠিকমতো মাস্ক ব্যবহার করাও প্রয়োজন। নিরাপদ থাকার জন্য তাই বেছে নিন সঠিক মাস্ক।