একটা সময় ‘পিরিয়ডস’ শব্দটা প্রকাশ্যে উচ্চারণ করলেও অনেকে প্রায় কানে আঙুল দিতেন। এখন হয়তো খানিক পালটেছে পরিস্থিতি। মেয়েরা খোলাখুলি বলছেন এই সময়ে শারীরিক কষ্ট কতটা কাবু করে ফেলে তাঁদের। তাই কথা চলুক সেসবের সমাধান নিয়েও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঋতুচক্র চলাকালীন রক্তপাতজনিত অস্বস্তি, রক্তপাতের পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ, এসব তো লেগেই থাকে। কিন্তু এ ছাড়াও আরেকটি বাড়তি অসুবিধার ভুক্তভোগী অধিকাংশ মেয়েই। এই সময়ে অনেকেরই তলপেটে, পায়ে ব্যথা হতে থাকে। বয়স কিংবা ওজনের তারতম্যে সে ব্যথা কমে বাড়েও। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ব্যথার নাম ‘ডিসমেনোরিয়া’। সেই অবস্থায় রোজকার রুটিন মেনে কাজকর্ম করা বেশ সমস্যার হয়ে ওঠে। ফলে অনেকেই চটজলদি ভরসা রাখেন ব্যথা কমানোর রকমারি ওষুধের উপরে। কিন্তু মুশকিল হল, যেহেতু ঋতুচক্র এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুই শরীরের প্রজননতন্ত্র ও হরমোন সিস্টেমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, ফলে তার সঙ্গে যা-ইচ্ছে-তাই করলে উলটে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন, অনেকেই জানেন না ‘ডিসমেনোরিয়া’ আসলে দু-ধরনের। ‘প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া’-র ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের প্রথমে তলপেটে বেশি ব্যথা হয়। রক্তপাত কমতে থাকলে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যায়। কিন্তু ‘সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া’-র কারণ হল তলপেটে সংক্রমণ, ফাইব্রয়েড, পলিপ বা এন্ডোমেট্রিয়োসিস। আপনি যদি কারণ না জেনে যে কোনও বাজারচলতি পেনকিলার খেয়ে ফেলেন, তা এই সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং যদি ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতে হয়, তা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত। আর ব্যথা কমানোর জন্য আপনি নিজে কী করতে পারেন? শোনা যাক তেমনই কিছু ঘরোয়া উপায়ের কথা।
আরও শুনুন: ঋতুকালে Menstrual Cup ব্যবহার কতটা নিরাপদ?
বেশি ব্যথা হলে গরম সেঁক নিলে আরাম পাওয়া যায়। হট ব্যাগ বা নরম সুতির কাপড় হালকা গরম করে পেটে সেঁক দিতে পারেন। আবার হালকা গরম জলে স্নান করলে পেলভিক পেশিগুলো আলগা হয়, ফলে ব্যথা কমে যায়। ঋতুচক্রের সময়ে এমনিও অনেকবার পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তখন গরম জল ব্যবহার করলে বা সেই জলে স্নান সারলে তরতাজা লাগবে। এই সময়ে গরম পানীয় খেলেও ভাল লাগে। যদি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স না থাকে, অর্থাৎ দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে সমস্যা না হয়, এই সময়ে এক কাপ ঈষদুষ্ণ দুধ আপনাকে আরাম দেবে। পাশাপাশি, এই সময়ে পুষ্টিকর ডায়েটের প্রয়োজন। দুধ সেই চাহিদাও মেটাতে পারে। চা খেলে তাতে আদার রস আর দারচিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে পারেন। ক্লান্তি দূর করতে কিন্তু এই পানীয়ের জবাব নেই।
পিরিয়ডস চলাকালীন ভারী শরীরচর্চা করতে কষ্ট হয়। কিন্তু গবেষণা বলছে কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ, বিশেষ করে যোগব্যায়ামের নির্দিষ্ট কিছু আসন করলে ‘প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া’-র হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে অচিরেই।
আরও শুনুন: সমস্যা বাড়াচ্ছে থাইরয়েড? কী লক্ষণ দেখে চিনবেন
এসব ছাড়াও মেনে চলুন একেবারে সহজ একটি নির্দেশ। সারা দিনে যথাযথ পরিমাণে জল খেতে ভুলবেন না। যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা বা পেশিতে টান ধরার মতো সমস্যার ক্ষেত্রে জলের কোনও বিকল্প নেই। শরীর যত আর্দ্র থাকবে, ততই নিয়ন্ত্রণে থাকবে যন্ত্রণা।