করোনা, অতিমারি, মৃত্যু- গোটা বছর জুড়েই ছিল এসবের চোখরাঙানি। বিচ্ছেদ, ক্ষতি, প্রিয়জন বিয়োগ থেকে আত্মবিশ্বাস হারানো – মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে এসেছে একের পর এক ধাক্কা। যার জেরে অনেকেই মুখোমুখি হয়েছি দীর্ঘকালীন মনখারাপ, নেগেটিভিটি, ডিপ্রেশনের। নতুন বছরের গোড়াতেও যে অবস্থা তেমন বদলাবে, এমন ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ডিপ্রেশনের মতো কঠিন সমস্যা জাঁকিয়ে বসার আগেই বরং সেলফ কাউন্সেলিং-এ মন দিই আমরা। হাতের কাছেই রয়েছে এমন হাজারটা উপায়, যাতে আমরা আরেকটু ভাল থাকতে পারি। সেই শুরুটা হোক এখন থেকেই। ডিপ্রেশনের প্রথম ধাপেই এগিয়ে যাই নিরাময়ের দিকে। শুনে নিন, কী বলছেন মনোবিদেরা।
ডিপ্রেশন। বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেকেই সেরকম ভাবে মাথা ঘামান না। মনে করেন, মন খারাপ হয়েছে। ও ঠিক দুদিন বাদে সেরে যাবে। কিন্তু শরীরের রোগ যেমন ফেলে রাখলে বাড়ে, সঠিক সময়ে তার যেমন চিকিৎসা প্রয়োজন, মনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কিছুমাত্র আলাদা নয়। বরং আরও বেশি জরুরি।
তবে ইদানীং এই নিয়ে খানিকটা হলেও সচেতনতা বেড়েছে। একের পর এক বিখ্যাত মানুষের ডিপ্রেশন এবং তার পরিণতি মানুষকে একটু হলেও সতর্ক করেছে। ডিপ্রেশন মানে যে সাদামাটা মনখারাপ নয়, ব্যপারটা যে রীতিমতো ক্লিনিক্যাল পর্যায়ের, তা অল্প হলেও বুঝতে শিখেছে লোকজন।
ডিপ্রেশন এক ধরনের মুড ডিজঅর্ডার, যা শরীর থেকে শুরু করে ভাবনাচিন্তা, মুড সব কিছুর উপরেই প্রভাব ফেলে। খাওয়াদাওয়া থেকে ঘুম, বিঘ্নিত হয় সব কিছুই। আবার বেশি ঘুমও হতে পারে ডিপ্রেশনের লক্ষণ। আসলে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো আলাদা আলাদা। মনোবিদদের মতে, ডিপ্রেশন কিন্তু রাতারাতি হয়ে যায়, এমনটা নয়। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে সব কিছুরই তো একটা শুরু থাকে! ডিপ্রেশনেরও আছে। শুরু থেকেই যদি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা উপকার মিলতে পারে।
আরও শুনুন: নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে বললেন মিস ইউনিভার্স, আত্মবিশ্বাস ফেরাবেন কীভাবে?
দেখতে দেখতে দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। যাঁরা দীর্ঘকালীন মনখারাপের শিকার, বা যাঁরা বুঝতে পারছেন, ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা চেপে ধরছে ক্রমশ, এই বছরটা তাঁরা আগেভাগেই সতর্কতা অবলম্বন করুন। ওষুধ, থেরাপি এসব তো রয়েইছে। এ ছাড়াও ঘরের দশ রকম কাজের মধ্যেও কিন্তু মিশে থাকতে পারে ভাল লাগার উপাদান। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, যাঁরা দীর্ঘকালীন মন খারাপের শিকার, বা ডিপ্রেশনের একেবারে প্রথম ধাপে রয়েছেন, তাঁদের জন্য সেলফ কাউন্সিলিং কিন্তু বড় একটা জায়গা।
প্রথমেই নিজের যত্ন নিন। আলমারি থেকে একটা ভাল শাড়ি, জামা বা পাঞ্জাবি পেড়ে আনুন। আয়নার সামনে বসে পড়ুন মাঝেসাঝে। সাজিয়ে তুলুন নিজেকে পছন্দের সাজে। নিজেকে সুন্দর ভাবে দেখতে কার না ভাল লাগে! পারলে চলে যান পার্লারে। একটা ফ্যাশনেবল হেয়ারকাট করিয়ে ফেলুন। পছন্দ হলে করাতে পারেন হাইলাইটসও। নিজেকে নতুন ভাবে দেখতে গিয়ে দেখবেন কখন যেন ফিরে এসছে আপনার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস।
আরও শুনুন: মনখারাপের দরুন কাজের দফারফা! মন ভালো রাখবেন কী উপায়ে?
ভাল করে ঘুমোন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশনের ফলে সাউন্ড স্লিপ থেকে বঞ্চিত হই আমরা। প্রয়োজনে একটা আলতো মিষ্টি আলো জ্বালান ঘরে, ব্যবহার করতে পারেন সুরভিত মোমও। ব্যাকগ্রাউন্ডে আলতো স্বরে বাজুক পছন্দের গান।
পছন্দের কাজ করুন। সেটা হতেই পারে গান শোনা বা বই পড়া। ছবি আঁকতে ভালবাসলে বসে পড়ুন রংতুলি-পেনসিল নিয়ে। বাগান করতে ভাল লাগলে মাটি আর খুরপি হাতে বসে পড়ুন একরত্তি বারান্দায় বা ছাদে। নিজের হাতে লাগানো বীজকে গাছ হয়ে উঠতে দেখলে, কিংবা পছন্দের গাছে রংবেরঙের ফুল দেখে মন ভাল হতে বাধ্য। মনপসন্দ কোনও একটা খাবার বানিয়ে ফেলুন রেসিপি দেখে। রান্না কিন্তু দারুণ স্ট্রেসবাস্টার।
বাকি অংশ শুনে নিন।