একটা অতিমারি আমাদের জীবনযাপনকে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। বাড়ি থেকে অফিস, সব একসঙ্গে সামলে আমরা সকলেই প্রায় সুপারম্যান বা সুপারওম্যান হয়ে উঠেছি। যে যাই বলুক না কেন, গত দু-বছর আমাদের সিস্টেমটাকে তো অনেকটাই বদলে দিয়েছে। তাকে চট করে পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনাটাও তাই সহজ কথা নয়। বাড়িতে ঠিক মতো পরিকাঠামো না থাকায়, অফিসের কাজ ঘরে করতে গিয়ে ঘাড়ে- পিঠে ব্যাথা বাধিয়েছেন অনেকেই। আবার অফিসে ফিরে যে সেই সমস্যা পুরোপুরি মিটেছে, তেমনও নয়। এক জায়গায় একটানা বসে কাজের জন্য অনেক সময়ই নানা ধরনের ব্যথা-বেদনার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। কী করে পরিত্রাণ পাবেন সে সবের হাত থেকে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
রোগ-ব্যধি, লকডাউন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ইন্টারনেটের দাপট। সব মিলিয়ে এই অতিমারির দুটো বছর আমাদের কাছে ছিল একেবারেই অন্যরকম। এই দু-বছরে বাড়িতে থাকার সময়সীমা বেড়েছে। কমেছে রাস্তায় বেরোনো। আবার বাড়ি-অফিস দুটোকে একই সময় একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে হিমশিমও খেয়েছেন অনেকে। বাড়ি থেকে কাজ করার জন্য অনেকেরই ছিল না যথাযথ পরিকাঠামো। ফলে ঘাড়ে-পিঠে ব্যথা থেকে চোখের সমস্যা, অনেক কিছুর মধ্যে দিয়েই আমাদের যেতে হয়েছে এই সময়টায়।
যদিও করোনার প্রভাব কাটিয়ে অনেকটাই সুস্থতার পথে দেশ। ইতিমধ্যেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাটিয়ে অফিসপত্তর খোলার দিকে এগিয়েছে অনেক সংস্থাই। অনেকে আবার বেছে নিচ্ছে হাইব্রিড মোড। অর্থাৎ সপ্তাহের কয়েকটা দিন অফিসে গিয়ে কাজ, কয়েকটা দিন আবার বাড়ি থেকে।
শুধু বাড়ি বলে নয়, অফিসেও একটানা বসে কাজের জন্য নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা কমবেশি সকলেই। সপ্তাহের সবকটা দিন যথেষ্ট শরীরচর্চার সময় মেলে এমনটা নয়। আর সময় মিললেও যে সকলে এই ব্যপারটা করতে বিশেষ পছন্দ করেন, এমনটা তো নয়ই। ফলে নড়াচড়ার অভাবে আমাদের শরীরের বহু অংশেই জং লাগে। কাজের ফাঁকে বার বার উঠে হাত-পা খেলিয়ে নেওয়ার কথা বার বার বলা হলেও, ক’জনই বা মনে করে সেটা করি, বলুন তো? এই পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক রাখব কী করে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
আরও শুনুন: ভিডিও কলেই চলছে মিটিং, ঠিক কী করলে ফুটে উঠবে আপনার ব্যক্তিত্ব? রইল টিপস
বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিয়মিত ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে কয়েকটি শরীরচর্চার অভ্যাস কিন্তু এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে অনেকটাই। কী ধরনের শরীরচর্চা করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিশাল কঠিন ব্যায়াম বা যোগা করার দরকার নেই একেবারেই। বরং তার বদলে অভ্যেস করুন সহজ কয়েকটি ব্যায়াম। না কোনও জিমে যেতে হবে না এর জন্য। আপনার সঙ্গে একটি চেয়ার থাকলেই কেল্লা ফতে।
প্রথম ব্যায়াম- লেগ রেইস। অর্থাৎ চেয়ারে বসে হাঁটু দুটি পেটের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। মোট পাঁচ বার করতে হবে এই ব্যায়ামটি।
দ্বিতীয় ব্যায়াম- স্ট্রেট লেগ লিফটস। অর্থাৎ কোমর স্থির রেখে পা দুটি সোজা করে মাটি থেকে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তুলুন। আবার নামান। আবার তুলুন। একই রকম করে পাঁচ বার অভ্যাস করুন।
তৃতীয় ব্যায়াম- শোলডার স্ট্রেচিং তথা কাঁধের ব্যায়াম। একটা চেয়ারে বসে তার হেলান দেওয়ার জায়গাটা দু হাত পিছনের দিকে টানটান করে চেপে ধরুন। মোট পাঁচবার করতে হবে এই ব্যায়ামটিও।
চতুর্থ ব্যায়াম- কাফ স্ট্রেচিং। হাঁটুর নিচে পায়ের পিছনে যে এই ডিম্বাকৃতি অংশ থাকে সেই পেশি তথা কাফমাসলের ব্যায়ম। চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে হেলান দেওয়ার জায়গাটাকে শক্ত করে ধরে একটা করে পা চেয়ারের উপরে তুলুন। এই ভাবে দুই পায়ে পাঁচ বার করে এই ব্যায়ামটি করুন।
পঞ্চম ব্যায়াম- আপার বডি টুইস্ট। কাফের ব্যায়ামটাই করুন পাশ থেকে দাঁড়িয়ে। এটিও করতে হবে পাঁচ বার টানা।
ষষ্ঠ ব্যায়াম- হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ অর্থাৎ উরুর পিছনের ভাগের পেশির ব্যায়াম। চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে একটা পা কোমর থেকে সোজা চেয়ারের উপর তুলুন। তারপর হাত দুটোকে সামনে দিকে সোজা করে দেওয়ালে ভর দিন।
এবং শেষ ব্যায়াম- ব্যাক ও নেক স্ট্রেচ- এই ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ভীষণ জরুরি একটা ব্যায়াম এটি। চেয়ারটিকে দেওয়ালে ঠেসে রাখুন। তার থেকে দু হাত দূরে দাঁড়িয়ে কোমর পর্যন্ত সোজা রেখে হাত দিয়ে চেয়ারটিকে দেওয়ালের দিকে ঠেলার চেষ্টা করুন। পিঠ ও ঘাড়কে আরাম দেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই এই স্ট্রেচিংটি করা প্রয়োজনীয়। এই প্রত্যেকটি ব্যায়ামই করতে হবে প্রতিদিন পাঁচ বার করে।
আরও শুনুন: ভাল চুলের গোড়ার কথা পুষ্টি! শুনে নিন ভাল চুল পেতে কী কী খাবেন?
তাছাড়া ২০-২০-২০ নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানেন নিশ্চয়ই। চিকিৎসকেরা জানান, চোখ ও শরীরকে আরাম দিতে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ল্যাপটপ বা স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কোনও জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতে হবে। তাতে চোখের স্ট্রেস কিছুটা কমে। আর এই কয়েকটা ব্যাপার নিয়মিত মেনে চললেই পশ্চারজনীত সমস্যা থেকে রেহাই মিলতে পারে অনেকটাই।
দুবছরের এই বদলের প্রভাব থেকে শরীর ও জীবনকে পুরনো জায়গায় ফেরাতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। কাজের ফাঁকে তাই শরীরের জন্য বের করে নিন সামান্য একটু সময়। সে সময়টায় যদি নিজেকে আরেকটু বেশি যত্ন করা যায় তাহলে মন্দ কী! আর শরীর ভাল থাকলে দেখবেন কাজের মানও বেড়ে গিয়েছে অনায়াসেই।