পর্নছবিতে বরাবরই দেখানো হয় সঙ্গমের সময় যন্ত্রণা পাচ্ছেন মহিলারা। একদিকে তাঁদের শীৎকারে মিশে আছে তৃপ্তি, অন্যদিকে মুখভঙ্গি বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা যন্ত্রণা পাচ্ছেন তাঁরা। আর এইসব দৃশ্য দেখে অনেকেই মনে করেন যৌনতায় স্রেফ মহিলারাই তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করছেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই? নাকি সঙ্গমের সময় একইভাবে যন্ত্রণা পান পুরুষরাও? আসুন শুনে নিই।
যৌনসঙ্গমে মত্ত যুগল। পর্ন ছবিতে এমন দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক। তবে সেক্ষেত্রে ক্যামেরায় বেশিরভাগ সময়টাই দেখা যায় নারীদেহ। স্রেফ উন্মুক্ত বক্ষ কিংবা যোনি নয়, সঙ্গমের সময় মহিলাদের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়াও অনেকেরই যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে থাকে শীৎকারের শব্দ। সবমিলিয়ে পর্নছবি থেকে অনেকেই এমনটা ধরে নেন, সঙ্গমের সময় স্রেফ যন্ত্রণা পাচ্ছেন মহিলারাই।
কিন্তু বাস্তবে এমনটা মোটেও হয় না। প্রথমবার সঙ্গমে যন্ত্রণা পাওয়া স্বাভাবিক। তবে তা এমন নয়, যতটা পর্ন ছবিতে দেখানো হচ্ছে। বাস্তবে যন্ত্রণার সঙ্গে মিশে থাকে অদ্ভুত পরিতৃপ্তি। তাই যন্ত্রণা হলেও তাই কেউই সেভাবে প্রকাশ করতে চান না। আর নিয়মিত যৌনতায় অভ্যস্ত তাঁদের কথা না ধরাই ভালো। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যৌনতার জেরে তাঁদের ব্যাথার অনুভূতি হয় না বললেই চলে। তবে পর্ন ছবিতে এমনটা একেবারেই দেখানো হয় না। সেখানে যৌন সঙ্গম আরও উত্তেজক করে তোলার জন্য এমন অনেক কিছুই করা হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। পাশাপাশি আরও একটা বিষয় পর্ন ছবিতে ব্রাত্য বললেই চলে। তা হল পুরুষের প্রসঙ্গ। ক্যামেরায় মূলত নারী শরীর দেখানো হয়, তাই তাঁর যন্ত্রণা তাঁর তৃপ্তি এইসবই দেখতে পান দর্শক। সুদর্শন পুরুষ হলে তাও কিছুটা দেখানোর সুযোগ থাকে, সাধারণ কোনও পুরুষ অভিনেতা সঙ্গম করলে তাঁর ছবি কখনই বারবার স্ক্রিনে দেখা যায় না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্গমের জেরে পুরুষরাও যন্ত্রণা পেতে পারেন এই ধারণা অনেকেরই নেই। বিশেষত যারা যৌনতা বলতে পর্ন ছবিকেই সারবত্তা মনে করেন, তাঁরা বাস্তবে যৌনতা না করা অবধি কোনওভাবেই বুঝতে পারেন না, সঙ্গমের সময় পুরুষদের কী অবস্থা হয়।
আরও শুনুন: ৫০ জন পুরুষ ব্যর্থ! অথচ ৫ সেকেন্ডেই চূড়ান্ত যৌনসুখ পেলেন মহিলা, কী সেই ‘সিক্রেট’?
চিকিৎসকদের মতে, সঙ্গমে নারী পুরুষ উভয়ই যেমন পরিতৃপ্ত হন, তেমনই যন্ত্রণার আশঙ্কাও থাকে দুজনের ক্ষেত্রে। তায় নারীদের ক্ষেত্রে প্রথমবার যৌনমিলনের পর যন্ত্রণার অবকাশ কিছুটা হলেও কমে। কিন্তু পুরুষদের তা হয় না। পুরুষ যৌনাঙ্গ যথেষ্ট সংবেদনশীল, তাই সঙ্গমের সময় সামান্য অসাবধানতায় যথেষ্ট ব্যাথা লাগতে পারে সেখানে। এছাড়া সঙ্গমের সময় যোনি অঞ্চল যদি শুষ্ক থাকে , তবে বারংবার ঘর্ষনে আঘাত লাগতে পারে পুরুষ যৌনাঙ্গে। তাই এভাবে দীর্ঘক্ষণ সঙ্গমে ব্যাথা পাওয়াই স্বাভাবিক। বিশেজ্ঞরা এই কারণে বিশেষ তরল বা লুব্রিক্যান্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সঙ্গমের সময় কোনও পুরুষ যদি সঠিক লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার না করেন, তাহলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে পারেন। আবার সঙ্গমের সময় অনেকেরই মুখমেহনের অভ্যাস থাকে। এক্ষেত্রেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলেই মনে করেন চিকিৎসকেরা। কোনওভাবে মুখমেহনের সময় যদি যৌনাঙ্গে দাঁতের আঘাত লাগে, তাহলে রীতিমতো যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে পুরুষকে। এছাড়া প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যা তো রয়েছেই। একটা বয়সের পর এই সমস্যা পুরুষদের মধ্যে স্বাভাবিক। যা অবশ্যই প্রভাব ফেলতে পারে তাঁর যৌনজীবনে। পাশাপাশি, যোউন সংক্রামক রোগ তো রয়েছেই। কোনও পুরুষ যদি এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে অবশ্যই তার প্রভাব পড়ে যৌনাঙ্গে। ফলে সঙ্গমের সময় তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে। সবশেষে বলতে হয় নিরোধের কথা। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই সঙ্গমের সময় নিরোধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কিন্তু এর থেকেও হতে পারে মারাত্মক সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ কোনও নিরোধ ব্যবহার করে নানা রকম সমস্যায় পড়েন পুরুষরা। যৌনাঙ্গে ইনফেকশন সহ নানা অসুবিধা দেখা দিতে পারে নিম্নমানের নিরোধ ব্যবহার করলে। আর সেক্ষেত্রে সঙ্গমের সময় যন্ত্রণা ভোগ করাও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে সঙ্গমের সময় শুধু মহিলা নন, পুরুষদেরও যন্ত্রণা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। ঠিক কী কারণে যন্ত্রণা হচ্ছে তা বুঝতে না পারলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। তবে সুস্থ স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগ করতে পারবেন নারী পুরুষ সকলেই।