সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে ওমিক্রনের লক্ষণ অনেকেই আলাদা করতে পারছেন না। তাই টেস্ট করিয়ে দেখে নিচ্ছেন নেগেটিভ রেজাল্ট আসছে কি-না। সে ভালো কথা। তবে, এই ওমিক্রন আবহে সর্দি-কাশি হওয়া নাকি শাপে বর! বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত অনেকটা সেরকমই। আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনে নিই আমরা।
এক ওমিক্রনে রক্ষে নেই, সর্দি-কাশি দোসর। সিজন চেঞ্জের এই সময়টায় মানুষ নাজেহাল। সাধারণত সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগার প্রকোপ তো থেকেই থাকে। কিন্তু এবার আবার বাড়তি ভয়, এইসব লক্ষণ যখন দেখা যাচ্ছে, তখন ওমিক্রন নয়তো? একবার পরীক্ষা করে নিলে তবে নিশ্চিন্তি। অনেকের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তবে এরকম নাজেহাল দশার কিছু ভালো দিকও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় যাঁরা সর্দি-কাশিতে ভুগছেন, তাঁরা করোনার নানা ভ্যারিয়েন্টকে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত কয়েক কদম এগিয়েই থাকছেন।
আরও শুনুন: কবে থামবে ওমিক্রন ঝড়! তৃতীয় ঢেউ শেষের সময় জানালেন বিশেষজ্ঞরা
সম্প্রতি প্রখ্যাত ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় এই গবেষণার বিষয়টি সামনে আসে। গবেষকরা মোট ৫২ জন ব্যক্তির উপর পরীক্ষাটি করেন। এখনও টিকাকরণ হয়নি এরকম ব্যক্তিদেরই বেছে নেওয়া হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। উপরন্তু তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। সাধারণত, আমাদের শরীর যে কোনওরকম সংক্রমণ রুখে দেয় টি-সেলের মাধ্যমে। এই বিশেষ প্রকারের শ্বেতকণিকাই মানুষের শরীরের অতন্দ্র প্রহরী বলা যায়। গবেষকরা খেয়াল করে দেখেছেন, ওই ৫২ জন ব্যক্তির মধ্যে যাঁরা আক্রান্ত হননি, তাঁদের শরীরে এই টি-সেলের সংখ্যা অনেক বেশি। সাধারণ সর্দি-কাশির ফলে শরীরে যে টি-সেল জন্ম নেয়, তা করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে পারে, এমন ইঙ্গিতই মিলছে এই গবেষণা থেকে। গবেষকরা বলছেন, এই টি-সেল এতটাই ক্ষমতাসম্পন্ন যে তা শুধু সারফেসের স্পাইক প্রোটিনকে নয়, ভাইরাসের ভিতরের প্রোটিনকে আক্রমণ করে। বিজ্ঞানীরা যখন প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছেন, তখন তাঁদেরও লক্ষ্য থাকে মূলত এটাই। অর্থাৎ ভাইরাসকে ভিতর থেকে আক্রমণ করে শেষ করে দেওয়া। সেই কাজটি করতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে মানুষের শরীর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, মানব শরীরের টি-সেল। নতুন এই গবেষণার তথ্য তাই ভ্যাকসিন তৈরিতেও বড় প্রভাব ফেলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরও শুনুন: মা ভ্যাকসিন নিলে মাতৃদুগ্ধেই কোভিডের অ্যান্টিবডি পাবে শিশু, জানালেন গবেষকরা
এর আগেও এই স্বাভাবিক প্রতিষেধক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওমিক্রনে বহু মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ফলে সাধারণ ভাবে শরীর তার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাজিয়ে তুলবে, এমনটাই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। শরীরের মেমরি সেল এই আক্রমণের স্মৃতি ধরে রাখবে। পরবর্তীকালে আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে, এই কোষ সক্রিয় হয়ে উঠবে, এবং শরীরকে প্রতিরোধের জন্য তৈরি করবে। এইভাবেই ক্রমে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে করোনাকে রুখে দেওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীদের আশা। নয়া এই গবেষণাও সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে, সেই ঘটনা যে দ্রুত সম্ভব হবে না তা বলাই বাহুল্য। স্বাভাবিক প্রতিষেধক করোনাযুদ্ধে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের অবশ্য ‘ধীরে চলো’ নীতি। যেহেতু এই গবেষণার স্যাম্পল সাইজ খুবই ছোট অর্থাৎ মাত্র ৫২ জনের উপর করা হয়েছে পরীক্ষা; তাই এখনই এ ব্যাপারে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানী চিকিৎসকদের গরিষ্ঠ অংশের মত, মানুষের শরীর নিজের মতো করে প্রতিরোধ তো করবেই; তবে শুধু তার অপেক্ষায় বসে থাকা চলবে না। যথাযথ টিকাকরণই যে করোনাজয়ের ব্রহ্মাস্ত্র, এ বিষয়ে আপাতত দ্বিমত পোষণের কোনও অবকাশই নেই।