সেই যে গল্পে নতুন জামাই দুপুরবেলায় লজ্জা করে না-খাওয়া খাবারগুলি রাতে খেতে গিয়েছিল, তার ফল কী দাঁড়িয়েছিল মনে আছে তো? ভুল খাবার খাওয়ার দরুন তার আর দুর্দশার শেষ ছিল না। ওই জামাইয়ের মতো ভুল খাবার না খেলেও, কোনও কোনও সুস্বাদু খাবারও কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং রাতে যে সবরকম খাবার না খাওয়াই ভাল, তা বলাই বাহুল্য। সুস্থ থাকতে রাতে কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলাই ভাল, আসুন, জেনে নেওয়া যাক।
সারাদিনের ইঁদুর দৌড়। কাজের চাপ। বাড়ির বাইরে থাকা। সব মিলিয়ে কোনওমতে খাওয়া সারতে হয়। কিন্তু রাতের কথা অন্য। সারাদিন পরে তখনই বাড়িতে আয়েশ করে খাওয়ার সুযোগ মেলে। তাই কাজের দিনগুলোতে লাঞ্চের বদলে ডিনারের মেনুতেই জোর পড়ে বেশি। কিন্তু সেইসব সুস্বাদু খাবারদাবার মনকে শান্তি দিলেও, শরীরকে ভাল রাখছে কি না ভেবে দেখেছেন তো? রাত করে বেশি তেল মশলা দেওয়া খাবার খেলে আপনার শরীর কিন্তু আপত্তি জানাতেই পারে। দেখা দিতে পারে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা। রাতে খাবারের অনিয়মের জেরে হতে পারে অনিদ্রার সমস্যাও। সুতরাং শুনে নেওয়া যাক, রাতে কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলাই ভাল।
আরও শুনুন: রোজের খাবারেও লুকিয়ে ঘাতক! কী কী খেলে লিভারের সর্বনাশ, জেনে নিন
রাতে না খাওয়ার তালিকায় একেবারে প্রথমেই থাকবে কফি জাতীয় পানীয়। যেখানে ক্যাফিন থাকে বলে চট করে ঘুম আসে না। বিশেষ করে রাত জেগে কাজ করতে হলে অনেকেই ভরসা রাখেন কড়া কফির উপরে। একই কারণে চকোলেটও খেয়ে ফেলেন কেউ কেউ। কিন্তু এই দুই-ই ডেকে আনতে পারে স্থায়ী অনিদ্রার সমস্যা। আর চকোলেট কিংবা চটজলদি মুখরোচক ভাজাভুজি, রাতে খিদে পেলে যাদের দিকে হাত চলে যায় সহজেই, তারা কিন্তু শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে ওস্তাদ।
আরও শুনুন: ব্রণর সমস্যা পিছু ছাড়ছে না! জরায়ুতে সিস্টের লক্ষণও হতে পারে, সতর্ক থাকুন
আসলে দিনের খাবার খাওয়ার পর চলাফেরা, কাজকর্মের সুবাদে পরিপাকের সমস্যা হয় না। কিন্তু রাতের খাবার খাওয়ার পরই যেহেতু শুয়ে পড়ার পালা, তাই হজমের কথা মাথায় রেখেই খাদ্যতালিকা বেছে নেওয়া উচিত। রাতে রেড মিট এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ বরং সহজপাচ্য। কেবল মশলাদার খাবারই নয়, আটা-ময়দার তৈরি যে কোনও খাবারও হজম করতে বেশ সময় লাগে। সহজপাচ্য নয় সব আনাজপাতিও। শাক, ফুলকপির মতো সবজিগুলি রাতে খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রাতের খাবারে সবজি মাস্ট, কিন্তু সব সবজি নয়, এমনটাই বলেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই খাবারের প্লেটে স্যালাড রাখেন দুবেলাই, বিশেষত যাঁরা রোগা হওয়ার জন্য ডায়েট মেনে চলেন। কিন্তু স্যালাডে থাকা শসা খাবার হজম করালেও নিজে হজম হয় না। তা ছাড়া শাকসবজিতে থাকা ফাইবার হজম হতেও সময় লাগে। সুতরাং ডিনারে কাঁচা স্যালাড না খেয়ে সামান্য অলিভ অয়েলে সতেঁ করে নেওয়া যেতে পারে। ডেসার্টের ক্ষেত্রেও সংযত থাকাই ভাল। বিশেষত রাতে দই খেলে অনেকেরই হজমের সমস্যা হয়। যাঁদের সর্দি-কাশির ধাত আছে, তাঁদের রাতে টক দই খেতে নিষেধ করা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে।
রাতে কোনও কোনও খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল এ কথা ঠিক, তবে পরিমাণমতো রাতের খাবার না খেলে কিন্তু লাভের চেয়ে ক্ষতির ভাগ বেশি। তা ছাড়া খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে না পড়ে কিছুক্ষণ হাঁটলেও শরীর ভাল থাকবে। রোগ সারানোর চেয়ে রোগ না হতে দেওয়াই তো ভাল, তাই না?