করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কমলেও সংক্রমণের হার কিন্তু আকাশছোঁয়া। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছেন করোনা আক্রান্ত। কারওর উপসর্গ রয়েছে, কারওর বা নেই। জ্বর-সর্দি, কাশির মতো নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই মিলছে লম্বা প্রেসক্রিপশন, আর তাতে একগুচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের তালিকা। তা অসুখ হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। আর অ্যান্টিবায়োটিক মাত্রই রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে নানা ধরনের সমস্যার পাশাপাশি যৌনাঙ্গের সংক্রমণেও ভুগছেন অনেকে। কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? শুনে নিন।
করোনার জেরে নানা ধরনের সমস্যা তো রয়েইছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, হাতে-পায়ে-পিঠে-কোমরে যন্ত্রণা, মাথা ব্যথা- এসব তো লেগেই ছিল। করোনার থেকে সেরে উঠেও পিছু ছাড়ছে না নানাবিধ সমস্যা। করোনা আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই দুর্বল করে দিচ্ছে, ফলে তার একটা প্রভাব তো রয়েইছে। তার উপরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করছে কোভিড পর্বে খাওয়া একাধিক ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক মাত্রই তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। মাথা ব্যথা, গা বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি- এসবের পাশাপাশি আজকাল অনেকেই মুখোমুখি হচ্ছে নতুন সমস্যার। কোভিড থেকে সেরে উঠে অনেক রোগীই জানাচ্ছেন, ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যৌনাঙ্গে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: গলা ব্যথার দরুন খাওয়ায় টান, এদিকে শরীর দুর্বল… কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অনেকেরই যৌনাঙ্গে অস্বস্তিভাব, চুলকানি, ব়্যাশ এ ধরনের বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞদের মত, অ্যান্টিবায়োটিকসের ওভারডোজই এই সমস্যার জন্য দায়ী। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে থাকা ব্যাকটিরিয়াদের মেরে ফেলে। তার মধ্যে খারাপ ব্যাকটিরিয়া যেমন থাকে, তেমনই থাকে ভাল ব্যাকটিরিয়াও। এই ভাল ব্যাকটিরিয়ারা আমাদের যৌনাঙ্গকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিবায়োটিকসের প্রভাবে অনেক সময়ই যৌনাঙ্গের পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে দেখা দিতে পারে একাধিক সমস্যা। এমনিতেই যৌনাঙ্গের যে কোনও ধরনের সংক্রমণই অত্যন্ত কষ্টকর এবং অস্বস্তির তো বটেই। কী কী উপসর্গ দেখে চিনবেন এই সমস্যাকে।
যোনীদ্বারে জ্বালাভাব, অস্বস্তি, যৌনাঙ্গ সংলগ্ন ত্বকে ব়্যাশ, চুলকানি বা জ্বালা, শ্বেতস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব ও সহবাসের সময় জ্বালা ভাব- এ সবই হতে পারে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশনের উপসর্গ। তেমন বুঝলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
আরও শুনুন: নিভৃতবাসের মেয়াদ ফুরোবার পরেও রিপোর্ট পজিটিভ! এক্ষেত্রে কী করণীয়?
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকস খাওয়ার ফলে আরও বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে শরীরে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শুধু যৌনাঙ্গেরই নয়, সারা শরীরের সমস্ত ভাল ব্যাকটিরিয়াকেই নষ্ট করে ফেলে অ্য়ান্টিবায়োটিক। যার প্রভাব সামগ্রিক ভাবে আমাদের শরীরের উপরেই পড়ে।
অ্যান্টিবায়োটিকের ফলে তলপেটে যন্ত্রণা, জ্বর, মাথা ধরার পাশাপাশি দেখা দিতে পারে অনিদ্রার সমস্যা। এমনকি মাথা ঘোরা ও ক্লান্তিভাবও হতে পারে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
শরীরের জন্য উপকারী উপাদান মাইক্রোবিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় অ্যান্টিবায়োটিকস, যার প্রভাব পড়ে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমে।
অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ম্যাজিকের মতো রোগ সারিয়ে ফেলতে ওস্তাদ, তেমনই শরীরে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও ফেলে যায় এই ওষুধগুলি। অনেকেই নিজেরা ডাক্তারি করে টপাটপ অ্যান্টিবায়োটিক মুখে পুরে দেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যতটা সম্ভব অ্যান্টিবায়োটিক কম ব্যবহার করুন। তেমন প্রয়োজনে ওষুধ খেতে হবে বৈকি, তবে সেই সিদ্ধান্ত নিন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই।