প্রত্যেক মাসে মহিলাদের ঋতুস্রাব কোনও রোগ বা লুকোচুরির বিষয় নয়। খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া, যা মহিলাদের জীবনে অনেকটা সময় জুড়ে থাকে। মাসের ওই নির্দিষ্ট দিনগুলোয় অফিসেও থাকতে হয় অনেকটা সময়। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তাই ব্যবহার করুন মেনস্ট্রুয়াল কাপ।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিন– জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের দৌলতে এ-কথা এখন পুরুষদের অনেকেই জানেন। দিনকাল বদলেছে, নারীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়েও এসেছে দৃষ্টিভঙ্গির বদল। বেড়েছে সচেতনতা। এই সেদিনও মেয়ে ঋতুমতী হলে শুরু হয়ে যেত হাজারও সামাজিক বিধিনিষেধ। এই সময় এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই– এসব তো ছিলই। স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল দেওয়া হত সামান্যই। তখন ভরসা বলতে ছিল বড়জোর পুরনো ছেঁড়া শাড়ি। সেটাকেই কেচে নেওয়া হত ব্যবহারের পর। এমনকী পরের মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলোর জন্য লুকিয়েও রাখা হত। কারণ বাড়ির পুরুষদের চোখে পড়লে লজ্জার একশেষ!
সেই সময় বদলেছে। সঙ্গে বদলেছে মানসিকতাও। সচেতনতা, আধুনিকতার অভিধানে যোগ হয়েছে ‘হাইজিন’ শব্দটি। আর তাই এখন মহিলামহলে ব্যাপকভাবেই জায়গা করে নিয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন।
তবে সময় কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি। আধুনিকতার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাসের ওই দিনগুলোয় মহিলাদের ক্রমশ ভরসার জিনিস হয়ে উঠছে মেনস্ট্রুয়াল কাপ।
কী এই মেনস্ট্রুয়াল কাপ?
জিনিসটা সিলিকনের তৈরি, দেখতে ফানেলের মতো। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারের থেকে এর ধরনটা একেবারেই আলাদা। এটি বাইরে থেকে ব্যবহার করা হয় না, বরং ভাঁজ করে যোনিপথ দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়। সেটি তখন ছাতার মতো খুলে গিয়ে জরায়ুর মুখে কাপের মতো আটকে যায়। ঋতুরক্ত এই কাপের মধ্যেই জমা হয়। টানা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা এই কাপ ব্যবহার করা যায়। এতে বারবার প্যাড বদলানোর ঝক্কি থেকেও রেহাই মেলে।
তবে হ্যাঁ , এই কাপ ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে সাইজের দিকে। যাঁরা অবিবাহিত, এবং যাঁরা মা হয়েছেন, তাঁদের কাপের সাইজ কিন্তু এক নয়। আপনার কাপের সাইজ ঠিক কী হবে, তা অবশ্যই ডাক্তারের থেকে জেনে নিতে হবে। প্রথমবার একটু অসুবিধা হলেও ব্যবহার করতে করতে আপনিও স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠবেন।
কী ভাবছেন? এতদিনের অভ্যাস প্যাড ব্যবহার করা, সেটা ছেড়ে হঠাৎ মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে যাবেন কেন? সিলিকনের তৈরি একটা জিনিস শরীরের ভিতরে এতটা সময় রেখে দেওয়াটা কি নিরাপদ বা আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত?
আরও শুনুন : খালি পেটেই চায়ে চুমুক! বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
ঠিক এখান থেকেই আমাদের একটু পিছনে ফিরে দেখতে হবে। সেই সময় আমাদের বাড়ির মা-ঠাকুমা মনে করতেন পুরনো ছেঁড়া শাড়িই সবথেকে নিরাপদ। কারণ ব্যবহারের পর বিশ্বস্ত ডিটারজেন্টে তা কাচা হচ্ছে। এই ধারণাটা যে কতটা ভুল ছিল আজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারও মহিলাদের জন্য নিরাপদ, কিন্তু কতটা নিরাপদ সেটা আমরা জানি না। ভিজে প্যাড বারবার বদলানোও বেশ হ্যাপা। মেনস্ট্রুয়াল কাপের সবথেকে বড় সুবিধা, টানা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। জামাকাপড়ে দাগ লাগার ভয় নেই। ভিজে ভাব না থাকায় অস্বস্তি বা ইনফেকশনের ভয়ও কম।
আরও শুনুন : পাড়ার রক থেকে Social Media: রুখে দিন Body Shaming-এর দাপট
তা ছাড়া স্যানিটারি প্যাডের দাম যত কমই হোক, প্রত্যেক মাসেই তা কিনতে হবে। সেখানে মেনস্ট্রুয়াল কাপ একবার কিনলে টানা ৮ থেকে ১০ বছর অবধি ব্যবহার করতে পারেন। কাপের সাইজ আপনার পিরিয়ডের ফ্লো অনুযায়ী কিনতে হবে। আর প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এতে কোনও কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক উপকরণ থাকে না। বিষক্রিয়া বা ব্যাকটিরিয়াঘটিত যৌনব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এটি পরিবেশবন্ধুও বটে।
তাই সচেতনতা বাড়ান। নিজেকে আরও বেশি পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। কারণ পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্ন থাকাটাই সবথেকে জরুরি।