ধর্ম নিয়ে বারে বারেই বিতর্ক উসকে ওঠে দেশে। কোন মানুষ কীভাবে ধর্মাচরণ করবেন, তাঁর সেই ব্যক্তিগত অভ্যাস নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েন না অনেকেই। তেমনই কটাক্ষের মুখোমুখি হয়ে এবার সপাট জবাব দিলেন বলি অভিনেত্রী সারা আলি খান। তাঁর মন্দিরে যাওয়া নিয়ে নেটদুনিয়ায় ট্রোলের বন্যা বয়েছে ইতিমধ্যেই। তার প্রেক্ষিতেই এবার মুখ খুললেন নবাব-কন্যা। আর ধর্মের গোঁড়ামির বাইরে বেরিয়ে নয়া প্রজন্ম কীভাবে ধর্মকে দেখছে, সে কথারই যেন আভাস মিলল তাঁর কথায়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মা হিন্দু। কিন্তু বাবা মুসলিম। সেই সূত্রে পতৌদির নবাব পরিবারের কন্যা সারা আলি খান। আর তাঁর সেই পরিচয়টিকে টেনে এনেই তাঁর ধর্মাচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি নেটিজেনদের একাংশ। নিজের ছবি ‘জরা হটকে জরা বাঁচকে’-র প্রচারের সময় বারবার বিভিন্ন মন্দিরে গিয়েছেন অভিনেত্রী। যোগ দিয়েছেন প্রার্থনায়। আর সেই বিষয়টি নিয়েই আপত্তি ওই নেটিজেনদের। আর এবার তাঁদের সেই কটাক্ষের জবাবেই মুখ খুললেন সারা। সাফ জানালেন, ঈশ্বরের আরাধনাই মূল কথা। ঈশ্বরের কোন রূপের আরাধনা করা হল, তাতে কী এসে যায়!
আরও শুনুন: শ্রেয়া বা সুনিধি নন, দেশের কোন প্লে-ব্যাক গায়িকার রয়েছে ২০০ কোটির সম্পত্তি?
এর আগেও সারা জানিয়েছিলেন, শিবের ভক্ত তিনি। ‘কেদারনাথ’ ছবির শুটিংয়ের জন্য প্রথমবার কেদারনাথে যেতে হয়েছিল তাঁকে। পরে সেখানে তো আবার গিয়েছেনই, পাশাপাশি কখনও কামাখ্যা মন্দিরে, কখনও তুঙ্গনাথ মন্দিরে, কখনও আবার আজমির শরিফেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কোনও শহরে গেলেই সেখানকার ধর্মস্থানগুলি দেখতে ভুল হয় না সারার। ভক্তিভরে সেসব স্থানে পূজা বা প্রার্থনাতেও তিনি অংশ নেন সবসময়েই। এবার ছবির প্রচারের সময়েই উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে গিয়েছিলেন সারা। ছবিটি বক্স অফিসে সাফল্য পাওয়ার পর ফের মহাকালের আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই সময়ে শাড়ি পরে, আঁচলে মাথা ঢেকে পূজা দেন তিনি। এমনকি কপালে তিলক কেটে কীর্তন করতেও দেখা যায় সইফ-কন্যাকে। এরপরেই সারার উদ্দেশে কটাক্ষের বান ডাকে নেটদুনিয়ায়।
আরও শুনুন: মুখেই হিন্দুপ্রেম! স্বার্থ মেটাতে মুসলিম উকিলের কাছেই ছুটেছিলেন কঙ্গনা
তবে এইসব কটাক্ষকে যে তিনি গুরুত্ব দিতে আদৌ রাজি নন, সে কথাই এবার বুঝিয়ে দিলেন সারা। এমনিতে অনেকসময়ই চুপ করে থেকে ট্রোল উপেক্ষা করেন অভিনেত্রী। কিন্তু এই ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে সারা জানিয়ে দিয়েছেন, “মানুষের যা মনে হয় তাই বলে, যা মনে হয় তাই ভাবে, এতে আমার কিছু করার নেই।” কিন্তু তার জন্য নিজের অভ্যাস পালটে ফেলতে তিনি নারাজ। যে কোনও ধর্মস্থানে গেলেই তিনি মানসিক শক্তি পান বলে মনে করেন সারা। আর তাঁর ধর্মাচরণ, প্রার্থনা, সবকিছুর মূল কথা ওই ইতিবাচক অনুভূতিই। তাই স্রেফ ধর্মের রং দেখে নিজের বিশ্বাসের জায়গা বদলে ফেলতে চান না সারা আলি খান। আসলে ধর্ম কথার মূল অর্থ তো ধারণ করা। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ কেবল সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ঈশ্বরবিশ্বাসের মধ্যে দেওয়াল তুলে দেন। সেই কট্টর মনোভাবকে পেরিয়ে ঈশ্বরকে এমন এক ইতিবাচক শক্তি হিসেবেই দেখতে চাইছেন নতুন প্রজন্মের অনেকে। একে অন্যের ধর্মাচরণের প্রতি সহিষ্ণুতার বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, একাধিক মতকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে ধর্ম। আর সেই ভাবনারই এক অন্যরকম ইঙ্গিত মিলছে সারার আচরণে।