‘শোলে’ ছবিতে জয়-বীরুকে নিয়ে যত কথা হয়, গব্বর সিং-এর ক্রেজ হয়তো তার চেয়েও বেশি। আবার, কাঞ্চা চিনা না থাকলে কি অগ্নিপথে এতখানি জনপ্রিয়তা পেতেন বিজয় দীননাথ চৌহান? আসলে, নায়ক-খলনায়কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো তখনই জমে, যখন দুটি চরিত্রের গুরুত্বই তুল্যমূল্য হয়। সেখানে ভিলেন যত বেশি শক্তশালী হবেন, তাঁকে হারিয়ে তত বেশি খ্যাতি জুটবে নায়কের কপালে। কিন্তু ভিলেন-ই যদি হন প্রিয় নায়ক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক বলিউডের এমনই কিছু হিরোর গল্প, যাঁরা জীবনে একবার অন্তত ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করার লোভ সামলাতে পারেননি। কারা সেই অভিনেতারা?
গল্পের খাতিরে নায়কের হাতে তিনি যতই মার খান, ভিলেনের উপস্থিতি ছাড়া কিন্তু গল্প একেবারে বেরঙিন। তাঁদের জীবন না কোনও সরলরেখায় চলে, না বাঁধা পড়ে কোনও ছকে। নায়কের একরঙা ভালমানুষির উলটোদিকে একাধিক শেডের চরিত্র নিয়ে এসে দাঁড়ান তাঁরা। আর তাই এইরকম কালারফুল চরিত্রে অভিনয় করার হাতছানি ছাড়তে পারেন না তথাকথিত নায়কেরাও।
আরও শুনুন: ঠিক যেন ‘শোলে’র ধর্মেন্দ্র! বউ বাপের বাড়িতে, অভিমানে ১০০ ফুট উঁচু টাওয়ারের মাথায় স্বামী
যেমন ধরুন, বলিউডের কিং খান। শাহরুখ খানের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়ানো আইকনিক পোজটি। দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিনয় জীবনে অসংখ্য ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউডের বাদশা। কিন্তু জানেন কি, তিনিও একবার অভিনয় করেছিলেন খলনায়কের চরিত্রে? ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডর’ ছবিতে দুর্ধর্ষ ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শাহরুখ। সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন এক পজেসিভ প্রেমিকের ভূমিকায়। এমনকি নিজের প্রেমিকাকেই কিডন্যাপ করেছিলেন চরিত্রের স্বার্থে।
এরপর বলতেই হয় অমিতাভ বচ্চনের কথা। শোলে সিনেমায় গব্বরের সঙ্গে লড়াই করে দর্শকের মন জয় করেছিল জয় ওরফে আমিতাভ বচ্চন।আবার সেই বচ্চন সাহেব স্বয়ং অভিনয় করেছেন এক চরম খলনায়কের চরিত্রেও। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া আঁখে সিনেমাতে তাঁকে দেখা যায় নেগেটিভ চরিত্রে। পর্দায় তাঁকে বিপুল শাহ্ নামের দুরন্ত ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখে এক্কেবারে অবাক হয়ে যান দর্শক মহল।
আরও শুনুন: স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর উপার্জনই বেশি, বলিউডের বেতন বৈষম্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন এই তারকা দম্পতিরা
একইসঙ্গে পিছিয়ে নেই নায়িকারাও। বলিউডের গ্ল্যাম গার্ল প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কথাই ধরা যাক। হাজার হাজার যুবকের হার্টথ্রব এই নায়িকা রোম্যান্সের পাশাপাশি নেগেটিভ চরিত্রেও সিদ্ধহস্ত। ২০০৪ সালে ‘ঐতরাজ’ ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল এক স্বার্থপর অহংকারী নারীর চরিত্রে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে যিনি বেমালুম এক যুবককে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেন। পর্দায় তাঁর এমন রূপ দেখে ফ্যানবয়রা যতই হতাশ হন না কেন, এই সিনেমা তাঁর বলিউড যাত্রাপথ আরও মসৃণ করে দিয়েছিল।
ফিরে আসা যাক বলিউড অন্যতম সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের কথায়। এখনও অর্ধেক বয়সি নায়িকাদের সঙ্গে জমিয়ে রোমান্স চালাচ্ছেন এই ‘খিলাড়ি’। কিন্তু রোম্যান্স অ্যাকশান কমেডির পাশাপাশি তিনি যে নেগেটিভ চরিত্রেও তুখোড় অভিনয় করতে পারেন তা বোধহয় অনেকেই জানতেন না। ২০০১ সালে ‘আজনবি’ সিনেমায় ভিকি চরিত্রের মধ্যে দিয়েই খল চরিত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। সিনেমায় হওয়া একটি খুনের মাস্টারমাইন্ড ছিল ঠান্ডা মাথার এই চরিত্রটি। আবার সইফ আলি খানের কথাই ধরুন। প্রথমদিকে হাসিখুশি ইজিগোয়িং রোমান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতেই দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু ওমকারা সিনেমায় দুর্ধর্ষ ভিলেন ল্যাংড়া ত্যাগীর ভূমিকায় অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ছোটে নবাব।
তালিকার শেষে রয়েছেন আরও এক নায়িকা। কিং খানের বিপরীতে পর্দায় তাঁকে বরাবরই রোম্যান্স কুইন হিসেবেই আবিষ্কার করেছেন দর্শকেরা। হ্যাঁ, কাজল-শাহরুখ জুটি বোধহয় এখনও বলিউডের সবথেকে চর্চিত জুটি। কিন্তু এই কাজলও একবার অভিনয় করেছেন এক চরম নেগেটিভ চরিত্রে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গুপ্ত’ ছবিতে একেবারে শেষে গিয়ে বোঝা যায় কে আসল খুনি। আর এমন খল চরিত্রটিতেই অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল কাজলকে। এই সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও পান কাজল।