সোনারোদ্দুর আর সর্ষে খেত মনে পড়লেই আজও ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে ওঠে সেই ঐতিহাসিক সুর। ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে শাহরুখের হেঁটে আসা বা কাজলের সেই ফিরে তাকানো। সেই রসায়নের কাছে আজও মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কোন ছবির কথা বলছি? তবে সেই ছবিটিতে নাকি শাহরুখ নন, এক মার্কিন হিরোকেই বেশি পছন্দ ছিল পরিচালকের? কে ছিলেন পরিচালকের প্রথম পছন্দ, শুনে নিন।
বলিউড সিনেমার ধারাপাতটাকেই বদলে দিয়েছিল নব্বই দশকের একটি ছবি। ভেঙে ফেলেছিল একের পর এক রেকর্ড। পারিবারিক ছবির মোড়কে আদ্যপান্ত একটা প্রেমের গল্প। ছিল স্বদেশের প্রতি অমোঘ টান, মনকাড়া কিছু গান আর মুহূর্ত। তবে সে সমস্ত কিছুকে পিছনে ফেলে শাহরুখ-কাজলের অনবদ্য রসায়নেই মজেছিল আমজনতা। এক হাজার সপ্তাহ টানা প্রেক্ষাগৃহ দখলে রেখেছিল সেই সিনেমা। সে সময়ে বলিউডি ছবির দুনিয়ায় যা ছিল রেকর্ড।
আরও শুনুন: স্ট্রাগল করেই মিলেছে সাফল্য, এই বলি তারকাদের লড়াইয়ের গল্প হার মানায় সিনেমাকেও
রাজ আর সিমরানের দুরন্ত প্রেম! এদিকে রাশভারী বাবা অমরিশ পুরী। যার ভয়ে কাঁপত গোটা পরিবার। মধ্যবিত্ত সংসারে আর কিছু থাকুক না থাকুক, কথার দাম তো থাকবেই থাকবে। আর সেই কথার দাম রাখতেই বাবার পছন্দ করা ছেলের গলায় মালা দিতে বিয়েতে রাজি হয় সিমরান। ভুলতে হয় লন্ডনে দেখা হওয়া সেই স্বপ্নের রাজকুমারটিকে। আর সেখানেই গল্পে ঢুকে পড়ে শাহরুখ খান। শুরু হয় ম্যাজিক। তা এই পরের গল্প তো সকলেরই জানা।
এত ক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কোন ছবির কথা বলছি। বলছি সেই আশ্চর্য রূপকথার গল্প, যার নাম ছিল ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’। রূপকথার সেই ঘোড়া ছোটানো রাজকুমারের মতোই গল্পে প্রবেশ রাজ তথা শাহরুখের। আর সেখানে ম্যাজিক তৈরি করতে কোনও কার্পণ্য করেননি তিনি।
কিন্তু সেই রাজ মলহোত্রের চরিত্রে নাকি শাহরুখ খানের কথা ভাবেনইনি ছবির পরিচালক আদিত্য চোপড়া। তার নজর ছিল পাশ্চাত্যের নায়ক টম ক্রুজের দিকে। রাজ মলহোত্রের চরিত্রটিতে অভিনয় করুন মার্কিন অভিনেতা টম ক্রুজই। তেমনটাই ইচ্ছা ছিল তাঁর। না, কোনও দেশি মুন্ডা নয়, বিদেশি জনপ্রিয় কোনও মুখকেই নিজের ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলেন আদিত্য। তবে তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন টম। তাছাড়া, এ ব্যাপারে মত ছিল না ছবির প্রযোজক যশ চোপড়ারও। ফলে শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি পরিচালকের।
কী ভাবছেন, ক্রুজের পরেই পরিচালকের দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন শাহরুখ খান। আদৌ না। বরং রাজ মলহোত্রের ভূমিকায় নবাবপুত্র সইফ আলি খানকেই দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে বিশেষ কোনও কারণবশত আদিত্য চোপড়ার প্রস্তাবটি খারিজ করে দেন সইফও। আর তাই শেষমেশ শাহরুখ খানকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল রাজ চরিত্রটির জন্য।
আরও শুনুন: সহ-পরিচালককে আবেগঘন চিঠি শাহরুখের! প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটদুনিয়া
আর শাহরুখ সেই চরিত্রটির সঙ্গে শুধু সুবিচার করেছিলেন বললে কম বলা হবে। রীতিমতো ম্যাজিক করে ফেলেছিলেন কিং খান। আজও এই ছবির জনপ্রিয়তা কমেনি একচুলও। অবাক করার মতো বিষয়, মুম্বইয়ের মরাঠা মন্দির নামে একটি প্রেক্ষাগৃহে গত ২৫ বছর ধরে চালানো হয়ে আসছে ছবিটি। লকডাউনের আগে পর্যন্ত সেই রীতিতে ছেদ পড়েনি একবারও। তবে লকডাউনের সময় সম্প্রোচার বন্ধ হলেও করোনা ফাঁড়া কাটিয়ে ফের শুরু হয়েছে স্ক্রিনিং।
পরবর্তীকালে একাধিক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এই ছবিটির সুযোগ এসেছিল দৈবাৎই। তথাকথিত প্রেমিকের চরিত্রের তুলনায় অন্য ধরনের চরিত্র করার দিকেই নাকি বেশি ঝোঁক ছিল শাহরুখের। তবে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফটাকেই বোধহয় এক লহমায় পাল্টে দিয়েছিল এই সিনেমা। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউড রোম্যান্সের বাদশা কিং খানকে।