টমবয় হাবভাব নয়, নায়িকা শিফন শাড়ির আঁচল ওড়ালে তবেই মুগ্ধ চোখে তাকাবে নায়ক। এমনটাই শিখিয়েছিল ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। আর সেই একই পরিচালকের ছবি ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কাহানি’-তে দেখা গেল, আনারকলি পরে কত্থক নাচছেন দুই পেশিবহুল নায়ক। দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় ফিরে কি নিজের স্টিরিওটাইপের দিকেই প্রশ্ন ছুড়লেন করণ জোহর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সেই রঙিন শিফন শাড়িতে নায়িকার নাচ, সেই ফ্যামিলি ড্রামা, সেই দুর্দান্ত সব লোকেশন… সব মিলিয়ে করণ জোহর আছেন করণ জোহরেই। হ্যাঁ, পপকর্ন খেতে খেতে দেখার মতো ছবি ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কাহানি’ আপাতদৃষ্টিতে সে কথাই বলবে। ইতিমধ্যেই নেপোটিজম নিয়ে করণ জোহরকে খোঁচা দিয়ে কঙ্গনা রানাউত বলে দিয়েছেন, ২৫০ কোটির ডেলি সোপ বানিয়েছেন করণ। বিদেশি ছবি ওপেনহাইমার আর বার্বি-র ট্রেন্ডকে টেক্কা দিতে পারেনি সিনেমার প্রথম দিনের বিক্রিও। এই সব কথাই সত্যি। কিন্তু করণ জোহর সুলভ যে ছবির ধারা, কিংবা বলিউডের মেনস্ট্রিম মুভির যে ছক, সেই গড্ডল প্রবাহেই কি গা ভাসিয়েছে এই ছবি? সে কথায় বোধহয় একেবারে সহমত হওয়ার উপায় রাখেননি করণ। না হলে চার্মিং মেনস্ট্রিম হিরো রীতিমতো নাচের পোশাক পরে কত্থক নাচছেন, তাও আবার আরেক পুরুষ অভিনেতার সঙ্গে, এমনটা কি তাঁর ছবিতে ভাবা যেত? আজ্ঞে হ্যাঁ। পুরুষ অভিনেতাদের ডুয়েট ব্যাপারটা নতুন নয়। কদিন আগেই দুই পুরুষ অভিনেতার ডুয়েটে ‘নাটু নাটু’ গান নিয়ে হুল্লোড় পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কিন্তু এখানে বলিউডি ধাঁচের নাচ নয়, কত্থকের মতো ক্লাসিকাল নৃত্যশৈলীতে পা মিলিয়েছেন দুই অভিনেতা, রণবীর সিং এবং টোটা রায়চৌধুরী। ‘দেবদাস’ ছবির সেই কাল্ট গান ‘ডোলা রে’, যেখানে মাধুরী আর ঐশ্বর্যর যুগলবন্দিতে বুঁদ হয়ে ছিল দর্শক, সেই গানেই নাচলেন দুই পুরুষ চরিত্র। সিনেমায় যাঁরা সম্পর্কে জামাই এবং হবু শ্বশুর। এর আগে করণ জোহরের রম-কমে গান গেয়ে, ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে প্রেমিকার মন জয়ের ছবি দেখা গিয়েছে অনেকবারই। কিন্তু নাচ তো ভারতীয় সমাজে খানিক ‘মেয়েলি’ ব্যাপার বলেই পরিচিত। এ গল্পেও টোটা বলেন, একজন পুরুষ হিসেবে নাচের প্রতি তাঁর ভালবাসাকে কেউই ভাল চোখে দেখেনি। সেখানে প্রথমবার পর্দায় কোনও মেনস্ট্রিম হিরো কত্থক নাচছেন, এমন দৃশ্য তৈরি করে করণ বলিউডের চেনা ছবিটা খানিক বদলে দিলেন বইকি।
আরও শুনুন: ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্যে ক্ষোভ! ‘ভোট দেওয়াই ভুল হয়েছে’, সাংসদ সানিকে তোপ জনতার
এমনিতে গড়পড়তা ভারতীয় সমাজ যে ছক মেনে চলে, সেই ছককেই বরাবর মান্যতা দিয়েছে করণ জোহরের ছবি। তাই ‘রিগ্রেসিভ’ তকমাও তার গায়ে আটকেই ছিল। যেমন ধরুন, ‘কভি খুশি কভি গম’ সারা ছবি জুড়েই পরিবারতন্ত্রের জয়গান গেয়েছে। ‘লক্ষ্মী বউ’ হয়ে ওঠার ইশারা দিয়েছে বারবার। সেই করণ জোহরের সিনেমাতেই কিনা এবার হবু শাশুড়ি জামাইকে বোঝালেন, মেয়েরা তো সারাজীবন তাঁদের বরের অন্তর্বাস কেচে দেন। তাহলে মেয়েদের অন্তর্বাস ছেলেদের কাছে ‘অচ্ছুত’ হয়ে থাকবে কেন? আবার নিজের স্বপ্ন, কেরিয়ার ছেড়ে স্বামী সন্তান নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেওয়া হবু শাশুড়িকে বউমা বলছেন, যুগ যুগ ধরে হয়ে এসেছে বলেই স্ত্রী স্বামীকে একতরফা সেবা করে যাবে, তার কোনো মানে নেই। স্বামীর সেবা করাটা ভালোলাগা হবে তখনই, যখন তা দু-তরফেই হবে। আবার ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-তে কাজল যেভাবে নিজেকে টমবয় থেকে বদলে নেন সুসজ্জিতা নারীতে, কবাডি খেলতে গিয়ে এককালের সেরা প্লেয়ারকে ভাবতে হয় বুকের আঁচল সরে গেল কি না, তাও তো মেয়েদের জন্য বেঁধে দেওয়া ছককে চিনিয়ে দিয়েছিল। এমনকি ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এও প্রেমিকের মন পাওয়ার সাধনা করে চলেছিলেন আলিয়া। এখানে কিন্তু বিদেশি ডিগ্রিধারী নায়িকা, অল্পশিক্ষিত নায়কের ভুল ইংরেজি উচ্চারণ শুনে হেসে ফেলতে দ্বিধা করেন না। সে আচরণ ঠিক না ভুল, তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু প্রেমিক পুরুষটিরও যে ভুল ধরিয়ে দিতে পারে প্রেমিকা, সেই ভাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বোধহয় উপায় নেই।
আরও শুনুন: বরেলির বাজারেই হারায় ঝুমকা! কী গল্প মিশে আছে এই গানের ছত্রে ছত্রে
কেউ বলতেই পারেন, ছকভাঙার খেলাই তো এখন বলিউডের নতুন ছক। তবুও, ভরপুর ‘এন্টারটেনমেন্টে’র বাজারে যদি দু-একটা অন্যরকম কথা ভেসেই আসে, তাতে ক্ষতি কী!