ঋতুপর্ণ ঘোষ। যদিও অনেকদিনই তিনি আর নেই। বন্ধুর জন্মদিনে তাঁকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কী বললেন তিনি?
‘উনিশে এপ্রিল’, ‘চোখের বালি’, ‘দোসর’, ‘উৎসব’, ‘খেলা’ — ঋতুপর্ণ ঘোষের একের পর এক দর্শকপ্রিয় ছবিতে তিনিই নায়ক। তিনি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন, তাঁর ছবির ঋতুবদল ঘটেছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরেই। কমার্শিয়াল ছবির সুপারস্টার যে অন্য ধারার ছবিতেও নিজের অভিনয়দক্ষতার ছাপ রাখতে পারেন, সে ভরসা করেছিলেন ঋতুপর্ণ-ই। তাই বন্ধু ঋতু চলে যাওয়ার আট বছর পরেও তাঁর নতুন চিত্রনাট্য লেখার দিকে তাকিয়ে আছেন প্রসেনজিৎ।
আরও শুনুন: সেদিনের প্রেম, লাইব্রেরি থেকে তুলে আনা বই আর বুদ্ধদেব গুহ…
শুধু অভিনেতা-পরিচালকের সম্পর্ক ছিল না তাঁদের মধ্যে। পেশাগত সম্পর্ক ছাড়িয়ে খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। পরস্পরকে নাম ধরে ডাকতেন, তুই-তোকারি করতেন, আবার ঝগড়া-মান-অভিমানও কম হত না। নিজের আত্মজীবনী ‘ফার্স্ট পার্সন’-এও ‘বুম্বা’-র সঙ্গে কথা বন্ধের প্রসঙ্গ এনেছিলেন ঋতুপর্ণ। অভিমান ছিল সে লেখার ছত্রে ছত্রে। আর একইসঙ্গে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, বন্ধুত্ব কতখানি গভীর হলে প্রকাশ্যে এমন অনুযোগ করা যায়। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে চলে গেলেন প্রসেনজিতের সেই প্রিয় বন্ধু। যে শূন্যতা আজও মেনে নিতে পারেননি অভিনেতা। ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুদিন ৩০শে মে-তেও নিজের সামাজিক পাতায় তিনি ভাগ করে নিয়েছিলেন ‘চোখের বালি’-তে মহেন্দ্রর বেশে তাঁর একটি ছবি। যেখানে নায়ককে চন্দন পরিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং পরিচালক। সেদিনও তিনি লিখেছিলেন, ‘৮ বছর হয়ে গেছে তোর কোনও মেসেজ নেই, বকাঝকা নেই, সাক্ষাৎ হয় না, ঝগড়া হয় না, নতুন নতুন গল্প নিয়ে আলোচনাও হয় না’। আর আজ, বন্ধুর জন্মদিনেও একইভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন তিনি।
আরও শুনুন: গুলজারের জন্মদিনে কবিতার উদযাপন, শুনে নিন তাঁর স্বকণ্ঠে কবিতা
সোশাল মিডিয়ায় সচরাচর নিজের আবেগ প্রকাশ করেন না প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু আজ ঋতুপর্ণকে খোলা চিঠি লিখলেন তিনি। রিল ভিডিওর আকারে সেই চিঠি ভাগ করে নিলেন সবার সঙ্গে। প্রথমেই বন্ধুকে জানিয়ে দিলেন, ঋতুপর্ণের মতো ভাল লিখতে পারেন না তিনি, তবু আজকের দিনে চেষ্টা করলেন। প্রসেনজিৎ লিখেছেন, “তোর সৃজনশীলতার রঙে তুই অনন্যভাবে রাঙিয়েছিলি চলচ্চিত্র জগৎকে এবং অবশ্যই তোর সমস্ত সৃষ্টিকে। আর আমার জীবনে তোর যে অবদান তা কয়েকটা শব্দে বোঝানো সম্ভব নয়… কিন্তু বন্ধু, তুই তো জানিসই, বুঝিস তুই।” এরপরই তিনি আবদার জুড়েছেন বন্ধুর কাছে, “নতুন স্ক্রিপ্টটা কতদূর? শেষ হলেই শোনাস কিন্তু! অপেক্ষায় থাকব।”
তারকা হয়ে ওঠার পরেও ভাল কাজের খিদে থেকেই যায় একজন অভিনেতার। সেই খিদেটাকেই নিত্যনতুন উপায়ে পরিপুষ্ট করতে পারতেন ঋতুপর্ণ। তাই মৃত্যুর আট বছর পরেও তাঁকে মিস করছেন টলিউডের মহানায়ক। তাঁর অভাব ভুলতে পারছে না বাংলা সিনেমা জগৎও।