ঢিলেঢালা পোশাক পরা মানেই অভিনেত্রীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর চাউর হয়ে যায় সর্বত্র। যাদের আঁটসাঁট কিংবা খোলামেলা পোশাক দেখলে অনেকসময় বাঁকা কথা বলতে ছাড়েন না নেটিজেনরা, তাঁরা এহেন পোশাক পরলেও সেই মন্তব্যকারীরাই আবার তাঁদের শরীরে সন্ধানী নজর বুলিয়ে নেন। অথচ তেমনটা করাই কি সঙ্গত?
নারীর আঁচল সরে গেলে, শরীরকে খোলামেলা ভাবে দেখালে তর্কের ঝড়। আবার কোনও নারী ঢিলেঢালা পোশাকে নিজের শরীরকে ঢেকে রাখছেন, তাতেও প্রশ্নের কমতি নেই। সব ক্ষেত্রেই, প্রশ্নের মুখে সেই নারীরাই। ‘মাই বডি মাই চয়েস’-এর যাবতীয় অধিকার চাওয়াকে পাশে সরিয়ে রেখে, নারীর পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে তৎপর বাকি দুনিয়া। সম্প্রতি সেই ভাবনাই উসকে দিলেন পরিণীতি চোপড়া। আসলে বিয়ে হতে না হতেই তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়া নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তিনি কাফতান ড্রেস পরলেও কথা ওঠে যে, নির্ঘাত মা হতে চলেছেন অভিনেত্রী। আবার জ্যাকেট গায়ে চড়ালেও দাবি করা হয়, বেবি বাম্প লুকিয়ে রাখতেই এহেন পোশাকের আড়াল নিয়েছেন তিনি। মিডিয়া থেকে সোশাল মিডিয়া, এই জল্পনা ঘিরেই সোচ্চার হয়ে ওঠে। আর সেই প্রেক্ষিতেই এবার মজার ছলে একটি পালটা পোস্ট করলেন বলি তারকা। যা আদতে এই প্রবণতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।
আরও শুনুন:
মন্তব্যে অনড় কঙ্গনা, তবে চাইলেই কি কাউকে ‘পর্নস্টার’ বলা যায়?
‘অমর সিংহ চমকিলা’ ছবির ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানে কালো ঢিলেঢালা কাফতান ড্রেসে হাজির হয়েছিলেন পরিণীতি। আর সেই পোশাকে তাঁকে দেখেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা রাঘব-ঘরনি? অবশ্য পরিণীতিই প্রথম নন। ঢিলেঢালা পোশাক পরা মানেই অভিনেত্রীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর চাউর হয়ে যায় সর্বত্র। যাদের আঁটসাঁট কিংবা খোলামেলা পোশাক দেখলে অনেকসময় বাঁকা কথা বলতে ছাড়েন না নেটিজেনরা, তাঁরা এহেন পোশাক পরলেও সেই মন্তব্যকারীরাই আবার তাঁদের শরীরে সন্ধানী নজর বুলিয়ে নেন। অথচ তেমনটা করাই কি সঙ্গত? কেউ কারও শরীরকে কীভাবে সাজাবেন, তা যেমন তাঁর সিদ্ধান্ত; তেমনই কেউ সন্তানধারণ করবেন কি না, করলে তা কবে, সেসব সিদ্ধান্তও তাঁরই। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা হলেও সে কথা তিনি কবে প্রকাশ করবেন, সে সিদ্ধান্তও তিনিই নিতে পারেন একমাত্র। এইসব বিষয় নিয়ে ক্রমাগত জল্পনা করে যাওয়া কারও ব্যক্তিগত পরিসরে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার মতোই। আর এই সমস্ত জল্পনাই দাঁড়িয়ে আছে কোনও নারীর পোশাক নির্বাচনের উপরেই। এই আধুনিক সময়ে পৌঁছেও, যদি পোশাকের মতো একটি ব্যক্তিগত এবং সামান্য বিষয়েই আলোচনা থমকে যায়, তবে তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে বইকি।
আরও শুনুন:
মেয়েদের দাম কত! শাসক থেকে বিরোধী, সব পথ শেষে মিলে যায় একই প্রশ্নে?
আর সেই ভাবনার জায়গাটিই উসকে দিয়েছেন পরিণীতি চোপড়া। খানিকটা ব্যঙ্গের ছলেই সোশাল মিডিয়ার এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘কাফতান পোশাক মানেই অন্তঃসত্ত্বা। ঢিলেঢালা শার্ট মানেই অন্তঃসত্ত্বা। স্বচ্ছন্দের পোশাক মানেই অন্তঃসত্ত্বা।’’ হাসির মোড়কে আসলে এই তকমা লাগিয়ে দেওয়ারই বিরোধিতা করেছেন তিনি। আসলে এর মধ্যে তো এমন কথাও থেকে যায় যে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কোনও নারীর শারীরিক গড়ন বদলায় বলে তাঁকে বিশেষ ধরনের পোশাকই তখন পরতে হবে। আবার যে নারী সুঠাম চেহারা ধরে রাখছেন, তাঁকে যেন সবসময় সেই শরীরের ভাঁজ-বাঁক স্পষ্ট করার মতো পোশাকই পরতে হবে। এই সবটাই তো একরকম করে চাপিয়ে দেওয়া। নারীর শরীরকে কীভাবে দেখতে চাওয়া হচ্ছে, তার ভিত্তিতে ঠিক করে দেওয়া। সেই নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রবণতা নিয়েই বোধহয় এবার ভাবার সময় এসেছে।