যতই তারকা হোন না কেন, শরীর নিয়ে লাগাতার সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাঁদের। তারকা বলেই হয়তো, তাঁদের ক্ষেত্রে নজরদারির পাল্লা আরও বেশি। কিন্তু তাঁদের শরীরকে নিয়ে কাটাছেঁড়া চলেছে যেমন, তেমনই, শরীরকে হাতিয়ার করেই তার পালটা জবাব দিয়েছেন এই অভিনেত্রীরা। কারা রয়েছেন এই তালিকায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাধিকা আপ্তে একবার জানিয়েছিলেন, স্তন ছোট বলে একটি সিনেমায় অভিনয়ের ডাক পাওয়ার পরেও প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। আবার বাঙালি অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুনতে হয়েছিল, তাঁর স্তন সুগঠিত নয়। বিদ্যা বালান থেকে শুভশ্রী, এঁদের বারেবারেই কথা শুনতে হয়েছে ওজনের কারণে। অর্থাৎ, অভিনয় নয়, শরীরের কারণেই বারবার নজরদারি মাইক্রোস্কোপের নিচে পড়তে হয়েছে এই অভিনেত্রীদের। আর শুধু এই কয়েকজনই নন, এই তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকেই।
আরও শুনুন: খোলামেলা ছবিতেই কোটি টাকা রোজগার! শরীরকে পুঁজি করেই গরিবদের সাহায্য করতে চান এই মডেল
ইদানীং রুপোলি পর্দায় সাহসী দৃশ্যের সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে অনেকটাই। কেবল লুকিয়েচুরিয়ে নয়, খোলাখুলি যৌন দৃশ্যের অভিনয়ও এখন আর বিরল নয়। কিন্তু সেইসব দৃশ্যে যাঁরা নিজেদের শরীরকে মেলে ধরেন, বাস্তবে সেই শরীরের কারণেই অনেকসময় সমালোচনার মুখে পড়েন সেই অভিনেত্রীরা। কার ওজন বেশি, কার শরীরের গড়ন কেমন, কার রয়েছে পারফেক্ট বিকিনি বডি আর কার তা নেই, এইসব নিয়েই চলতে থাকে চুলচেরা বিচার। এককথায় বডি শেমিং। তবে এহেন সমালোচনার পালটা দিয়েছেন একাধিক অভিনেত্রীও। কখনও স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন, আবার কখনও সপাটে জবাব দিতেও ছাড়েননি। যতই বডি শেমিং হোক, ইচ্ছেমতো খোলামেলা পোশাকে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজেদের। শরীর নিয়ে সমালোচনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হাতিয়ার করে তুলেছেন শরীরকেই।
আরও শুনুন: শরীরে পোশাক প্রায় নেই, অনেকের সামনেই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়, কী অভিজ্ঞতা ভূমির?
বরাবরই সাহসী অভিনেত্রী বলে পরিচিত রাধিকা। “শরীর যে কোনও অভিনেতার কাছেই খুব প্রয়োজনীয় একটি ‘টুল’ বা হাতিয়ার”, এমনটাই মনে করেন তিনি। তাই চরিত্রের প্রয়োজনে শরীরের ব্যবহার করতে যে তিনি আদৌ কুণ্ঠিত নন। বলিউডে প্লাস্টিক সার্জারি করে শরীরী গঠন বদলে ফেলার হিড়িক দেখেও মুখ খুলেছিলেন তিনি। কৃত্রিম সৌন্দর্য নয়, মানুষের নিজস্ব সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল তাঁর। পাশাপাশি, মানুষের শরীরের গড়ন কিংবা গায়ের রং নিয়ে যারা তামাশা করে, তাদেরও একহাত নিতে ছাড়েননি রাধিকা।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কিংবা বিদ্যা বালানের মতো প্রথম সারির অভিনেত্রীদের নিয়েও অবশ্য কম ট্রোল চলেনি। গায়ের রঙের কারণে প্রিয়াঙ্কাকে ‘ব্ল্যাক ক্যাট’ তকমা দিয়ে বসেছে কেউ, আবার তাঁর বোন তথা অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়াকে কথা শুনতে হয়েছে ওজন নিয়ে। বিদ্যা বালানের ওজন নিয়েও ট্রোলের কমতি পড়েনি। কিন্তু নিজেদের কাজ দিয়েই ক্রমাগত সেসব সমালোচনার পালটা দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। ব্যক্তিজীবনে অধিকাংশ সময় শাড়ি পরেই প্রকাশ্যে দেখা যায় বিদ্যাকে। কিন্তু রিল লাইফে ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর মতো ছবিতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাহসী পোশাক আর সাহসী দৃশ্যেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ।
মাঝে মাঝেই রীতিমতো খোলামেলা পোশাকে নিজেকে মেলে ধরেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। আর এমনই এক ছবির কারণে স্তনের গড়ন নিয়ে সমালোচনার সামনে পড়েন অভিনেত্রী। স্বস্তিকার সাফ জবাব ছিল, স্তন্যদান করলে যে স্তনের গড়ন পালটায়, সেকথা যে কোনও মা-ই জানেন। একইভাবে মা হওয়ার পর ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে ট্রোলড হয়েছেন শুভশ্রীও। কিন্তু সন্তানের সঙ্গে হাসিমুখের ছবি দিয়েই সেইসব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ-ঘরনি।
দু-দুটি অস্ত্রোপচারের জেরে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বেড়ে গিয়েছিল অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর। আর সেই কারণেই ধেয়ে এসেছিল সমালোচনাও। কিন্তু সেসবকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে বিকিনি থেকে সারং, ইচ্ছেমতো খোলামেলা পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে চলেছেন ঋতাভরী।
আসলে প্রচলিত ধারণায় সৌন্দর্যের একরকম ছক রয়ে গিয়েছে। গায়ের রং, ওজন, শরীরের গড়ন, সবকিছুই সেখানে নির্দিষ্ট। আর এর বাইরের কোনও কিছুকেই তাই চট করে মেনে নিতে পারেন না অনেকে। কিন্তু আদতে তো প্রতিটি মানুষ আলাদা। তাই তারা যে এক একরকম ভাবে সুন্দর হবে, এটাই স্বাভাবিক। বডি শেমিং-এর বিরুদ্ধে নিজেদের শরীরকেই হাতিয়ার করে এই বার্তাই দিয়েছেন এই তারকারা।