লাথি, ঘুষি কিংবা ধারালো অস্ত্রের আঘাত নয়। সামান্য এক চড়ও বদলে দিতে পারে জীবন। সম্প্রতি নবনির্বাচিত সাংসদ কঙ্গনা সেকথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তবে তিনি একা নয়। চড়ের জন্য জীবন বদলে গিয়েছিল আরও এক অভিনেত্রীর। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাংসদ-অভিনেত্রী কঙ্গনাকে চড় মেরে বিতর্কে মহিলা জওয়ান কুলবিন্দর। ঘটনার কয়েকদিন পেরোলেও চর্চা থামেনি এতটুকু। একদিকে কুলবিন্দরের সমর্থনে গলা তুলছেন কৃষকরা, অন্যদিকে উর্দির অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে গেরুয়া শিবির। তবে ‘চড়’ নিয়ে এই চর্চা নতুন নয়। চড়ের জন্য জীবন নষ্ট হয়েছিল জনপ্রিয় এক অভিনেত্রীরও।
আরও শুনুন: পর্ন ছাড়লেও পর্নস্টার! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সানির শো বাতিলে উঠছে প্রশ্ন
সামান্য এক চড়ে কতটুকুই বা আঘাত লাগে। কয়েক ঘণ্টাও লাগে না ক্ষত সারতে। অবশ্য আদৌ ক্ষত হচ্ছে কি না, দেখার বিষয়। কিন্তু জনসমক্ষে কাউকে চড় মারা অপমানের প্রতীক তো বটেই। সেইসঙ্গে চড়ের মধ্যে ক্ষমতার আস্ফালনও লুকিয়ে থাকে। মালিক শ্রেণির কেউ চাইলেই শ্রমিক শ্রেণির কাউকে চড় মারতে পারেন, এমনটা একসময় সমাজের অলিখিত নিয়ন ছিল। আজও অনেক প্রভু তাঁদের ভৃত্যের সঙ্গে অবলীলায় সে আচরণ করেন। আসলে, চড়ের সঙ্গে শাসনের সম্পর্কটা বড় নিবিড়। তাই অনেকেই কথায় কথায় চড় মেরে বুঝিয়ে দেন, কোন তার বিচারে ঠিক, কোনটা তার বিচারে ভুল। কঙ্গনার চড় ঘিরেও এমন একাধিক প্রশ্ন উঠছে। তবু এখানে শরীরের ক্ষত নিয়ে তেমন চর্চা হয়নি। কারণ চড় খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি কঙ্গনার হয়নি। এমনটা হয়েছিল, ললিতা পাওয়ারের। নাম শুনে অনেকেই চিনতে পারবেন না এই অভিনেত্রীকে। তবে তাঁর অভিনীত এক বিশেষ চরিত্রর কথা বললেই চেনা সম্ভব। রামানন্দ সাগর পরিচালিত রামায়ণ-এ মন্থরার ভূমিকায় অভিনায় করেছিলেন ললিতা। খল চরিত্র হলেও তাঁকে মনে রাখতেই হয় বিশেষ চেহারার জন্য। তবে ওই চেহারা সম্পূর্ণভাবে মেক আপের জাদু ছিল না। বাস্তবেই এক দুর্ঘটনার জেরে অভিনেত্রীর মুখের একদিক ওমন হয়ে যায়।
আরও শুনুন: কোটি টাকার হাসি! অভিনয় নয়, মন খুলে হেসে প্রতি পর্বে ৫ কোটি টাকা নেন অর্চনা
মাত্র ৯ বছর বয়সে অভিনয়ের জগতে পা রাখেন ললিতা। একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। এমনই এক ছবিতে অভিনয় করতে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেবার ‘জাঙ্গ-এ-আজাদি’ নামে এক সিনেমার মুখ্য চরিত্রে ছিলেন ললিতা। সিনেমায় এক চড়ের দৃশ্য ছিল। সেখানে ললিতাকে চড় মারার কথা তাঁর সহ অভিনেতার। সিনেমায় এমন দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক। চড় কখনই তেমন জোরে মারা হয় না। ক্যামের কারসাজি আর যাকে চড় মারা হচ্ছে তার অভিনয়েই দর্শকদের কাছে বিষয়টা রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। তবে সিনেমার শ্যুটিং-এ ভুল বশত ললিতাকে সত্যি সত্যি চড় মেরে দেন তাঁর সহ অভিনেতা। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অভিনেত্রী। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বেরুতে শুরু করে। আসলে, ওই চড়ের চোটে ললিতার ডান চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। একইসঙ্গে ওই অংশের কিছু নার্ভ ছিঁড়ে যায়। ফলত ললিতার মুখের একটা অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। তিন বছর লাগে সুস্থ হতে। এরপর অন্য কেউ হলে হয়তো অভিনয়ে ফেরার সাহস পেতেন না। তবে ললিতা সুস্থ হয়েও অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। চেহারার জন্য মূল ভূমিকায় সুযোগ পেতেন না। তবে সহ চরিত্রে অভিনয় করেও নিজেকে প্রমাণ করা যায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি অভিনেত্রী-সাংসদ কঙ্গনার চড় নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়েছে। তবে চড়ের আঘাতে কারও জীবন যে এইভাবে বদলে যেতে পারে, তা ললিতার জীবনের ঘটনা বুঝিয়ে দেয়।