‘ভালো ছবি’র সংজ্ঞা নিয়েই তাঁর টানাটানি। কিরণের ছবি তিনি দেখে উঠতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী! তিনি শুনেছেন যে, পরিচালক এদেশের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন যে, চাইলেও এখানে নাকি দু’জন মানুষ নিজের মতো করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন না। এই কথাবার্তা থেকেই মোটের উপর ছবির ধারণা পেয়ে গিয়েছেন অভিজ্ঞ কঙ্গনা।
ভারতীয় সিনেমার অস্কারযাত্রা নিয়ে এমনিতেই বিতর্কের শেষ নেই। এবার সেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই যেন বেশ করে তিরস্কার করে দিলেন কঙ্গনা রানাউত। কোন সিনেমা যায় অস্কারে? কঙ্গনার সাফ জবাব, যা ভারত-বিরোধী। অর্থাৎ যে সব সিনেমা দেশকে খাটো করে দেখায়।
এ অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। ন্যাশনালিজমের পতাকা যাঁরা বয়ে নিয়ে যেতে চান, মোটের উপর তাঁরাই এই ধারণা পোষণ করেন। দেশের প্রকৃত বাস্তব, অস্বস্তিকর বাস্তবতা তুলে ধরলেই শোরগোল পড়ে। অর্থাৎ একদিকে যা দেশের প্রকৃত অবস্থা, অন্যদিকের মতে তাই-ই দেশকে খাটো করে দেখানো। একদিকের মত বলে, যদি দেশে কিছু খারাপ হয়য়েও থাকে তা তুলে ধরা দোষের কিছু নয়। বরং সেই ক্ষত প্রকাশ্যে আনার মধ্যেই আছে দেশের মঙ্গল। অন্যদিকের মত বলে, ক্ষত গোপন করে শুধু ভালো দিকগুলো দেখানোই বাঞ্ছনীয়। মতের এই দ্বান্দ্বিকতা নতুন নয়। আর সিনেমা যেহেতু বহু মানুষের মনের ঠিকানা ধরে এগিয়ে চলে, জনমানসে প্রভাব ফেলে, তাই সিনেমাকে বহুবারই এই দ্বন্দ্বের আবর্তে পড়তে হয়েছে। তবে এবারে অস্কারের বিতর্কটা অন্য জায়গায় পৌঁছেছিল।
আরও শুনুন: অস্কারে ‘আমির লবি’! ভারতের আশা ‘লাপাতা’ হতেই বিতর্ক, তাতে লাভ কার?
কিরণ রাওয়ের ‘লাপাতা লেডিস’ ছবিটিকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। যথারীতি তা বেশিদূর এগোতে পারেনি। পাশাপাশি ছিল পায়েল কাপাডিয়ার ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’, কানে-এ সম্মানিত হওয়ার পরও সে ছবি অস্কারের দৌড়ে সরকারি ভাবে যেতে পারেনি। পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খানিকটা এগোলেও, সব মিলিয়ে ভারতের অস্কার-স্বপ্ন এবারের মতো ফুরিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন বারবার ছবি বাছতে ভুল করেছেন দেশের সিনে-বিশেষজ্ঞরা? একই সঙ্গে প্রভাব খাটানোর মৃদু অভিযোগেও সরব হয়েছিলেন অমোল পালেকরের মতো প্রাজ্ঞরা।
তবে, সেই বিতর্ককে একেবারে পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনলেন কঙ্গনা। ‘ভালো ছবি’র সংজ্ঞা নিয়েই তাঁর টানাটানি। কিরণের ছবি তিনি দেখে উঠতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী! তিনি শুনেছেন যে, পরিচালক এদেশের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন যে, চাইলেও এখানে নাকি দু’জন মানুষ নিজের মতো করে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন না। এই কথাবার্তা থেকেই মোটের উপর ছবির ধারণা পেয়ে গিয়েছেন অভিজ্ঞ কঙ্গনা। তাঁর মতে, অস্কারের মূল উদ্দেশ্যটাই হল, এমন ছবি বাছা যা কিনা ভারতকে খারাপ করে দেখায়। সেই ‘স্লামডগ মিলেনিয়ার’ থেকে এবারের অস্কার নির্বাচন পর্যন্ত এর ব্যতিক্রম তিনি দেখছেন না। আর তাই তাঁর সাফ কথা, ভারত-বিরোধী ছবই হালে পানি পায় অস্কারে।
আপাতত জরুরি অবস্থা তথা তাঁর ছবি ‘এমার্জেন্সি’ নিয়ে বেশ ব্যস্ত কঙ্গনা। বলেছেন, দেশের বা বিদেশের কোনও পুরস্কারেরই পরোয়া করেন না তিনি। ভালো ছবিই তাঁর কাছে শেষ কথা। আর ‘এমার্জেন্সি’ যে ভালো ছবি, এ নিয়ে কঙ্গনার অন্তত কোনও দ্বিধা নেই।