সিনেমার পর্দায় তাঁরা কখনো সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির সন্তান আবার কখনো বিত্তশালী ব্যবসায়ীর ছেলে। শুধু ভারতবর্ষে-ই নয়, তাঁদের নিয়ে চর্চা করেন সারা বিশ্বের মানুষ। ঠিকই ভেবেছেন, কথা বলছি বলিউডের অভিনেতাদের নিয়েই। রুপোলি পর্দার সেইসব নায়কদের নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই সাধারণ মানুষের। জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁদের রোজগার-ও যে আকাশছোঁয়া হয়েছে একথা সকলেরই জানা। কিন্তু জানেন কী কর্মজীবনের শুরুর দিকে কেমন পারিশ্রমিক পেতেন তাঁরা? কিংবা প্রথম ছবির জন্য ঠিক কত টাকা রোজকার হয়েছিল বলি সেলেবদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বলিউডের আলোর জগতে প্রায়শই আবির্ভাব ঘটে নতুন মুখের। আবার তা হারিয়েও যায় চেনা অচেনার ভিড়ের মাঝে। কিন্তু কিছু মানুষের মুখ দীর্ঘকাল করে রাজত্ব করে চলে আপামর সিনেপ্রেমীদের মনে। যাদের সিনেমা রিলিজ করা মাত্রই লেগে যায় টিকিট কাটার ধুম। সারা শহর ছেয়ে যায় তাঁদের রঙিন পোস্টারে। আর এই তালিকায় সবার প্রথমেই যার নাম বলতে হয়, তিনিই স্বয়ং বলিউডের বাদশা।
আরও শুনুন: ‘বিয়ের আগে যৌনতা ব্যক্তিগত বিষয়’, আলিয়াকে নিয়ে মশকরার আবহে সপাট দিয়া মির্জা
শাহরুক খান, নাম তো শুনাহি হোগা! ভারতের বাইরেও প্রায় প্রতিটা দেশেই তিনি ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়। দীর্ঘ ৩০ বছরের-ও বেশি সময় ধরে পর্দায় রাজত্ব করে আসছেন বলিউডের কিং খান। সময়ের সঙ্গে পারিশ্রমিকের পারদ চড়লেও প্রথম ছবির জন্য পেয়েছিলেন খুবই সামান্য কিছু টাকা। ১৯৯২ সালে ডেবিউ করেছিলেন ‘দিওয়ানা’ ছবিতে। তখন পেয়েছিলেন চার লক্ষ টাকা। যদিও বিখ্যাত ছবি ‘রাজু বন গ্যয়া জেন্টেল ম্যান’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন মাত্র ২৫ হাজার টাকা। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কতটাকা পারিশ্রমিক দিতে হয় তাঁকে জানেন? প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এমনকি তাঁর পরবর্তী ছবি পাঠান-এর জন্য ৪৭ শতাংশ লভ্যাংশের চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলেই বাদ পড়েছেন সিনেমা থেকে, বলিপাড়ার গুপ্তকথা ফাঁস করলেন রাধিকা
এরপর শোনা যাক বলিউডের অন্যতম আর-এক খানের কথা। যদিও তিনি ‘ভাইজান’ নামেই বেশি খ্যাত। ঠিকই ধরেছেন, কথা বলছি সলমন খানের সম্পর্কে। বিভিন্ন বিষয় বিতর্কের শীর্ষে থাকা এই খান এখনও বহু যুবতীর হার্টথ্রব! তাঁর অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’। ১৯৮৮-তে মুক্তি পাওয়া এই ছবির দরুন পেয়েছিলেন মাত্র ১১ হাজার টাকা। এমনকী নিজের জামাকাপড় পরেই করতে হয়েছিল অভিনয়। তারপর কেটেছে দীর্ঘ ৩৪ বছর। বর্তমানে একটি ছবির জন্য সাল্লু ভাইয়ের ঝুলিতেও ১০০ কোটি ঢালতে হয় প্রযোজক দের।
তিন খানের অন্যতম হলেন আমির খান। বরাবরই নিখুঁত অভিনয়ের জন্য তাঁর নামের পাশে বসেছে মিস্টার পারফেকসনিস্ট-এর তকমা। ছোট থেকেই বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী হিসেবে। নায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির মাধ্যমে। তখন তিনিও পেয়েছিল মাত্র ১১ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই অঙ্ক বাড়তে বাড়তে এসে ঠেকেছে ৫০ কোটিতে।
আরও শুনুন: অযথা বিতর্ক জাগাননি, ভালবেসে জাতীয় মঞ্চে গাইছেন বাংলা গান, শ্রোতারা বুঁদ অরিজিৎ ম্যাজিকে
এরপর যাঁর কথা বলব, তিনি ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চন। ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন যুগের সূচনা তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল। অভিনয় করেছেন ২০০-রও বেশি সিনেমায়। আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগে পা রাখেন বলিউডে। ১৯৬৯ সালে তাঁর প্রথম ছবির জন্য পেয়েছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর এখন? সামান্য কিছু দৃশ্যে তিনি থাকলেও পারিশ্রমিক নেন ন্যূনতম ৮-১০ কোটি টাকা। যদিও তাঁর এক অদ্ভুত স্বভাব আছে। কোনও পরিচালকের কাজ ভালো লাগলে এমনিই অভিনয় করেন বিগ-বি, কানাকড়ি নেন না।
পারিশ্রমিক না নিয়ে কাজের প্রসঙ্গ ধরেই উঠে আসে দীপিকা পাড়ুকোনের নাম। বলিউডের সর্বাধিক চর্চিত এই অভিনেত্রী তাঁর জীবনের প্রথম ছবিটি করেছিলেন একেবারে বিনা পারিশ্রমিকে। বিখ্যাত সেই ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমাটিতে শাহরুক খানের বিপরীতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে শুরু করে, বর্তমানে দীপিকার পারিশ্রমিক তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘গেহেরাইয়ান’ ছবির জন্য দীপিকা নিয়েছেন ২০ কোটি টাকা।
তালিকা থেকে বাদ যাবেন না অক্ষয় কুমারের নাম-ও। বলিউডের মিস্টার ফিট সবসময় প্রস্তুত থাকেন যে কোনও স্টান্টের জন্য। তিনিও প্রথম ছবি ‘সৌগন্ধের’ জন্য পেয়েছিলেন মাত্র ৫১ হাজার টাকা। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ ছবিটি। সেখানে তাঁর পারিশ্রমিক ছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বলতে হয় শাহিদ কাপুর, ইমরান হাশমি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কিংবা অনুষ্কা শর্মার কথা। এঁরা প্রত্যেকেই বর্তমানে কোটি টাকা পারিশ্রমিক পেলেও শুরুতে পারিশ্রমিকের অঙ্ক ছিল সামান্য-ই। আর এঁদের এই সাফল্য যেন মনে করিয়ে দেয়, অর্থের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল কাজ। ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির বাবা রঞ্ছোড়দাস চাঁচড় হলে নির্ঘাত বলতেন, ঠিকঠাক কাজ করে যাও, অর্থ একদিন ঠিক চলে আসবে।