দিনদুপুরে গুন্ডাদের গুলিতে শেষ হয়ে গেল একটি তরতাজা প্রাণ। হ্যাঁ, কথা বলছি পঞ্জাবের জনপ্রিয় গায়ক সিধু মুসেওয়ালার মৃত্যু নিয়েই। প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁর উপরে গুলি চালায় একদল দুষ্কৃতী। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তারও করা হয় কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইকে। নাম জড়ায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী গোল্ডি ব্রা তথা সতীন্দ্র সিংহেরও। সে অবশ্য ফেরার। এই প্রথম নয়, অভিনেতা-গায়কদের সঙ্গে মাফিয়া জগতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দিন কয়েক আগেই টাকার জন্য হুমকি পেয়েছিলেন গায়ক অরিজিৎ সিংও। দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে হুমকি পাচ্ছেন সলমনও। শুধু সিধুই নন, এর আগেও একাধিক বার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুনজরে পড়েছেন একাধিক শিল্পী-অভিনেতা। বুক ফুঁড়ে গিয়েছে গুলি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকটি ঘটনা।
বলিউডের সঙ্গে অপরাধ জগতের সম্পর্ক আজকের নয়। বহু কুখ্যাত গুন্ডা, দাগী অপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে জেলের হাওয়া পর্যন্ত খেতে হয়েছে একাধিক বলি-তারকাকে। পাশাপাশি বহু সময়েই অপরাধ জগতের কুনজরে পড়ে যান তারকারা। চলে নির্বিচারি তোলাবাজী। সিনেমা সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টাকার জন্য আসতে থাকে হুমকি ফোন। এসব কোনও নতুন ব্যাপার নয়।
পঞ্জাবের গায়ক সিধু মুসেওয়ালা খুন হওয়ার পর থেকেই ব্যাপারটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা। বলিউডে মাফিয়া দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব হয়েছেন একের পর এক তারকা গায়ক, অভিনেতা। এই প্রথম নয়, এর আগেও দুষ্কৃতীদের এমন হামলা ঘটেছে এ দেশের তারকাদের উপরে।
আরও শুনুন: স্তন ছোট বলেই বাদ পড়েছেন সিনেমা থেকে, বলিপাড়ার গুপ্তকথা ফাঁস করলেন রাধিকা
১৯৯৭ সালে গায়ক গুলশন কুমারের মৃত্যুর কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। বিখ্যাত সঙ্গীত প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার গুলশন ছিলেন অভিনেতাও। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ৯০ দশকে যে সব ক্যাসেট কোম্পানিগুলোর বাজার ছিল দারুণ রমরমা, তাদেরই অন্যতম ছিল গুলশনের ‘টি-সিরিজ’। শুধু এ দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ নাম ছিল এই সংস্থাটির। সে সময়ে দাঁড়িয়ে ৪২ লক্ষ ডলারের টার্ন ওভার ছিল সংস্থাটির। আর এই রমরমাই চক্ষুশূল হয়েছিল মাফিয়াদের।
একদিন মুম্বইয়ের আন্ধেরি এলাকার জিৎনগরের একটি মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন গুলশন। সে সময় প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁর উপরে ১৬ বার গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৭ সালের ১২ অগস্ট। সে সময় তাঁর দেহরক্ষী অসুস্থ ছিলেন। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনার দিন কয়েক আগেই নাকি হুমকি ফোন পেয়েছিলেন গুলশন। তবে টাকা দিতে রাজি হননি তিনি। তার পরেই পেশাদার গুন্ডা লাগিয়ে তাঁকে খুন করে মাফিয়ারা। মনে করা হয়, সেই ঘটনার নেপথ্যে ছিল ডি-কোম্পানি বলে মুম্বইয়ের একটি আন্ডারওয়ার্ল্ড সংগঠন।
শুধু গুলশনই নন, একই রকম হামলা হয়েছিল বলিউডের তারকা অভিনেতা-পরিচালক রাকেশ রোশনের উপরেও। সেটা ২০০০ সালের ঘটনা। ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবির মারকাটারি সাফল্যের পরেই তাঁর উপরে নজর পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের । মুম্বইয়ের তিলক রোডে রাকেশ রোশনের উপরে গুলি চালায় দুই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। একটি গুলি তাঁর বাঁ হাত ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। অন্যটি ফুঁড়ে গিয়েছিল তাঁর বুক। যদিও সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান রাকেশ। কোনও ভাবে তাঁর গাড়ির চালক সেদিন তাঁকে সান্তাক্রুজ থানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। নানাবতী হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডের বাবা ড. শরদ পাণ্ডে। সেই ঘটনায় বাহারাইনের এক কুখ্যাত দুষ্কৃতীর যোগ মেলে। ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবির লভ্যাংশ নেওয়ার জন্যই এই হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
আরও শুনুন: মঞ্চেই পড়েছে মৃত্যুর ছায়া, পারফর্ম করতে করতেই জীবন হারিয়েছেন যে শিল্পীরা
ফের সেসব ঘটনারই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে সিধু মুসেওয়ালার হত্যাকাণ্ড। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই দুষ্কৃতীদের নিশানায় ছিলেন ওই গায়ক। গত ১৫ দিনে অন্তত আট বার খুনের চেষ্টা করা হয় তাঁকে। নিয়োগ করা হয়েছিল ৬ জন শার্প শ্যুটার। বন্দুকে কাজ না হলে গ্রেনেড হামলারও নির্দেশ ছিল পেশাদার খুনিদের উপরে। সেদিন তাঁকে খুনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল এএন-৯৪ রাশিয়ান অ্যাসল্ট রাইফেল। ঘটনার ভয়াবহতায় চমকে উঠেছিলেন মানুষ। প্রশ্ন ওঠে তারকা-নিরাপত্তা নিয়েও।