হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে হাসি–ঠাট্টা–মজা–মশকরা করা যাবে না। কোনও অসম্মানজনক অবস্থানে রাখা যাবে না তাঁদের। এই মর্মে ‘তাণ্ডব’ সিরিজের সঙ্গে যুক্ত মুসলিম কলাকুশলীদের লিখিত এফিডেভিট জমা দেওয়ার দাবি উঠেছে। তুলেছে অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ। এবিএপি। ২৭ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে পরিচালক আলি আব্বাস জাফরকে।
‘তাণ্ডব’ নিয়ে শেষ পাওয়া আপডেট অন্তত তাই বলছে। তার আগেই অবশ্য সিরিজ থেকে বিতর্কিত দৃশ্যগুলি বাদ দিয়েছেন পরিচালক। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের সঙ্গে টিম ‘তাণ্ডব’–এর কথোপকথনের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত। নেটিজেনদের এক দলের অভিমত: এত অল্পেই যদি ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হবে, তাহলে সেরকম ধর্ম রাখা কেন বাপু? সেরকম ধর্ম রাখা কেন যার বিরুদ্ধে চাট্টি কথা তুললেই শিল্পীর দিকে শ্বদন্ত বের করে তেড়ে আসতে হয়? বাক্–স্বাধীনতা, শিল্পের ও শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়টা কি তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে বিড়ালের তালব্য শ?
অন্য দলের বক্তব্য: একটি ধর্মের সহিষ্ণুতা, উদারতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাকে একপেশে আঘাত করে যাওয়াও কি সঙ্গত? যাঁরা ক্রমাগত এই আঘাত হেনে চলেন, নিজেদের ‘শিল্পী’ বলে দাবি করা সেই মানুষজন, সব ধর্মের উপরই এরকম ক্রূঢ় আঘাত নামাতে পারেন না কেন? কেন বেছে বেছে কেবল একটা এবং একটামাত্র ধর্মকেই প্রতিবার রক্তাক্ত হতে হয় তথাকথিত ‘স্বাধীন শিল্পী’দের ‘স্বাধীনতর শিল্প’র আঘাতে? অন্য ধর্মের কি কোনও কালো দিক নেই? থাকলে ঠিক কোন কারণে তা সমালোচনার অতীত? ভলডেমর্ট–এর মতো ‘হি, হু মাস্ট নট বি নেমড’ প্রথা অনুসরণ করতে হবে কেন তাকে নিয়ে বলতে গেলে?
প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।
এই দু’পক্ষের লড়াই নতুন কিছু না। যা নতুন তা হল: প্রবণতা; সস্তা পাবলিসিটি পাওয়ার প্রবণতা।
আগেও ভারতীয় সমাজে বিবিধ ধর্মের কুপ্রথাকে আক্রমণ করেছেন বিশ্ববরেণ্যরা। প্রতিবারই একটা পক্ষ রে–রে করে উঠেছে, অন্য পক্ষ এগিয়েছে সহমর্মিতার হাত। কিন্তু ভারতীয় সমাজ সংস্কারকদের কাজ লক্ষ করলে দেখব, নিছক আক্রমণ বা ব্যঙ্গ নয়, সংস্কারের মাধ্যমে তাঁরা কালোটুকু বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ধর্মের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছিলেন। তারপর? শুনুন…
লেখা: সোহিনী সেন
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস