সেই সময় মহিলাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়াকে মোটে ভাল চোখে দেখা হত না। হিন্দুসমাজ তো বটেই, এমনকী, গোঁড়া পার্সি সমাজেও না। হোমজি বোনেদের বোম্বে টকিজে যুক্ত হওয়ার খবর দাবানলের মতো ছড়ায়। ব্যাপক আলোড়ন পড়েছিল বোম্বাইয়ের পার্সি সমাজে। শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। শুরুর আগেই প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হোমজি বোনেদের কেরিয়ার। ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন হিমাংশু ও হরীন্দ্রনাথ। প্রস্তাব দেন নাম বদলানোর। নতুন নামকরণ করেন হরীন্দ্রনাথই। খুরশিদ হলেন গায়িকা, সুরকার সরস্বতী দেবী ও মানেক হলেন অভিনেত্রী চন্দ্রপ্রভা। এবার আর কোনও বাধা রইল না। নতুন নামেই শুরু হল তাঁদের নতুন পথচলা, বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। ভারতীয় ফিল্ম জগত পেল প্রথম মহিলা সুরকার– সরস্বতী দেবী।
১৯৩৫ সালে প্রথম ব্রেক পেলেন সরস্বতী। বোম্বে টকিজে নতুন ফিল্ম ‘জওয়ানি কা হাওয়া’। অভিনয়ে দেবিকা রানি ও নজম উল হুসেইন। সেই সময় প্লে ব্যাক সং-এর প্রচলন নেই বললেই চলে। মাত্র কয়েক বছর আগেই নির্বাক থেকে সবাক হয়েছে ভারতীয় চলচ্চিত্র। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজেরাই পর্দায় গাইতেন গান। প্রথম প্লে ব্যাকের কৃতিত্ব সরস্বতী দেবীরই। তাঁর বোন চন্দ্রপ্রভার লিপে প্রথম গান গাইলেন সরস্বতী। ‘জওয়ানি কা হাওয়া’ ভাল না চললেও সাড়া ফেলে তাঁর সংগীত।
সে বছরই মুক্তি পায় সি. এম. লুহারের নির্দেশিত ‘তালাশ এ হক’ ছায়াছবিটি, যাতে সংগীত পরিচালনা করেন আরেক অসামান্য অভিনেত্রী-সুরকার জদ্দনবাই। সেই ছবিতে অভিনয়ও করে ছিলেন তিনি। মূলত ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম মহিলা সুরকারের শিরোপা ভাগ করে নিয়েছিলেন সরস্বতী দেবী ও জদ্দনবাই।
এরপর ১৯৩৬-এ আসে ‘জন্মভূমি’। হিট হয়। তার চেয়েও বেশি হিট হয় ছবির গান। সরস্বতী দেবীর প্রিয় রাগ ‘মণ্ড’-র সুরে ‘জয় জয় জননী জন্মভূমি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। দেশাত্মবোধক সেই কোরাস গান গাইতেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও। পরবর্তীকালে বিবিসির ইন্ডিয়ান নিউজ সার্ভিসের সিগনেচার টিউন হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পায় সেই সুর। এরপর আর পিছু ফিরে দেখতে হয়নি সরস্বতী দেবীকে।
বাকিটা শুনে নিন…
লেখা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
পাঠ: শ্যামশ্রী সাহা
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস