হিন্দুত্ববাদী ঝড়ে কাঁপছে গোটা দেশ। সমস্ত কিছুর সঙ্গেই হিন্দু ধর্মের যোগ খুঁজে বের করতে উঠেপড়ে লেগেছে দেশের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। মসজিদের ভিতরে মন্দিরের অস্থিত্ব খুঁজতে দেশের বিভিন্ন আদালতে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। এবার সেই হাওয়ার কবল থেকে বাঁচল না মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা মার্ভেলের সুপারহিরো ছবিগুলিও। জনপ্রিয় ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ সিরিজ নাকি হিন্দু মহাকাব্য ও শাস্ত্র থেকেই অনুপ্রাণিত, এবার এমনই দাবি করে বসলেন বলিউড তারকা কঙ্গনা রানাউত। আর কী কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নিই।
বরাবরই বিতর্কের শীর্ষে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সহ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধেও বিতর্কিত কথা বলে বসেন অভিনেত্রী। এক কথায় বলতে গেলে বিতর্ক আর কঙ্গনা রানাউত যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। এ দিকে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেও বিশেষ খ্যাতি রয়েছে অভিনেত্রীর। ফলে হিন্দুত্ববাদের দিকে তাঁর পাল্লা যে একটু বেশিই ভারী, তা আঁচ করা আর কঠিন কী! তাই বলে এবার তিনি যা বলেছেন, তাতে কার্যত চমকে উঠেছে নেটদুনিয়া। বলিউডে সুপারহিরোদের নিয়ে সিনেমার সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা। ওই একটা ‘কৃষ’ বাদ দিলে বড় পর্দায় সুপারহিরো খুঁজে পাওয়া মুশকিল বললে ভুল বলা হবে না। যদিও ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। তবে সেসব মার্ভেল বা ডিসি প্রযোজনা সংস্থার সুপারহিরো সিনেমাগুলির কাছে নিতান্তই নবিশ। এমনিতেই মার্ভেল বা ডিসির এসব সুপারহিরো ছবিগুলির জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্ব জুড়েই তুঙ্গে। ভারতেও যে তাদের আলাদা একটা ভক্তকুল রয়েছে, তা-ও স্বীকার না করলেই নয়।
আরও শুনুন: শাহরুখ নন, ডিডিএলজে-র রাজের ভূমিকায় প্রথম পছন্দ ছিলেন টম ক্রুজ!
তবে স্ট্যান লির তৈরি সেসব চরিত্রের মৌলিকতা নিয়েই এবার প্রশ্ন তুলে বসলেন কঙ্গনা। তাঁর দাবি, মহাভারত ও বেদ থেকেই অনুপ্রাণিত ‘আয়রন ম্যান’, ‘থর’-এর মতো এসব জনপ্রিয় চরিত্ররা। হিন্দু সাহিত্য, পূরাণ এবং শাস্ত্রেই নাকি রয়েছে এসব চরিত্রের ভিত। না, শুধু বলেনইনি, কারণ-সহ তা ব্যাখ্যাও করেছেন অভিনেত্রী।
খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে চলেছে ‘ধাকড়’ নামে একটি হিন্দি ছবি, যেখানে মুখ্যচরিত্রে দেখা যাবে কঙ্গনাকে। ছবিটি যে রীতিমতো অ্যাকশন মুভি তা বোঝা গিয়েছে পোস্টার দেখেই। সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে রয়েছেন অর্জুন রামপাল। সেই ছবির প্রচারে এসেই এবার এমন মন্তব্য করেন কঙ্গনা। তাঁর মতে, আয়রন ম্যানের যে বর্ম তা অনেকটা মহাভারতের সূর্যপুত্র কর্ণের বর্মের মতোই। থরের হাতুড়ি এবং হনুমানের গদার মধ্যেও কোনও পার্থক্য খুঁজে পাননি কঙ্গনা। এমনকি তাঁর এ-ও মনে হয়, ‘অ্যাভেঞ্জার্সে’র প্রত্যেকটি চরিত্রই আসলে মহাভারত বা রামায়ণের মতো মহাকাব্য থেকে অনুপ্রাণিত।
আরও শুনুন: ‘শোলে’ থেকে বাদই পড়ে যাচ্ছিলেন খোদ গব্বর সিং! কেন জানেন?
না, তবে কঙ্গনাই প্রথম নয়। এমন অভিযোগ এর আগেও তুলেছেন অনেকে। কিছু দিন আগেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘মুননাইট’ নামে মার্ভেলের একটি ওয়েব সিরিজ। সেটি মহাভারত থেকে অনুপ্রাণিত বলে দাবি করেছিলেন এক নেটনাগরিক। এমনকি তাঁর নেপথ্য সঙ্গীতের সঙ্গেও ছোট পর্দার মহাভারতের মিল খুঁজে পান তিনি।
জনপ্রিয় হলিউড ছবি ‘ম্যাট্রিক্স’ ছবির বিভ্রমের ধারণা ভারতীয় মায়ার ধারণা থেকে আলাদা নয় বলেও মনে করেন অনেকে। হলিউডের প্রযোজক পিটার ব়্যাডার একবার একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে নিজেই বলেছিলেন সে কথা। মার্ভেলের ‘সাং-চি’ নামক একটি সিনেমাকে সঞ্জয় লীলা ভনশালির ‘বাজিরাও মস্তানি’র হুবহু নকল বলে সমালোচনা করেছিলেন অনেক ভক্তই। তবে কঙ্গনা যে ভাবে খুঁজে খুঁজে মহাভারত বা রামায়ণের চরিত্রের সঙ্গে ‘অ্যাভেঞ্জার্স’দের সাদৃশ্য খুঁজে বের করেছেন, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে নেটনাগরিকদের একাংশ।