প্রাণ যায় নয়, প্রাণ ভরে যায়। হ্যাঁ, প্রাণ ভরে গান শুনছেন সারা ভারতবাসী। ভাষার সীমানা পেরিয়ে বাংলা হিন্দি মেশামেশি। নাহ, কোথাও কোনো রেষারেষি নেই। আগ্রাসনের গল্পই নেই। সুরের মায়া এসে মুছে দিয়েছে সবকিছু। শুধু জেগে আছে অপার্থিব এক আনন্দ। আর সেই আনন্দের ফেরিওয়ালা যিনি, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং অরিজিৎ সিং।
হায় হায় প্রাণ যায়… গাইছেন তিনি। প্রাণ যায় নয়, প্রাণ ভরে যায়। হ্যাঁ, প্রাণ ভরে গান শুনছেন সারা ভারতবাসী। ভাষার সীমানা পেরিয়ে বাংলা হিন্দি মেশামেশি। নাহ, কোথাও কোনো রেষারেষি নেই। আগ্রাসনের গল্পই নেই। সুরের মায়া এসে মুছে দিয়েছে সবকিছু। শুধু জেগে আছে অপার্থিব এক আনন্দ। আর সেই আনন্দের ফেরিওয়ালা যিনি, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং অরিজিৎ সিং।
সুরের জাদুকর সলিল চৌধুরী। আর সেই সুরের পথেরই এক আপনভোলা পথিক অভিজিৎ সিং। দুজনের দেখা হল, গানের ভিতর দিয়ে। অতীত আর বর্তমান যেন মুখ দেখল সমসময়ের দর্পণে। আর জন্ম হল এমন এক আধুনিক মুহূর্তের, যাকে ইন্দ্রজাল ছাড়া বোধহয় আর কিছুই বলা যায় না। সেই ম্যাজিক আচ্ছন্ন করেছে গোটা ভারতবর্ষকে। একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠানেই গান গাইছিলেন অরিজিৎ। শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরকে। আর তার জন্য অন্যান্য গানের সঙ্গে বেছে নিয়েছিলেন কালজয়ী বাঙালি সঙ্গীত পরিচালকের কয়েকটি অবিনশ্বর সৃষ্টিকে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীকে স্পর্শ না করলে স্বয়ং লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গীত-প্রতিভারও যে নাগাল পাওয়া যায় না। অরিজিৎ যথার্থ পথই বেছে নিয়েছিলেন। নাহ, প্রাদেশিকতার লেশমাত্র সেখানে নেই। অরিজিৎ যেন দেখিয়ে দিলেন, সুরের ভাষা, সঙ্গীতের ভাষা সমস্ত বিভাজনের ঊর্ধ্বে। সে এমন এক অনির্বচনীয় পৃথিবী যেখানে আনন্দধারা বইতে থাকে অবিরল। তাঁর গাওয়া সেইসব গান এখন বহুজনের হাত ঘুরে ছড়য়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। সেই কবেকার সুরে ভেসে যাচ্ছে আধুনিক সময়ের বারান্দা।
আরও শুনুন: দুর্ভাগা সেই দেশ… সম্প্রীতির প্রয়োজনে শিল্পীর বন্ধুতাও যেখানে মাপা হয় ধর্মের পরিচয়ে
আর সেখানে দাঁড়িয়ে শ্রোতা-দর্শক কী দেখছেন? দেখছেন, জাতীয় মঞ্চে দাপিয়ে বাংলা গান গাইছেন একজন বাঙালি শিল্পী। অবশ্য বাঙালি শিল্পী না বলে, তাঁকে শুধু শিল্পী বলাই উচিত। যেন বাউল তিনি, তাঁর আলাদা কোনও বিধিবদ্ধ পরিচয় নেই।
অথচ সমসময়েই বাংলার ঘরদুয়ার জুড়ে কত না তর্ক! বাংলা বনাম হিন্দি, বাইরের শিল্পী বনাম ঘরের শিল্পী ইত্যাদি প্রভৃতিতে বাঙালি শ্রোতার কান ভোঁ ভোঁ। নতুন গান তো দূর অস্ত, প্রতিদিন নতুন কথার আগাছা যেন বাড়ছে শ্রবণে, মননে। ঠিক সেখানেই যেন উদাহরণ হয়ে এসে দাঁড়ালেন অরিজিৎ। কোনও বিতর্ক উসকে দেননি তিনি। অযথা প্রশ্ন তুলে তোলপাড় ফেলেননি সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভালবেসে শুধু গেয়েছেন তাঁর প্রাণের গান। জাতীয় মঞ্চে তাঁর কণ্ঠ যেন চুপিসারে ঘটিয়েছে এক অন্তর্ঘাত। কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে, বাংলা গান, বাঙালির তৈরি করা সুর যখন দুই ভাষায় নতুন প্রজন্মকে শোনাচ্ছেন অরিজিৎ, তখন একদিকে যেন জেগে উঠছে বাংলার সোনার ইতিহাস, অন্যদিকে গড়ে উঠছে এক আশ্চর্য সেতু। সমস্ত বিতর্ক, আগ্রাসনের আতঙ্ক, ভাষাগত দ্বন্দ্ব, প্রাদেশিকতা, শিল্পীর পরিচয় নিয়ে যাবতীয় দ্বন্দ্ব তিনি দূর করে দিচ্ছেন। অথচ এ সবই অরিজিৎ করলেন প্রায় নিশ্চুপে, কোনও কথা না বলে, শুধু গান গাওয়ার ছলে।
আরও শুনুন: সুরলোকে সুরসম্রাজ্ঞী, অনন্তে পাড়ি দিলেন লতা মঙ্গেশকর
নস্ট্যালজিয়ায় ভেসে অনেকেই তো তাই বলছেন, এই তো বাঙালির জোর। কথায় নয়, সে চিরকাল কাজেই বড়। দিনকালের বদলে হয়তো সে ধারণায় একটু টোল পড়েছে, তবু কে বলে বাঙালি কোণঠাসা? আজও সে সগর্বে বলতে আরে, সেদিন যেমন তার ছিল সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আজও তার ভাঁড়ার তেমন পূর্ণই আছে। বাংলা ও বাঙালির জয়গান গাইতে ওই তো গান ধরেছেন এক আত্মভোলা শিল্পী। হ্যাঁ, আমরা জানি তিনি আর কেউ নন, তিনিই অরিজিৎ সিং।
কৃতজ্ঞতা: Hotstar