পাকিস্তানের চর। এই সন্দেহে আটক করেছিল আফগান পুলিশ। অথচ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার মতো কিছুই ছিল না কাছে। এমন সময় ত্রাতা হন শাহরুখ। কিং খানের দৌলতেই সে যত্রায় রক্ষা মিলেছিল। কী ঘটেছিল ঠিক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘নাম তো শুনাহি হোগা’…সিনেমা রিলিজের পর এতগুলো বছর কেটেছে। এখনও এই ডায়লগের জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকু। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শাহরুখ-এর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও কঠিন। সুতরাং কিং খানের নাম নিলে যে কোনও জায়গাতেই কাজ হবে, একথা বলা যেতেই পারে। জনপ্রিয় সাংবাদিকের অভিজ্ঞতাতেই মিলল সেই প্রমাণ। স্রেফ শাহরুখের নাম নিতেই বড়সর বিপদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: কাতার থেকে ভারতীয় নৌ-সেনাদের মুক্তি শাহরুখের জন্যেই? জল্পনা বিজেপি নেতার দাবিতে
কথা বলছি, সাংবাদিক নয়নিমা বসু সম্পর্কে। কাজের সুবাদে নানা অভিজ্ঞতা ঝুলিতে ভরেছেন তিনি। তার মধ্যে কাবুল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকর। এর সঙ্গেই জড়িয়ে কিং খানের নাম। নিজের লেখা বইয়ে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন নয়নিমা। সেখানে অবশ্য স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে তাঁর শাহরুখ প্রীতির কথাও।
আরও শুনুন: শাহরুখের হাতে যদি থাকত দেশ চালানোর ভার, কী কী বদলে দিতেন পর্দার নায়ক?
আসলে শাহরুখ মানেই বাজিগর। আবার শাহরুখই ডন। কোনও কিছুই যে ‘না-মুমকিন’ হতে পারে না, গোটা দেশকে সে কথা শিখিয়েছিলেন শাহরুখ খানই। কিন্তু রিলের বাইরে রিয়েলেও কি তিনি একইরকম ভাবে সবকিছু করতে পারেন? সাংবাদিক নয়নিমার জীবনের এই ঘটনার কথা জানলে বলতে হয়, অবশ্যই পারেন। সেবার আফগানিস্তান গিয়েছেন নয়নিমা। তাঁকে দেশের ইতিউতি ঘুরিয়ে দেখার দায়িত্ব এক আফগান চালকের। এমনিতে সেদেশে যুদ্ধের অন্ত নেই। সাংবাদিকদের আনাগোনাও লেগেই থাকে। যদিও নয়নিমার কথায়, একজন সাধারণ পর্যটকের মতোই তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন আফগান চালক। ইংরেজিতে তিনি বেশ পটু। কাজেই কথা বলতে তেমন অসুবিধা হচ্ছিল না। শহরের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলছে। আর ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এমন ছবি থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সামনে থেকে তা দেখলে অবাক হতেই হয়। নয়নিমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। এরইমাঝে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আফগান চালকের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নয়নিমা। হঠাৎ একেবারে বদলে যায় চারপাশ। রাস্তার ধারে বিরাট মাপের পোস্টার। সেখানে তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্টের ছবি। সামান্য এগোলেই মোড় ঘুরেছে রাস্তা। সেখানে ভালমতো ভিড়। কেউ কিছু বিক্রি করার চেষ্টা করছে, আবার কেউ ভিক্ষা চাইছে। কারও পরনে ধোপদুরস্ত জামা নেই। নয়নিমা সবে জানলা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বাধা দিলেন গাড়ির চালক। এমনটা করলেই নাকি দামী মোবাইল ছিনতাই হতে পারে। আর সেই কাজ করবে ওই ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা বাচ্ছারা। চালকের পরামর্শ মতো থেমে যান নয়নিমা। এরপর আসল ঘটনার শুরু।
আরও শুনুন: শাহরুখ মানেই হারানো স্বদেশ, নিরুদ্দেশের উদ্দেশে আমাদের ব্যক্তিগত ঘোষণা
হঠাৎ দেখেন তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে এগিয়ে আসছে একদল পুলিশ। একেবারে যুদ্ধের সময় যেমন পোশাক পরে সেনারা, এই পুলিশ বাহিনীর পরনেও খানিকটা তেমন পোশাক। প্রত্যেকের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র। গাড়ির সামনে এসেই চালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দেন তাঁরা। অবশ্যই নিজেদের ভাষায়। যার বিন্দুমাত্র বোঝার ক্ষমতা ছিল না নয়নিমার। অগত্যা যা হচ্ছে তা চুপচাপ বসে দেখছিলেন। কিন্তু কাঁহাতক আর এভাবে থাকা যায়। কিছু একটা গোলমাল যে হবে তা বেশ বুঝতে পারছিলেন। হলও তাই। দেখলেন এবার বন্দুকের নল তার দিকেই তাক করেছে পুলিশ বাহিনী। আর বেশ রাগান্বিত গলায় নয়নিমাকে উদ্দেশ্য করে তাঁরা বলছেন, ‘পাকিস্তানি’। এখনও সবটা পরিষ্কার হয়নি নয়নিমার। ওই অবস্থাতেই ইংরাজিতে বলার জন্য অনুরোধ করলেন আফগান চালককে। তাঁর অবস্থায় বেশ শোচনীয়। তবু ভয় ধরা তিনি আসল ব্যাপারটা জানালেন। মোটের উপর যার মানে করলে দাঁড়ায়, নয়নিমাকে পাক চর হিসেবে সন্দেহ করেছে আফগান পুলিশ। যার দুটো কারণ। এক নয়নিমার পোশাক। আর দুই হাতের ক্যামেরা। সেদিন একেবারে সাদামাটা জিন্স টপ পরেছিলেন নয়নিমা, মাথায় অবশ্য ঢেকে রেখেছিলেন একটা ওড়না। আর ক্যামেরা তাক করে রাস্তার ধারের ছবি তুলছিলেন অনেকক্ষণ ধরেই। সবটা লক্ষ করেই আফগান পুলিশের মনে হয় তিনি পাক গুপ্তচর। এদিকে সেই মুহূর্তে নিজেকে ভারতীয় বা সাংবাদিক প্রমাণ করার মতো কোনও সুযোগই পাচ্ছিলেন না নয়নিমা। তাই প্রথমে পুলিশের নির্দেশমতো গাড়ি থেকে নামেন। ক্যামেরায় তোলা ছবি মুছে দিতে বলা হয়। সেসবই করেন নয়নিমা। তারপর নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তাতেও অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। সাধারণত এমন ঘটনা গ্রেপ্তারির দিকেই এগোয়। আর কিছুক্ষণ সন্দেহ বাড়লে হয়তো নয়নিমার সঙ্গেও তাই হতো। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সহায় হন শাহরুখ খান। হঠাৎ ওই পুলিশ কর্তাকে নয়নিমা বলেন, তিনি শাহরুখ ভক্ত। ব্যস! এতেই কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। বিস্ময় আর সন্দেহের দৃষ্টি বদলে যায় আনন্দের হাসিতে। হয়তো ওই পুলিশ কর্তাও কিং খানের ভক্ত। তাই নিজের গোত্রের আর কাউকে গ্রেপ্তারির কথা তাঁর মাথাতেও আসেনি। সহাস্য বদনে তিনি ছেড়ে দেন নয়নিমাকে। এইদিনের ঘটনাই নিজের কাবুল ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় ফলাহ করে লিখেছেন নয়নিমা।