আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ১৩১৮ বঙ্গাব্দে গরমের ছুটির পর হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর আশ্রমে যোগদান করেননি। অন্য কাজ খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বয়ং গুরুদেব। তখন আশ্রমে রীতিমতো আর্থিক অনটন চলছে। এই সময়ে সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ ক্ষুদিরাম বসুর অনুরোধে মেট্রোপলিটন কলেজে সংস্কৃতের অধ্যাপকরূপে যোগদান করলেন হরিচরণ। শিক্ষকতার কাজে যুক্ত থাকলেও তাঁর অভীষ্ট কাজ থেকে সরে আসায় তিনি যথেষ্ট ব্যথিত হয়েছিলেন। জোড়াসাঁকোয় গুরুদেবের কাছে গিয়ে দেখা করে মনের এই বেদনার কথা জানালেনও। রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি বৃত্তির ব্যবস্থা করেন কাশিমবাজারের মহারাজ মণীন্দ্র নন্দীর মাধ্যমে। মহারাজের ইচ্ছে ছিল তিনি কাজটি কাশিমবাজার থেকে প্রকাশ করুন। কিন্তু হরিচরণ শান্তিনিকেতনেই বাকি কাজটি সম্পন্ন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বিদ্যালয়েরও ক্ষতি হচ্ছে বলে তিনি তাড়াতাড়ি শান্তিনিকেতনেও ফিরে আসেন।
১৩৩০ বঙ্গাব্দে পাণ্ডুলিপির কাজ শেষ হলে মহারাজ এই অভিধান ছাপানোর জন্য কাশিমবাজারে পাঠাতে বলেন। কিন্তু গুরুদেবের ইচ্ছে, বিশ্বভারতী থেকেই এটির প্রকাশ হোক। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী প্রমুখদের তত্ত্বাবধানের ‘সম্পাদক সংঘ’ তার যথাযথ ব্যবস্থা নিক। এই মর্মে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গীয় পাঠক সমাজের কাছে আবেদন পেশ করেন, ‘শ্রীযুক্ত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় গত ত্রিশ বছর ধরিয়া বাংলা অভিধান রচনায় নিযুক্ত আছেন। সম্প্রতি তাঁহার কারজ সমাপ্ত হইয়াছে।…এই পুস্তক বিশ্বভারতী হইতে আমরা প্রকাশ করিবার উদ্যোগ করিতেছি।…বাংলাদেশের পাঠক সাধারণ এই কারজে আনুকূল্য করিয়া বাংলা সাহিত্যের গৌরব বৃদ্ধি করিবেন একান্তমনে ইহাই কামনা করি।’ কিন্তু বিশ্বভারতীর করুণ আর্থিক অবস্থা প্রকাশনার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘকাল কেটে গেল। কোনও সুরাহা না হওয়ায় হরিচরণ চেষ্টা করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটিকে ছাপানোর। কিন্তু সেখানেও আর্থিক অনটন। অন্তত পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। কোনও দাতা পাওয়া গেল না। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যথেষ্ট উৎসাহ দিলেও অর্থাভাবে কাজটি স্থগিত রইল।
এরপর গেলেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে। সেখানেও একই অবস্থা। মাঝে মধ্যেই গুরুদেব-রথী ঠাকুর, সুনীতিকুমার এঁদের মধ্যে আলোচনা হয় কীভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে এই অমূল্য বৃহদাকার কাজটি, কিন্তু সুরাহা মেলে না কোনও।
তারপর?
শুনুন..
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস