দিল্লির সিঙ্গু সীমানায় কৃষক আন্দোলনের প্রায় এক পক্ষ হতে চলল। এখনও সমাধান সূত্র অধরাই। নিহাঙ্গ শিখদের পুরো পল্টন তাঁদের সৌভ্রাতৃত্ব প্রদর্শনে এই বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। ফুটেজে দেখা ১৭ ডিসেম্বরের এক দৃশ্য গায়ে কাঁটা দেওয়ায়। একদিকে র্যাফেদের নীল রঙা উর্দি, অন্যদিকে বিক্ষোভের অগ্রণী নিহাঙ্গ শিখেদের দল, যাঁরা আদ্যন্ত নীল পোশাকে। তাঁরা এই বিক্ষোভের রক্ষাকর্তা ও দ্বারী। মাঝে ব্যারিকেড রচে ব্যবধান।
এই পরিস্থিতিতে আসুন কথা বলি, ভারতীয় কিছু ফিল্ম নিয়ে, যেসব ফিল্মের মুখ্য বিষয় কৃষি, কৃষক অথবা সে সম্পর্কিত কিছু অধ্যায়।
আমির খান প্রযোজিত ও অভিনীত, আশুতোষ গোয়াড়িকর নির্দেশিত, ২০০১-এ মুক্তি পাওয়া, ‘লগান’ ভারতীয় ছবিতে নানা কারণে মাইলস্টোন হয়ে রয়েছে। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের সঙ্গে ভারতীয়দের লড়াই। মুখ্য উপজীব্য হিসাবে ক্রিকেট। রুখা মরশুম নিয়ে কৃষকদের দুঃখ-বেদনা। সঙ্গে রয়েছে প্রেমের গল্প।
এই সুবাদে একটু পিছিয়ে যাই।
সেরা পাঁচের তালিকা বানাতে বসলে, শুরুতেই আসে, বিমল রায় পরিচালিত ‘দো বিঘা জমিন’-এর কথা। অনেকেরই স্মৃতিপটে উঁকি দেবে রবীন্দ্রনাথের কবিতাটির। মনে আসবে, ‘বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।’
সাল ১৯৫২, বম্বেতে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বিমল রায় দেখেন বিখ্যাত ইতালীয় পরিচালক ভিক্টোরিয়া ডি সিকা’র ‘বাইসাইকেল থিফ’। সিনেমাটি দেখে তিনি অত্যন্ত প্রভাবিত হন। ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময় ভাবেন, তাঁর প্রথম ছবিতে এমনই কিছু করবেন।
সিনেমার মূল গল্প সলিল চৌধুরীর লেখা। গল্প ‘রিকশাওয়ালা’-কে কেন্দ্র করে।
১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া, এই ছবি, স্বাধীনতা পরবর্তী হিন্দি সিনেমায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। ছবিটি বোম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘নব্য-বাস্তববাদী’ বা ‘নিও-রিয়েলিস্টিক’ ছবির ঘরানার প্রথম মাইল ফলক। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন, আরেক স্বনামধন্য বাঙালি পরিচালক হৃষীকেশ মুখার্জি। ছবির গানে সুর দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী। মান্না দে এবং লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া, ‘ধরতি কাহে পুকার কে’ সে সময় দর্শককে একপ্রকার আছন্ন করে রেখেছিল। ছবিটি ‘জাতীয় পুরস্কার’, ‘ফিল্মফেয়ার’ ছাড়াও কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘প্রিক্স ইন্টারন্যাশানাল অ্যাওয়ার্ড’–এ ভূষিত হয়েছিল।
এর পরের আলোচ্য, মেহবুব খান পরিচালিত ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাদার ইন্ডিয়া’। মেহবুবের ১৯৪০-এ নির্মিত ‘অউরত’ সিনেমার একটি পরিমার্জিত সংস্করণ। কারিগরি মুন্সিয়ানার দিক থেকে মাদার ইন্ডিয়া ভারতীয় সিনেমায় মাইলস্টোন। সিনেমার নামটি বাছা হয়েছিল, জাতীয়তার প্রতীক হিসেবে। আমেরিকান লেখিকা ক্যাথেরিন ম্যায়োর লেখা বই ‘মাদার কারেজ’-এর কাউন্টার করার জন্যও। যেখানে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ইচ্ছে করেই যথেষ্ট কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল।
৩৩টি গরুর গাড়ি, শ’দুয়েক চাষি, এবং কয়েকশো একর ধান জমিকে এই ছবির ‘এক্সট্রা’র চরিত্রে ব্যাবহার করা হয়েছিল। অত্যন্ত জটিল, গেভাকালার প্রসেসে ফরিদুন ইরানি এই ছবির চিত্রগ্রহণ করেছিলেন। আগামী পঞ্চাশ বছরে ভারতীয় সিনেমায় নারীর আর্কেটাইপ এবং স্বাদেশিকতার চরিত্র নির্মাণ এবং নির্ণয় করে দিয়েছিল এই ছবি। প্রায় তিন ঘণ্টার সিনেমায় নৌশাদের সুরে ছিল কালজয়ী সব গান। ‘দুনিয়া ম্যায় আয়ে’ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিন মঙ্গেশকর বোন, লতা, আশা এবং মিনা।
এই তালিকায় অন্য ফিল্মগুলি কারা! শুনুন…
লেখা: সুশোভন প্রামাণিক
পাঠ: কোরক সামন্ত
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস