পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট-এর উচ্চতা কত?
ছোটোবেলার ভূগোল বই না খুলেও এখনও অনেকে হয়তো এর উত্তর দিতে পারবেন, ৮৮৪৮ মিটার, ‘আট’-এর অনুপ্রাসের এই ছন্দে সম্প্রতি যোগ হয়েছে আরও একটি ‘আট’, ৮৬ সেন্টিমিটার উচ্চতা বেড়েছে মাউন্ট এভারেস্টের। এমনটাই দাবি করেছে নেপাল এবং চিন। মঙ্গলবার মাউন্ট এভারেস্টের নতুন উচ্চতার কথা যৌথভাবে ঘোষণা করেছে দু’দেশের সরকার। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, মাউন্ট এভারেস্টের নতুন উচ্চতা হল ৮,৮৪৮ মিটার ৮৬ সেন্টিমিটার।
১৮৫২ সালের এক সাধারণ কর্মব্যস্ত দিন। দুপুরবেলা লাঞ্চের পর ‘দ্য গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিক সার্ভে’র বড়সাহেব এন্ড্রু ওয়া দিনের বরাদ্দ বাকী কাজগুলো সেরে ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক তখন হাতে একটি ফাইল নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন এক তরুণ। ফাইল খুলে ম্যাপের একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে আঙুল দেখিয়ে বললেন, এটিই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ। চমকে উঠেছিলেন বড় সাহেব। সেদিনের সেই তরুণটিই রাধানাথ শিকদার।
দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র হওয়ায় কলেজ পাশ করার পরের বছরই তাঁকে চাকরি নিতে হয়। অধ্যাপক টাইটলারের সুপারিশে তিনি যোগ দেন ‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিকাল সার্ভে’তে, পদের নাম ছিল ‘কম্পিউটার’, বেতন মাসে ৩০ টাকা। এই পদে প্রথম কোনও ভারতীয় হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন রাধানাথই। গণিতে তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভা, সেই সঙ্গে পদার্থবিদ্যার জ্ঞান, আর উদ্ভাবনী শক্তির কারণে অতি দ্রুত তিনি ‘সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া’র সুপার মিস্টার জর্জ এভারেস্ট-এর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন।
১৮৪৫ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত হিমালয় পর্বতের প্রায় ৭৯টি শৃঙ্গকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন রাধানাথ। এর মধ্যে ৩১টি শৃঙ্গের স্থানীয় নামকরণও করে ফেলে সার্ভে বিভাগ। বাকিগুলি তখন সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তেমনই একটি শৃঙ্গ ছিল ১৫ নম্বর শৃঙ্গ, ‘পিক নম্বর ফিফটিন’।
এই শৃঙ্গটির উচ্চতা পরিমাপ করতে গিয়ে বিস্মিত রাধানাথ প্রথমে ভেবেছিলেন বুঝি-বা গণনায় ভুল হচ্ছে। কিন্তু পরপর ছয়বার রিডিং নিয়ে শেষপর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছিলেন রাধানাথ, না, গণনার ভুল নয়। পিক নম্বর ফিফটিনের উচ্চতা সত্যিই ২৯,০১৭ ফুট, অর্থাৎ এটিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
রাধানাথের পর কর্ণেল ওয়া নিজে তথ্যটি যাচাই করেন এবং প্রায় চারবছর পর জনসমক্ষে স্বীকৃতি দেন যে, এই ‘পিক ফিফটিন’-ই হল বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কিন্তু এর নাম কী হবে? জর্জ এভারেস্ট যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি স্থানীয় এলাকার মানুষের মৌখিক পরম্পরা অনুযায়ী পর্বতশৃঙ্গের নাম রাখতেন। এভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘা, নন্দাদেবী ইত্যাদি নামগুলি প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু ‘পিক ফিফটিন’ নেপাল আর তিব্বতের মাঝে অবস্থিত, দুই দেশে এর দুরকম স্থানীয় নাম। তাই বিবাদে না গিয়ে কর্ণেল ওয়া দপ্তরের প্রাক্তন বড়বাবু মিস্টার এভারেস্ট-এর নামে এই বিশেষ শৃঙ্গটির নামকরণ করার জন্য প্রস্তাব পাঠালেন।
যে শৃঙ্গ আবিষ্কার বা পরিমাপে এভারেস্টর কোনো ভূমিকাই ছিল না তার নাম হয়ে গেল মাউন্ট এভারেস্ট।
রাধানাথ চলে গেলেন ইতিহাসের উপেক্ষিত ধূসর পাতায়।
লেখা: সানু ঘোষ
পাঠ: সুশোভন প্রামাণিক
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস