দেখতে গেলে, এই উপন্যাস দুজন অসমবয়সি মানুষের প্রেম বা সম্পর্কের গল্প। একজন পুরুষ লেখক, যিনি বয়সে অনেকটাই বড়। তাঁর ছাত্রী বয়সে তাঁর থেকে অনেকটাই ছোট। এই সম্পর্কের ভিতরই দুই প্রজন্মের দূরত্ব তুলে রাখেন লেখক। আর সেই অবকাশেই ঢুকে পড়তে থাকে দেশের রাজনীতি, দৃষ্টিভঙ্গির বদল।
জেনি এরপেনবেক-এর উপন্যাস ‘কাইরোজ’ জিতে নিল এবারের বুকার। জার্মান ভাষায় এই লেখা উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন মাইকেল হফম্যান। বুকারের শর্টলিস্টের তালিকা থেকে যে এই উপন্যাসটিই সেরার খেতাব জিতে নিল, তার অন্যতম কারণ বোধহয়, এ উপন্যাস নিজের শরীরে ধারণ করে বৈপরীত্যের অজস্র চিহ্ন। এ আখ্যান ব্যক্তিগত হয়েও তীব্র রাজনৈতিক। যেমন চমৎকার, তেমনই অস্বস্তিকর। সবথেকে বড় কথা গল্পের বহিরঙ্গে এ উপন্যাস যা বলে, অন্তরঙ্গে বলে চলে অন্য কথা। যে কথা ব্যক্তি ছাড়িয়ে একটা দেশের আত্মার প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে একটি সময়ের গূঢ় অভিসন্ধি কিংবা কান্নাই যেন ফুটে ওঠে এ উপন্যাসে।
আরও শুনুন:
নারীর সম্মান তার যোনিতে রেখেছে কে! পালটা প্রশ্ন তুলেছিলেন কমলা ভাসিন
দেখতে গেলে, এই উপন্যাস দুজন অসমবয়সি মানুষের প্রেম বা সম্পর্কের গল্প। একজন পুরুষ লেখক, যিনি বয়সে অনেকটাই বড়। তাঁর ছাত্রী বয়সে তাঁর থেকে অনেকটাই ছোট। এই সম্পর্কের ভিতরই দুই প্রজন্মের দূরত্ব তুলে রাখেন লেখক। আর সেই অবকাশেই ঢুকে পড়তে থাকে দেশের রাজনীতি, দৃষ্টিভঙ্গির বদল। সম্পর্কে যেমন একটা সুন্দর স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশা থাকে, তেমনই থাকে একটি রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রেও। সময় গড়ায়। সম্পর্ক বদলায়। মতাদর্শের গায়েও জমতে থাকে সময়ের শ্যাওলা। অনেক পরে দেখা যায়, যে সুন্দরের আশা নিয়ে ছুটে যাওয়া শুরু হয়েছিল, আদৌ হয়তো সেখানে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষমতা, এজেন্সি আরও নানা প্রসঙ্গ এসে বদলে দিতে থাকে সম্পর্কের শরীর। এরপেনবেক খুব কৌশলে সেই বদলের ভিতরই গুঁজে দিতে থাকেন পূর্ব জার্মানির ইতিহাস। ইতিহাসকে যে বহুকৌণিক দিক থেকে দেখার প্রয়াস, তা বাস্তব হতে থাকে এই সম্পর্কের লেন্সেই। এই যে যাত্রা, আশা আর আশাভঙ্গের আখ্যান তা তখন আর কেবল দুই ব্যক্তির থাকে না। বরং দুই প্রজন্মের দুই মানুষের সূত্র ধরে পড়ে ফেলা যায় একটি দেশকে। আরও ভালো করে বললে, একটা সময়কে।
আরও শুনুন:
ছোট মুখে বড় কথা! ডা’কুনহার আমূল-বালিকাই বিজ্ঞাপনের ‘টেস্ট অফ ইন্ডিয়া’
কথা হচ্ছে, শুধু ইতিহাস আর সম্পর্কের মেলবন্ধনই কি উপন্যাসটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে! এখানে মনে রাখতে হবে যে, ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্ত করে। আর তাতে প্রশ্নগুলো বদলায় না। ভালোবাসা, স্বাধীনতা, আনুগত্য, ক্ষমতার প্রশ্নগুলো যেন সম্পর্কের জন্য চিরকালীন, তেমনই সময়ের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। ফলত ‘কাইরোজ’ এমন একটা আখ্যান বর্ণনা করছে, যা সমকালীন হয়েও সময় উত্তীর্ণ হওয়ার অভিলাষী। গল্পের জমি থেকে এই যে মহাকালের আকাশে উড়ান দেওয়ার প্রয়াস, তাই-ই নজর কেড়েছে বিচারকদের। বিশ্বের পাঠক এবার তার বিচার করবেন। মিলিয়ে নেবেন তাঁদের নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে। ‘কাইরোজ’ আদৌ কালজয়ী হবে কি-না, সে বিচারের ভার সেই সময়েরই হাতে ন্যস্ত।