চলতি বছরে আন্তর্জাতিক ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য তালিকাভুক্ত হল হিন্দি ভাষায় লেখা উপন্যাস ‘রেত সমাধি’। গীতাঞ্জলি শ্রী-র লেখা এই উপন্যাসটিই বুকার তালিকায় মনোনয়ন পাওয়া প্রথম ভারতীয় ভাষার উপন্যাস। আর সেই কারণেই, ভারতীয় সাহিত্যের দুনিয়ায় এক অভিনব নজির গড়েছে এই মনোনয়নের সংবাদ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিশ্বের দরবারে অনন্য স্বীকৃতি পেল ভারতীয় ভাষায় লেখা সাহিত্য। গত সপ্তাহেই ‘গাঁওবুড়ো’ গল্পের জন্য বিশ্বখ্যাত ছোটগল্পকার ও হেনরি-র নামাঙ্কিত পুরস্কার পেয়েছেন বাঙালি সাহিত্যিক অমর মিত্র। আর কয়েকদিনের ব্যবধানেই ফের আরেকটি নতুন পালক যোগ হল ভারতীয় আঞ্চলিক সাহিত্যের মুকুটে। এ বছরের আন্তর্জাতিক ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেল গীতাঞ্জলি শ্রী-র হিন্দিতে লেখা উপন্যাস ‘রেত সমাধি’-র অনুবাদ ‘Tomb of Sand’।
আরও শুনুন: বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি বাংলা ছোটগল্পের, ও হেনরি পুরস্কার পেলেন সাহিত্যিক অমর মিত্র
হিন্দি ভাষায় লেখা সাহিত্যের দুনিয়াটি কিন্তু নেহাত সংকীর্ণ নয়। মুন্সি প্রেমচন্দ, ফণীশ্বরনাথ রেণু, মহাদেবী বর্মা, সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী, হরিবংশ রাই বচ্চন, অমৃতা প্রীতম, একের পর এক মহৎ সাহিত্যিকের সৃষ্টিতে পুষ্ট হয়েছে তার ভাণ্ডার। গীতাঞ্জলি শ্রী তাঁদেরই সার্থক উত্তরসূরি। তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে সাহিত্য জগতে অবাধ বিচরণ তাঁর। ইতিমধ্যেই মাই, হামারা শহর উস বরস, খালি জগহ এবং তিরোহিত নামে আরও চারটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। রয়েছে চারটি গল্পসংকলনও- প্রতিনিধি কাহানিয়াঁ, অনুগুঁজ, ইহাঁ হাতি রাহতে থে, এবং বৈরাগ্য। লেখার বিষয়, ভাষা এবং শৈলী, সব দিক থেকেই এক স্বতন্ত্র কলমের অধিকারিণী এই লেখিকা। তা হয়তো জনপ্রিয় নয়, কিন্তু কালের বিচারে তা স্থায়ী আসন দখলেরই দাবি জানায়।
৮০ বছরের এক বৃদ্ধার কাহিনি ঘিরে গড়ে উঠেছে ‘রেত সমাধি’ উপন্যাসটি। স্বামীর মৃত্যুর পর পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছেন সেই বৃদ্ধা। নিজের যৌবনের দিনে দেশভাগ দেখেছিলেন তিনি। সেই সময়ের দগদগে ক্ষতগুলিই যেন ফের ছুঁয়েছেনে দেখতে চান বৃদ্ধা। মেয়ের ভূমিকায়, মায়ের ভূমিকায়, এক নারীর ভূমিকায়, কিংবা এক নারীবাদীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সেই সময়ের মূল্যায়ন করতে চাইছেন তিনি। সেই বয়ানকেই অদ্ভুত এক সংকেতজগতে ধরে রেখেছে গীতাঞ্জলি শ্রী-র প্রায় সাতশো পাতার এই উপন্যাস। আর নিপুণ দক্ষতায় হিন্দি ভাষায় লেখা এই উপন্যাসের ভাষান্তর করেছেন অভিজ্ঞ অনুবাদক ডেইসি রকওয়েল।
আরও শুনুন: আঁকায়-রেখায় ফুটে ওঠা বাঙালির মঙ্গলকাব্য, অন্য এক পৃথিবী গড়ে দিয়েছিলেন নারায়ণ দেবনাথ
ঐতিহ্যশালী বুকার পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে আপাতত রয়েছে ছটি উপন্যাস। সারা বিশ্বের সাহিত্য থেকে নির্বাচিত এই ছটি উপন্যাসের মধ্যেই স্থান করে নিয়েছে গীতাঞ্জলি শ্রী-র এই হিন্দি উপন্যাসটি। এই স্বীকৃতি পেয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? ৬৪ বছর বয়সি লেখিকার কথায়, এই পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা কিংবা প্রত্যাশা কিছুই ছিল না তাঁর। আর সেইজন্যই, এই স্বীকৃতি তাঁর কাছে এক দুর্দান্ত চমকের মতো। বুকার পুরস্কারের পঞ্চাশ বছর পেরোনো ইতিহাসে এতদিন এই স্বীকৃতি পায়নি কোনও ভারতীয় ভাষার উপন্যাসই। হয়তো আঞ্চলিকতার বেড়ার কারণে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছিল ভারতীয় সাহিত্যের এক বিপুল সম্ভার। সেই গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের দুনিয়ায় এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যের কাছেই এক বিশেষ মুহূর্ত।