বাংলা থিয়েটারকে ভিন্ন এবং অভিনব এক বাঁকবদলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন বাদল সরকার। ‘থার্ড থিয়েটার’-এর জনক এবার পা রাখলেন শতবর্ষে। সেই দিনে নাটকের সূত্রেই পাওয়া তাঁর আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতাকে ফিরে দেখা। শুনে নেওয়া যাক বাদল সরকারের পাকিস্তান সফরের গল্প।
রাজনীতিতে তো বটেই, সিনেদুনিয়া বা ক্রিকেট ম্যাচও আমাদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়ে যায়, পাকিস্তানের পরিচয় একটাই। সে আমাদের শত্রুদেশ। কিন্তু শিল্পের কাছে তো কাঁটাতারের দাম থাকে না। মানুষে মানুষে ভেদ রাখা নয়, বোধের জগতে তাদের জুড়ে দেওয়াই শিল্পের কাজ। নিজের শিল্পযাপনে নিজস্ব পদ্ধতিতে সে কাজ করতে চেয়েছিলেন বাদল সরকার। নাটককে সর্বতোভাবেই মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেই সূত্রেই পাকিস্তানে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর কাছে। এবারই, ১০০ বছরে পা রাখলেন বাংলা থিয়েটারের অন্য ধারার এই নাট্যকার। সেই উপলক্ষেই শুনে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের সে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা।
সেটা ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। এক আলোচনাসভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বাদল সরকার। শুধু কলকাতাই নয়, সেখানে ভারতের একটা বড় অংশের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। আর তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন দিল্লির সফদর হাশমি সহ আরও কয়েকজন নাট্যব্যক্তিত্ব। আবার সেই সেমিনারেই অংশ নিয়েছিল পাক নাট্যসংস্থা ‘অজোকা’। সেই সংস্থার মদীহা গওহর-ই, বাদল সরকারের ‘মিছিল’ নাটকের অনুবাদ ‘জুলুস’ অভিনয় করিয়ে পাকিস্তানে আধুনিক থিয়েটারের সূত্রপাত ঘটান। যদিও পাকিস্তানের তৎকালীন মিলিটারি সরকার সে নাটকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। প্রথমবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে বাদল সরকারের মদীহার সঙ্গে তো দেখা হয়ই, একইসঙ্গে আলাপ হয় ‘পাঞ্জাব লোক রহস্’-এর ওয়াসিমের সঙ্গে। আর এই আলাপের সূত্রেই জুলাই মাসে ফের পাকিস্তানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পান তিনি।
পাকিস্তানকে কেমন দেখেছিলেন তিনি? পুরনো স্মৃতিতে ডুব দিয়ে সে কথা জানিয়েছিলেন বাদল সরকার।
যে দেশকে আমরা শত্রু বলেই জানি, সেখানকার বন্ধুরা কিন্তু দুহাত বাড়িয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন ভারতের এই মানুষটিকে। কেবল বন্ধুরা নন, বহু অচেনা মানুষের থেকেও মিলেছিল উষ্ণ সমাদর। সে নিতান্ত পথে দেখা হওয়া কোনও মানুষ হোন, কি কোনও অচেনা দোকানদার। সে গল্পও জানিয়েছিলেন বাদল সরকার। সে গল্প কোনও দেশের মানুষকে রাজনীতি বাদ দিয়েই দেখতে শেখায় আমাদের।
[ঋণ: পুরনো কাসুন্দি, বাদল সরকার। প্রকাশক: অনুষ্টুপ।]