ধর্মপরিচয়ে ব্রাহ্ম হলেও, ভাইফোঁটা নিতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জীবনের শেষ দুবছরেও তাঁকে ফোঁটা দিয়েছিলেন তাঁর ছোট দিদি, বর্ণকুমারী দেবী।
পৌত্তলিকতা ত্যাগ করে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সূত্রেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ব্রাহ্ম ধর্মের প্রবেশ ঘটে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর দিদিদের মধ্যে ভাইফোঁটা দেওয়ার প্রচলন ছিল বরাবরই। মহর্ষির মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন বর্ণকুমারী, আর রবীন্দ্রনাথ সকলের চেয়েই বয়সে ছোট। বর্ণকুমারী দেবীর কবিকে ফোঁটা দেওয়ার দুটি দৃশ্য ধরা আছে বিভিন্ন জনের স্মৃতিচারণায়। দুটি ঘটনাই কবির জীবনের অন্তিম পর্বের।
আরও শুনুন: রবি ঠাকুরের গানে উঠে এল দেবী লক্ষ্মীর কথা, জানেন কী সেই গান?
মহর্ষির পনেরোজন সন্তানের মধ্যে তখন অবশিষ্ট কেবল এই দুই ভাই বোন। বয়স ছাপ ফেলেছে তাঁদের শরীরেও। তার উপরে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় থাকেন না অধিকাংশ সময়েই। ফলে দুজনের দেখাসাক্ষাতের অবকাশও কমে গিয়েছে। ১৯৩৯ সালে ভাইকে চিঠি লিখলেন বর্ণকুমারী দেবী। চিঠিতে ঝরে পড়ল ভাইকে ফোঁটা দিতে না পারার আক্ষেপ।
লিখলেন, “ভাইটি আমার, শুনলুম তুমি জোড়াসাঁকোয় এসেছ। সেইখানে গিয়ে ভাইফোঁটা দেব ভেবেছিলুম, কিন্তু হল না। বিকেলে লোক পাঠালুম জানতে। সে এসে বল্লে, তিনি সকালে চলে যাবেন।”
আরও শুনুন: মামলায় অভিযুক্ত খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষমেশ কী হল পরিণাম?
ভাইফোঁটার আগেই জোড়াসাঁকো ছেড়ে শান্তিনিকেতনে ফিরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দিদির তরফ থেকে চিঠির সঙ্গে এল ভাইয়ের জন্য উপহার। সঙ্গে আদরমাখা হুকুম, “আমি বড়, তোমায় কিছু পাঠাতে হবে না।” দিদির চিঠি পেয়ে কী উত্তর দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ? আন্তরিক খুশি হয়ে জবাবি চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনিও। লিখেছিলেন, “ভাই ছোড়দি, তোমার ভাইফোঁটা পেয়ে খুশি হয়েছি। আমাদের ঘরে ফোঁটা নেবার জন্যে ভাই কেবল একটিমাত্র বাকি আর দেবার জন্য আছেন এক দিদি। নন্দিনী তোমার প্রতিনিধিত্ব করেছে। আমার প্রণাম গ্রহণ করো।” নন্দিনী হলেন রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমা দেবীর পালিতা কন্যা, কবির আদরের নাতনি ‘পুপে’।
সেবার উপহার আর আশীর্বাদ পাঠিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ওতে কি দিদির মন ভরে? পরের বছর তাই সশরীরে জোড়াসাঁকোয় উপস্থিত হয়ে ভাইকে ফোঁটা দেন বর্ণকুমারী দেবী।
শুনে নিন বাকি অংশ।